Pages

Thursday, September 7, 2017

ফেইসবুক চালানো ও এমবি কেনা

আমরা যারা শহর উপার্জন করি তাদের উপর গ্রামের কিছু সংখ্যক আত্মীয় মুখাপেক্ষী থাকে। কিছুদিন আগেও ঘরবাড়ী মেরামত ও কাপড়চোপড়ের ডিমান্ড ছিল। এখন চাহিদাটা হল পড়াশোনায় সহায়তা। আমার এরূপ আত্মীয় তার সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্য চাইল। তাদের প্রায়শই আমি সাহায্য দেই। আমি এই ধরনের সাহায্য গ্রামের অন্য আত্মীয় দ্বারা ভেরীফাই করি। এইরূপ ভেরীফাই করতে গিয়ে আমার অন্য আত্মীয়কে জিঞ্জাসা করলাম। কিছুদিন আগে অমুকের ছেলে মেয়ের কলেজে ভর্তির বাবদ টাকা দিলাম। এখন আবার বই কেনার টাকা চাইছে। এরা কি টিউশনি করতে পারে না? গ্রামে কি টিউশনি নাই? আমার আত্মীয় জানাল গ্রামে একটা দুইটা টিউশনি এরা করে টাকা কম। আর একটা সমস্যা হল এরা একাধিক আইডি ব্যবহার করে ফেইসবুক চালায়। একাধিক আইডিটা কি। ফেক আইডি আর কি। অর্থাৎ কাল্পনিক তথ্য দিয়ে আইডি তৈরি করা। এরা এমবি কেনার পিছনে টাকা পয়সা খরচ করে। এদের সহযোগিতা করার প্রয়োজন নেই।
ফেইক আইডি দিয়ে ফেইসবুক চালায় আর এমবি কিনে। শব্দগুলি আমাদের অনেকের জন্য নতুন ও মজাদার।
বেশ কয়েক বছর আগে পত্রিকায় পড়ে ছিলাম উন্নত দেশগুলোতে চাকুরীজীবী কর্মীরা এত বেশী ফেইসবুকে সময় অতিবাহিত করে যে তাদের কর্পোরেট বসরা অফিসিয়াল কানেকশনে ফেইসবুক বন্ধ করা বা অফিস টাইমে ফেইবুক বন্ধ করার মত উদ্যোগ গ্রহণ করে। এখন আমাদের বাংলাদেশে স্মার্ট ফোনের বদৌলতে গ্রামের ছেলে মেয়ের হাতে হাতে ফেইসবুক চর্চা হচ্ছে। না হয়ে উপায় নেই। স্কুল কলেজের টিচাররা ফেইসবুকে পরীক্ষার রুটিন দিচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয়ে মতামত নিচ্ছেন। সামাজিক ভাবে ফেইসবুক অনেক বেশী গ্রহণীয় মাধ্যম। সরকারী কর্মকর্তারা ফেইসবুকে মাধ্যমে গ্রাহক সেবা দিচ্ছেন। আমার মনে আছে আশির দশকে চিঠি লেখালেখি মজাদার একটি কাজ ছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর চিঠি আমরা লিখতাম। পেন ফ্রেন্ড করার জন্য চিঠি লিখতাম। যাকে বলা হল পত্র মিতালী। তখনও চিঠির ঠিকানাকে অন্যের বা পরিচিত দোকানের ব্যবহার করত অনেকটা ফেক আইডির মত। এমনকি ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বিদেশে বিভিন্ন পেন ফ্রেন্ড পত্রিকা থেকে ঠিকানা নিয়ে চিঠি লেখা হত। এসব চিঠি লিখতেও রাত জাগতে হত। আমাকে আজ যে ফেইসবুক নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছে তাকেও ছোটবেলায় দেখেছি পত্র মিতালীর পত্র নিয়ে রাত জাগতে। আজকাল যেমন পত্রিকায় দেখা যায় ফেইসবুক ফ্রেন্ড মেয়ে বা ছেলে বাংলাদেশে চলে এসেছে। তখনও পত্র মিতালী বন্ধু অনেক সময় চলে আসত। আবার প্লেনের টিকিট পাঠানোর কাহিনীও আছে। আমি বিদেশে পেন ফ্রেন্ড পত্রিকা থেকে ঠিকানা নিয়ে হয়ত দশটি চিঠি লিখলাম। একটি বা দুইটি যোগাযোগ হল। তখন মনে আছে, পিয়ন চাচা বলত, এইভাবে অনাত্মীয়দের কাছে চিঠি দিয়ে কেন টাকা নষ্ট করছি। বয়সের ধর্ম। উত্তর নাই।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি যখন কম্পিউটার চালু হল যা এখনকার তুলনায় অতীব ধীর গতির কম্পিউটার। তার পর ধীরে ধীরে ইন্টারনেট আসল। সেসময় চালু হল ইয়াহু চ্যাট এবং আরও অনেক চ্যাট চ্যানেল। তখন ছেলে বুড়ো রাতের পর রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ও চ্যাটিং করে। মিনিট প্রতি ইন্টারনেট খরচ ১/২ টাকা। কোন ডাটা প্যাকেজ সিস্টেম নাই। আনলিমিটেড ইন্টারনেট ছিল। তাও মাসে ৫০০০/৬০০০ টাকা। যা এখনকার মূল্য মানে বিশ/পঁচিশ হাজার টাকার নীচে নয়। পেন ফ্রেন্ড ও চ্যাটের যুগের পর আমরা এখন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারএ্যাকিটভ ফেইসবুকের যুগে এসেছি।                   
যুগ যুগ ধরে অনেক কাজ বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন কালের জ্যৈষ্ঠরা ভাল চোখে দেখত না:       
১। কম বয়সে চা খাওয়া ও সিগারেট খাওয়া।
২। আড্ডা মারা ও কার্ড খেলা।
৩। সিনেমা দেখা ও অধিক সময় টিভি দেখা।
৪। বিপরীত লিঙ্গের সাথে পেন ফ্রেন্ড করা।
৫। বিপরীত লিঙ্গের সাথে ফোনালাপ।
৬। বিপরীত লিঙ্গের সাথে চেটিং করা।
৭। ফেইক আইডি খুলে বিপরীত লিঙ্গের সাথে প্রেম প্রেম খেলা।
উপরের সবগুলো ঘটনাই কিন্তু যুবা বয়সের মজাদার কাজ। এগুলো প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে দ্বন্ধ। অথচ কাজগুলি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় স্রেফ বিনোদন হিসাবে নিলে খারাপ বলা যাবে না। বেশী মাত্রায় আসক্ত হলে সময় নষ্ট ও অর্থ নষ্টের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত বা নেশাগ্রস্ত হয়ে কাজগুলি করলে তা পড়াশোনার ক্ষতির কারণ বইকি।
আমরা যারা শহরে থাকি অধিকাংশই ক্যাবল লাইনের আনলিমিটেড ইন্টারনেট রাউটার দিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও কম্পিউটারে ব্যবহার করি। ইন্টারনেট না থাকলে পাঁচ বছরের শিশুরাও অধৈর্য্য হয়ে যায়। ইচ্ছামাফিক রাইম বা কার্টুন দেখতে পারছে না। এখন সবাই টিভি থেকেও সরে যাচ্ছে। মোবাইলে নজর বেশী। মোবাইলে সব হচ্ছে যেমন: ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউব ও টিভি। আবার মোবাইল যে কোন স্থানে প্রাইভেসী মেইনটেইন করে ব্যবহার করা যায়।

