Pages

Thursday, September 21, 2017

এখনই সময় মায়ানমারের রোহিংগাদের নির্যাতনের ইতিহাস লেখা

আন্তর্জাতিক ওয়্যার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ওয়্যার ক্রাইম যারা করেছে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের যুদ্ধ অপরাধীদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। মায়ানমারের জান্তাদের জন্য কোন না কোন সময় আসবে যখন তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। এটা এই যুগে খুবই সহজ। কারন তথ্য প্রযুক্তি মানুষকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। তথ্য প্রমানদি আজ সংরক্ষন ও বিতরন সহজ। আন্তর্জাতিক মানব অধিকার সংস্থাগুলো রোহিংগাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গনহত্যার শিকার কারা কারা হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করতে পরে। কোন পরিবার কাকে কাকে হারিয়েছে তার তথ্য ও তালিকা লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে রোহিংগাদের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ছবি পেলে তা দিয়ে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা অতীব জরুরী। রোহিংগাদের যাদের মোবাইলে বা অন্য কোন আলামত ও প্রমাণাদি আছে তা এখনই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ২০১৭ সালে বিঞ্জানের উন্নতির এই যুগে সব অত্যাচার ও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সংরক্ষণের সুযোগ থাকতে তা অবশ্যই কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে রোহিংগা জেনোসাইটের ওয়েব সাইট তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে নিহত,আহত ও মানবতা বিরোধী ঘটনা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হবে। এভাবে কুখ্যাত ও ধিক্কৃত জান্তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে দাড় করানো সহজ হবে।
আমার এই আইডিয়া বাস্তবায়নের কিছু চিন্তা আমি করেছি তা নীচে দিলাম:
১। একটি শক্তিশালী ওয়েবসাইট তৈরি করা। এটি মায়ানমার রাষ্ট্রীয়ভাবে হ্যাকিং করার চেষ্টা চালাবে বলে ধারনা করা যায়। এটির হোস্টিং বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে রাখতে হবে।
২। বিভিন্ন মানব অধিকার সংস্থা দ্বারা ফান্ড রেইজ করতে হবে।
৩। বিভিন্ন মানব অধিকার সংস্থার সমন্বয়ে রোহিংগা নির্যাতনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য স্থায়ী কমিটি মানব অধিকার সংস্থা সমূহ হতে করা যেতে পারে। এর মধ্যে শিক্ষিত ও আইটি জানা রোহিংগা  সদস্যের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের মাসহারা প্রদান করা যেতে পারে। নিরাপত্তার জন্য তাদের অন্য দেশে রাখতে হবে ও প্রয়োজনে তাদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। তারা মায়ানমারের গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেটে পরিণত হবে। আবার রোহিংগা সদস্য না রাখলে ইতিহাস লেখা বা তথ্য ভাণ্ডার তৈরি অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে।
৪। বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অবস্থানরত সকল রোহিংগা শরণার্থীদের ইন্টার্ভিউ নিতে হবে ও তাদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করতে হবে। তাদের তথ্যাদি রেকর্ড করে তা থেকে নিহত,আহত ও তাদের উপর অত্যাচারের বিবরণের ডাটা বেজ বানাতে হবে।
৫। রোহিংগাদের বাড়িঘর পুড়ানো, ব্যবহার্য সামগ্রী পুড়ানো, লুট করে নেয়া ও হারানো জমির পরিমাণ সবই তাদের ইন্টার্ভিউ করে রেকর্ড করতে হবে। তা থেকে পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে মায়ানমার সরকারকে রোহিংগাদের ক্ষতিপূরন আদায়ে আন্তর্জাতিক মহল পরবর্তীতে চাপ সৃস্টি করতে পারবে।
৬। যে সব নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের বিবরণ লিপিবন্ধ করতে হবে। গোপনীয়তার সাথে রাখতে হবে। তাদের কাছ থেকে ধর্ষণের স্থান, সময়, ধর্ষকের বর্ণনা, ধর্ষকের পোশাক, নাম ও যে পোষাকে ধর্ষিত ছিল তার ডিএনএ তথ্য সংগ্রহের জন্য দিতে হবে। যারা তথ্য দিতে অনিচ্ছুক তাদেরকে নারী মোটিভেটর দিয়ে তথ্য নিতে হবে। মেডিক্যাল রিপোর্ট সংযুক্ত করতে হবে।
৭। যেসব নারী সন্তানসম্ভবা এবং যারা ধর্ষণের কারণে গর্ভবতী হয়েছে তাদের সন্তানদের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে।এতে আন্তর্জাতিক আদালতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ করা সহজ হবে।
পৃথিবীর কোন ধর্ম মানুষের প্রতি সহিংসতা মেনে নেয়নি। বিশ্ব মানবতা কখনো তা সাপোর্ট করে না। আজ থেকে শত বছর পড়ে হলেও মায়ানমারের এই মানবতার ধ্বংসলীলার বিচার হতেই হবে। কোন সুস্থ মানুষ মায়ানমারের এই অবিচার মেনে নিতে পারে না। মায়ানমারের সামরিক জান্তারা গলা ফাটাচ্ছে রোহিংগাদের মিলিশিয়া গ্রুপ একাজ করেছে। অপর পক্ষে মায়ানমারের সরকার রোহিংগা মিলিশিয়া অর্থাৎ আরাকান রোহিংগা স্যালভেজ আর্মি (আরসা) কি করেছে তাও তাদের লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। আরসা নিরপরাধ মানুষের উপর জুলুম করলে তার রেকর্ডও রাখতে হবে। তাদেরও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিচার করতে হবে। তবে মায়ানমার সরকার আরসা সদস্যদের নিয়ে বিচারের প্রহসন করে গণহারে মৃত্যুদণ্ড দেয়াটাও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।

মানুষকে অবস্থানগত কারণে কোন দেশের নাগরিক বলা যেতে পারে। তবে মানবিকতার প্রশ্নে মানুষ হউক গ্লোবাল সিটিজেন। আর কোন মানবিক বিপর্যয় নয়। তার জন্য প্রয়োজন সোচ্চার হওয়া। রোহিংগার নির্যাতনের ইতিহাস লেখার মধ্য দিয়েই তা সম্ভব ও শুরুটা এখান থেকেই করা যায়।

No comments:

Post a Comment