Pages

Thursday, November 9, 2017

হাতের লেখার বদলে কম্পিউটারে টাইপ হতে পারে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ধাপ

সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ ঞ্জানী আছেন যারা মানুষের পড়াশোনার উন্নয়নে দিন রাত গবেষণা করে যাচ্ছেন। সেই সকল গবেষকদের জন্য আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসল যা আমি তাদের জন্য উপস্থাপনা করছি। আমি অনেক পরিবারের ছোট বাচ্চাদের জানি তারা একদম ছোট বয়স থেকে গেইম খেলতে  জানে। গেইমের অনেক কমান্ড তাদের বুঝতে ও চালাতে জানে। স্টার্ট বা এক্সিট দেখতে দেখতে তার মাথার মধ্যে তা গেঁথে গেছে। সে স্টার্ট লেখার ধরনটা একটা ছবি হিসাবে সে মনে রেখেছে। আমার মেয়ে ৪ বছর বয়সে ক্যানসেল পড়া বা বানান করার আগেই জানত কম্পিউটারে ক্যানসেলের কাজ কি ও তার ব্যবহার।  ছোট বেলায় শিশুরা ছবি দেখে সব কিছু বুঝতে চেষ্টা করে। যে কোন লেখা তাদের কাছে ছবি। বাচ্চারা সেই ছবিগুলো তাদের  কাজের সাথে মিলিয়ে নেয়। শিশুরা পড়া থেকে লিখতে বেশী সময় নেয়। অথচ শিশুদের পড়া শেখানোটা অনেক বেশী জরুরী। তাই আমার মনে হল এমন কি কিছু করা যায় শিশুরা  ছবি আঁকবে। অক্ষর চিনবে। পড়তে শিখবে। আর লেখার বদলে প্রথমেই শুরু করবে টাইপ। কলমশব্দটা পড়বে ও কলমহাতে না লিখে সে টাইপ করবে। ক-ল-ম। তিনটি কী টাইপ করেই সে কলম লিখতে পারবে। টাইপ করেই তার লেখা শেষ হয়ে যাব। এক সময় মেয়েদের হাতের লেখা শেখানোর গুরুত্ব দেয়া হত। কারণ স্বামীকে চিঠি লিখতে হত। এখন মেয়েদের স্বামীকে চিঠি লিখতে হয় না। স্বামীকে ফোনে কল দিতে হবে তাই স্ত্রীকে ফোন চালানো জানতে হবে। চিঠি না লিখে ম্যাসেজ লিখতে হবে। তাই মোবাইলে টাইপ করা জানতে হবে। দলিল লেখকরা আজ আর হাতে লেখে না। টাইপ করে দলিল বানায়। হাতে লেখা আবেদন দিলে এখন অনেকে বলে কম্পিউটারে টাইপ করে আনেন। সিভিটা কম্পিউটারে টাইপ করাতে হয়। আসলে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ছাড়া হাতে লেখার কাজ অনেক কমে গেছে। আমি চাকুরীতে সাইন ও এসিআর লেখা ছাড়া হাতে লেখার কাজ তেমন একটা দেখি না। আজকাল এসিআরও অনেকে টাইপ করিয়ে নেন।প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ও চাকুরী জীবনে টাইপিংটা অতি জরুরী। আমার ধারনা খুব কম লেখক আছেন যারা কম্পিউটারে টাইপ না করে হাতে লিখেন। আমি লেখালেখি শুরুর প্রথম থেকেই কম্পিউটারে লেখালেখি করে যাচ্ছি। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষে পড়ুয়া ছেলের কম্পিউটারে টাইপ করা স্পীড দেখে আমি জানতে চাইলাম তোমার টাইপিং স্পীড কত। ছেলে হাসতে হাসতে বলল ৯৩ শব্দ প্রতি মিনিটে। আমি অবাক হলাম। সাধারণ ভাবে অফিসিয়ালি আমরা প্রতি মিনিটে ইংরেজিতে ৪০/৪৫ শব্দ স্যান্ডার্ড ধরি। আমি অনেকক্ষণ চিন্তা করে বের করলাম এই স্পীডের কারণ হল গেইম খেলা। অনলাইন গেইমিংএ অনেক কমান্ড দ্রুত টাইপ করে দিতে হয়। প্রোগ্রামার ও কোডিং যারা করে তারাও একই গতিতে টাইপ করে। আমার এই ছেলে কম্পিউটারে বসেছিল আড়াই বছর বয়সে।
এটা একটা উদাহরণ দিলাম। হাতে লেখার পিছনে সময় নষ্ট না করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ৮ বছরের আগে কোন হাতের লেখা নয়। চার বছর বয়স থেকে বাচ্চারা ট্যাব নাড়বে। কম্পিউটারে টাইপ করবে। ছবি আঁকবে। পড়তে শিখবে। ছবি আঁকতে আঁকতে এক সময় হাতের লেখাও শিখে ফেলবে। ১‌ম থেকে ৩র্থ শ্রেণী পর্যন্ত তারা কোন হাতের লেখা সংক্রান্ত পরীক্ষা দিবে না। তাদের পরীক্ষা হবে টাইপ করে। ছবি আঁকবে ও পড়া শিখবে। ৪র্থ শ্রেণী থেকেই তারা কম্পিউটারে সার্চ করে তথ্য বের করার অনুশীলন করবে। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী হতে তাদের হাতের লেখার অনুশীলন শুরু হবে। ১ম শ্রেণী থেকেই সংখ্যা চিনাতে হবে। আর অংক করাতে হবে কম্পিউটারে বা ক্যালকুলেটরে। ১ থেকে ১০ এর নামতা মুখস্থ না করে ক্যালকুলেটরে বের করবে। মুখস্থ না করে কম্পিউটারে নামতার টেবিল বানাবে। অংক ক্যালকুলেটরে শুরু করবে। ৫ম শ্রেণীর পর দৈনন্দিন হিসাবের জন্য অল্প কিছু অংক ম্যানুয়ালি অনুশীলন করবে। আমরা এখন জটিল গুন ভাগ ম্যানুয়ালি করিয়ে মাথা নষ্ট করে পরে উপরের ক্লাসে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দেই। একই ভাবে জটিল হাতের লেখার অনুশীলন করে অতঃপর কম্পিউটারে টাইপিং করতে বলি। আমি সারা জীবন এক হাতে এক আঙ্গুলে দেখে দেখে টাইপ করে গেলাম। গতি মন্দ নয়। অনেকের চেয়েই অনেক বেশী টাইপ করছি। অন্তত নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমার সহকারী থেকে বেশীই আমি টাইপ করি কারণ মাসে অন্তত চারটি আর্টিক্যাল লিখে ফেলি।

অশিক্ষিত বয়স্ক মানুষরা লেখাপড়া শিখতে লজ্জা পায়। তদের ট্যাব বা কম্পিউটারে  পড়া ও টাইপ শেখানোটা অনেক বেশী সহজ হবে। পরিশেষে আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার কার্যক্রমকে ডিজিটাল করাটা অনেক বেশী জরুরী মনে হয়।

No comments:

Post a Comment