Pages

Thursday, July 20, 2017

ফ্যান ও এসি ছাড়া বসবাস

ফ্যান ও এসি ছাড়া বিত্তশালী ও শহরের মানুষ বাস করতে পারে শুনলেই অবিশ্বাস্য লাগে। অথচ ফ্যান ও এসি ছাড়া গেস্ট রুম বা অতিথিশালাও আছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে এরূপ একটি স্থান দেখার আমার সৌভাগ্য হয়। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং। যেখানে ফ্যান বা এসির প্রয়োজন নেই। তাই রুমে কোন ফ্যান বা এসি লাগানো নাই। একটি শহরে ফ্যান বা এসি নাই কি পরিমাণ এনার্জি সেভিং কল্পনা করা যায়। ঘরের ভিতরে ও বাহিরে আপনি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পাচ্ছেন। কত বড় শান্তি। আমরা যারা এসিতে বসবাস করি তারা বাসায় এসি, গাড়ীতে এসি, কাজের স্থানে ও মার্কেটে এসি না হলে ভয়ানক কষ্টকর অবস্থা। এসি/ফ্যান অভ্যাস হয়ে গেলে এটি ছাড়া টেকা দায়। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং এর অভিঞ্জতা হবে অনন্য। সেখানে যতটুকু জানা যায় গরম কালে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা  হয়। রাতে হালকা শীত ও দিনে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। তাপমাত্রা পরম স্বস্থিদায়ক। শীতকালে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে বরফ পরে না। শীতকালে তাপটা কিছুটা কম। তবে চরম নয়। রুম হিটিং প্রয়োজন পরবে। শীতের সময়টা আবার বেশী দীর্ঘ নয়। তাপের এই যে সহনীয় তারতম্যে প্রতীয়মান হয় আবহাওয়াটা অনেক বেশী আরামদায়ক এবং অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। আমি যদি আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে তুলনা করি তবে দেখা যায় অনেক বেশী আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য আমাদের আবহাওয়ায় অল্প শারীরিক পরিশ্রমে শরীর অত্যধিক ঘর্মাক্ত হয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা ফ্যান ও এসির উপর নির্ভরশীল হয়।
শিলঙের ঘর ও দালানে ফ্যান ব্যবহার না করার কারণে দালানের উচ্চতা কম মনে হল। পাহাড়ের কুল ঘেঁষে কম উঁচু চার/পাঁচ তলা দালান। ইলেকট্রিক সিলিং ফ্যান না লাগানোর কারণে দালানের প্রতিটি তালার উচ্চতা  কম। তাতে দালানের নির্মাণ খরচ কম লাগছে ও দালানের পাহাড়ের উপর দৃঢ়তা বাড়ছে। তবে শিলং এলাকাটি জাপানের মত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হওয়ায় এখানে টিন শেড একতলা বাড়িঘরের আধিক্য অনেক। মেঘালয়ের মানুষগুলো মঙ্গোলীয় জাতীয় চাইনিজ ও জাপানীদের মত। এদের মধ্যে খাসিয়া ও গারোদের আধিক্য রয়েছে। ভারতীয়দের যেরূপ আমরা সাধারণত দেখে থাকি বা কল্পনা করে থাকি সেই হিসাবে এখানকার মানুষগুলো ছোটখাটো ও সাদা চামড়ার ভারতীয় মুল অংশ হতে ভিন্ন।
যে কোন উঁচু স্থানের ও পাহাড়ের তাপমাত্রা সাধারণত কম হয়। তবে তাপমাত্রা কম ও আর্দ্রতা কম থাকলে সেই আবহাওয়া আরাম দায়ক। উচ্চতা অধিক হওয়ার ও ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ার আর্দ্রতা তেমন বেশী মনে হয়নি। ঘাম তেমন বেশী হয়নি। গরমের সময়ও সকালে ও রাতে হালকা গরমের কাপড় পড়তে হয়।
আবহাওয়ার এই চমৎকারিত্বের কারণে এখানে যেহেতু ব্যাপক এসি বা ফ্যান চলে না তাই তেমন লোড শেডিং চোখে পড়েনি। এটা এখানকার বিশাল একটা আশীর্বাদ বিদ্যুৎ খরচ কম ও লোডশেডিং মুক্ত। এখানে ছোট বড় অনেক জলপ্রপাত আছে যা কিনা বিদ্যু উৎপাদনে ব্যাপক ব্যবহার হতে পারে। তবে সেইরূপ কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। মনে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন অপেক্ষা পর্যটন শিল্পের অগ্রগণ্যটা বেশী। তবে সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য পরিবেশের মৌলিক কাঠামো হয়ত পরিবর্তন না করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা করা যেতে পারে। জল বিদ্যুৎ প্রকল্প সব দেশেই অনেক বেশী সাশ্রয়ী। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশ বান্ধব। পাহাড়ি অঞ্চলের এই সম্পদকে সহজেই ব্যবহার করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ায় পর্যটন শিল্পের অবাধ সম্ভাবনার পাশাপাশি কুটির শিল্প, সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ ঘটানো যাবে। অনেক অনেক মানুষকে কাজে লাগানোর জন্য স্বাস্থ্যকর এই আবহাওয়াকে কাজে লাগানো যাবে। এই ধরনের আবহাওয়ায় ভারী শিল্প হতে কুটির শিল্প ও ডাটা এন্ট্রি টাই মেধা ভিত্তিক ও অনেক সময় নিয়ে করা কাজ গুলো ভাল হবে। আবহাওয়ার এরূপ চমৎকার স্থানগুলো হতে পারে স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপযুক্ত। এখানে প্রচুর হাসপাতাল ও আবাসিক স্কুল কলেজ স্থাপন করা যেতে পারে। বৈশ্বয়িক উষ্ণতা প্রতিহত করতে অনুকূল আবহাওয়ার স্বাস্থ্যকর স্থানগুলো ব্যবহার বাড়াতে হলে তা হবে ভাল উদ্যোগ।

No comments:

Post a Comment