আজকের যুগে মাদকের ব্যাপক আগ্রাসন থেকে ফেইসবুক রক্ষাকবচ বৈকি। ফেইসবুক পড়াশোনার কিছুটা ক্ষতি করলেও মাদকের আসক্তি আরও বেশী ক্ষতি করে। তাই আমি ২০১৭ সালে পয়তাল্লিশোর্ধ্ব বয়সে ফেইসবুক ব্যবহারকে অপরাধ হিসাবে দেখি না। মাদকের আগ্রাসন রোধে মানুষে মানুষে প্রেম ভালবাসা বাড়াতে ফেইসবুক অপূর্ব মাধ্যম।মানুষের মধ্যে ভালবাসা বাড়লে মানুষ বেচে থাকার আনন্দ খুজে পাবে। আত্মহত্যার প্রবনতা কমবে। অপকারী চিন্তা কমবে। মাদকমুক্ত হবে সমাজ। আর অনেক টাকা খরচ করে মেগাবাইট ইন্টারনেট না কিনে স্কুলের ও কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা যেন সস্তায় বা বিনামূল্যে গিগাবাইট পেতে পারে সকলের সেই চেষ্টাই করা উচিত। এতে ফেইসবুকের পাশাপাশি একসময় দক্ষ আইটি জনশক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

No comments:

Post a Comment