মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই
সাধারণত পৈত্রিক সূত্রে বাড়ী থাকে। তাদের বাড়ী উন্নত করার শখ থাকে। কিন্তু তারা যে
বিষয়টি নিয়ে বেশী ক্রেজী থাকে তা হল গাড়ী কেনা। যে কোন মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী
কর্মকর্তা তার একটি গাড়ীর স্বপ্ন থাকে। সবাই মনে প্রাইভেট কার তাকে মধ্যবিত্ত স্ট্যাটাস
হতে ধনী স্ট্যাটাসে আনবে। কিন্তু উপার্জনে ও সম্পদে ধনী না হয়ে প্রাইভেট কার কিনে ধনী হওয়ার ভাব আনলেই ধনী হওয়া যায় না। এটা
করাও উচিত নয়। এই ধরনের কাজ যে কাউকে শীঘ্রই আর্থিক অনটনে ফেলে দিবে। প্রাইভেট কার কেনার স্বপ্নটা আরও তীব্র হয় যখন পৈত্রিক পরিবারে
গাড়ী না থাকলে। ব্যাংকে একটা টার্ম চালু আছে “কার লোণ”। ব্যবসা ছাড়া লোণ মানুষকে দরিদ্র করে। লোণ পরিশোধের
যথেষ্ট সামর্থ্য না থাকলে লোণ নেয়া অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি বিষয়। লোণ মানুষকে ধীরে
ধীরে দরিদ্র করে ফেলে। অনেকে নতুন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী পেয়েছে। ভাল বেতন
পাচ্ছে। হয়তবা এক লক্ষ টাকা বেতন পাচ্ছে। ২৫০০০ টাকা কিস্তিতে কার লোণ দিয়ে ৫ বছরে কারের মালিক হচ্ছে। অনেকটুকু ভাল খবর।
সমস্যা হল। এই পাঁচ বছর কিস্তি দিয়ে ১০ লক্ষ টাকার কার পনের লক্ষ টাকায় ক্রয়
করেছে। পাঁচ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বেশী দিয়েছে। সেই সাথে কারের রক্ষণাবেক্ষণের
খরচ। ট্যাক্সের খরচ ইত্যাদি নানাবিধ খরচ কিন্তু যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন সেই তরুণটি
২৫০০০ টাকা কিস্তি না দিয়ে যদি প্রতি মাসে জমাত ও যেখানে টাকা বাড়ে সেই ধরনের
হিসাবে রাখত তবে তিন বছরে কারের মূল্যে জমিয়ে নগদে কার ক্রয় করতে পারত। দুই বছর আর
পাঁচ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হত না। অনেকে বলবে আমি তো আমার বয়স থাকতে কারের
মজা করেছি। তিন বছর আগে থেকেই কার চালাচ্ছি। আমার তো লাভই হল। আমি এনজয় করতে
পারলাম। মধ্যবিত্তরা এই তৃপ্তিতেই কারের মালিক হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীতেই অবস্থান
করতে থাকে। গাড়ীর মত খরোচে জিনিষ ক্রেডিটে বা ধারে কেনাই হল লায়াবিলিটিস। তাই বলে
আমরা কি কার কেনা বাদ দিয়ে দিব। অবশ্যই না। আমরা মিডল ক্লাসরা কার কিনব। কতগুলো
শর্ত পূরণের পর।
ক। আমাদের যে কোন উৎস হতে এককালীন
কার ক্রয় করার সামর্থ্য থাকতে হবে। অবচয় মূল্য বাদ পড়ায় পুরাতন কার ক্রয় মন্দ অপশন
নয়। তবে দশ বছরের পুরাতন নয়। তাহলে আবার ম্যান্টেন্যান্সে বেশী খরচ হবে।
খ। কারের মূল্য অনুযায়ী ৫ লক্ষ হতে
১৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র বা আয়বর্ধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই টাকাটা কার
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করতে হবে এবং এই টাকাটা পরোক্ষ ভাবে আয় করার প্রয়োজন
হবে।
গ। এখন যদি চালক রাখতে হয় তবে আরও দশ লক্ষ থেকে পনের
লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্রের মত বা এই ধরনের উপার্জন বর্ধক আয় থাকতে হবে।
ঘ। কারের ম্যান্টেন্যান্সে খরচ ও
ড্রাইভার রাখার ব্যয় মধ্যবিত্তের বহন করার
জন্য উপার্জন বা সঞ্চয় পত্রের আয়ের মত ব্যাকআপ আয় লাগবে।
চাকুরী শুরু করে কারো যদি গাড়ী
কেনার ইচ্ছে থাকলে ও আয় ভাল থাকলে কিস্তিতে না কিনে প্রথমে ৫লক্ষ হতে ১৫ লক্ষ
সামর্থ্য অনুযায়ী কার কিনতে হবে সম্পূর্ণ টাকা জমানোর পর। তারপর গাড়ী ভেদে পুনরায়
৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র বা সেই ধরনের আয় বর্ধক ব্যবস্থা করে গাড়ী চালনার
ব্যয়ের খরচটা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে নিতে
হবে। যেন নিজের মূল আয় থেকে না গিয়ে জমানো টাকার পরোক্ষ আয় থেকে পরিশোধ করা যায়।
নিজে গাড়ী চালাতে চাকুরীর প্রথম পর্যায়ে এই ভাবে গাড়ীর মালিক হতে পারলে মন্দ হয়
না।
বয়স হয়ে গেলে গাড়ী নিজে চালাতে না
পারলে ড্রাইভার রাখতে হলে ড্রাইভারের বেতন ১০০০০ হতে ১৫০০০ টাকা ২০১৭ সালের শেষ
দিকে এই রেটে পেমেন্ট করতে হতে পারে।
সর্বসাকুল্যে গাড়ী কেনার জন্য ২০১৭
সালের শেষ দিকে আমরা দেখতে পাই কমপক্ষে ২৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা গাড়ীর নগদ মূল্য এবং ৫ লক্ষ+ ১০ লক্ষ অর্থাৎ ১৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয়
পত্রের মাধ্যমে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারলেই কেবল গাড়ী ক্রয় করা উচিত। অন্যথায়
নিজেদের অন্যান্য আয় বর্ধক অবস্থা ঠিক রাখতে না পারলে মধ্যবিত্তের চক্রেই আবদ্ধ
থাকতে হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা ফাইনানসিয়াল ফ্রিডম কখনোই আসবে না। পরিশেষে বলব
মধ্যবিত্তদের ঝোঁকের বসে প্রাইভেট কার না কিনে ২৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়
পত্রের মাধ্যমে আয়ের সংস্থান করে এককালীন মূল্য পরিশোধ ও অন্যান্য টাকা আয় বর্ধক
ব্যবস্থায় রেখে প্রাইভেট কার ক্রয় করলে মধ্যবিত্তের আবর্তে ঘুরপাক খেতে হবে না।
No comments:
Post a Comment