Pages

Thursday, November 2, 2017

নিকটাত্মীয়দের ধার দেয়া ও মনোমালিন্য পরিহার

আমি জীবনে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী অনেককে লোন দিয়েছি কিছু লোন ফেরত পেয়েছি কিছু পাইনি আমার এই ক্রাইসিসের মধ্যে আমার স্ত্রী এক বুদ্ধি দিল লোন দিবে না সামর্থ্য অনুযায়ী ডোনেশান দাও টাকা ফেরত নেয়ার আশা নাই চিন্তাও নাই তোমার নিকট আত্মীয়দের সাথে লোন দেয়ার লেনদেনে না গিয়ে যতটুকু পার স্বত্ব ত্যাগ করে দাও সেই  ভাল আত্মীয়তায় তিক্ততা আসবে না আমি আমার বন্ধুর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত মনোমালিন্য হওয়ার পর থেকে কাউকে লোন দিচ্ছি না কেবল মাত্র ডোনেশান দেই আমি মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী মানুষ আমি একটা পুরাতন গাড়ী কিনে ৮ বছর চালানোর পর বিক্রি করে দিয়ে পুনরায় গাড়ী কিনতে ভয় পাচ্ছি কারণ মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী হিসাবে একটা গাড়ী ও চালক পোষার খরচ মাসিক ৩০/৪০ হাজার টাকার কম নয় এর চেয়ে মাসিক ১০/২০ হাজার টাকায় উবার ও ট্যাক্সি ব্যবহার করে কাটানো যায় প্রাইভেট কার ছেড়ে দেয়ার পর আমার গ্রামের আত্মীয়দের ডোনেশন বাড়াতে পেরেছি তবে ভাই বোনের জটিল সমস্যায় আমাদের অনেকের সামর্থ্য অনুযায়ী ধার না দিয়ে পারা যায় না এখন নিকট আত্মীয়কে বা কাছের মানুষকে কিভাবে ধার দেয়া যায় এটা নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি সহজ উপায় হল ওডি একাউন্ট খুলে দেয়া বা ওডি সিস্টেম বাতলিয়ে দেয়া এটা আবার ব্যাংকের সুদ দিয়ে নিজের ভাই বোন ফতুর হলে নিজেরই খারাপ লাগবে নিজের কাছে কিছু সঞ্চয় আছে ভাই বোনের বিপদে না দিতে পারলেও খারাপ লাগে অথচ টাকাটা ফেরত দিতে পারবে তারও কোন গ্যারান্টি নাই কি করা যায় আমরা এই বিপদে প্রায়ই পড়ে যাই আমি একটা ঘটনা জানি একজন একটা মামলায় পড়ে জেলে যায় ভদ্র পরিবার নিজেদের সন্মান রক্ষার্থে তার বাবা মা ছেলেকে ছোটাতে আদালত ও উকিলের পিছনে অনেক টাকা খরচ করে এই  টাকা ধার কর্জ করতে হয় তার চাকুরীজীবী মেয়ের স্বামীর কাছ থেকে ধার নিতে হয় মেয়ের চাকুরীজীবী স্বামী বাড়ীর জমি ক্রয় করার জন্য টাকাটা জমিয়েছিল সে টাকাটা শ্যালককে জেল থেকে ছোটানোর জন্য দিয়ে দেয় শাশুড়ি অগত্যা দাম ধরে মুল বাড়ীর অংশ থেকে মেয়ের স্বামীকে ধারের বিনিময়ে বাড়ীর অংশ দানপত্র দলিল লিখে দেয় এরূপ অনেক ঘটনা আমাদের আশে পাশে ঘটতে থাকে এই বিষয়টি  আমাকে অন্যদের ধার দেয়ার জন্য নতুন আইডিয়া দেয় যারা আমরা নরম শরম মানুষ তাদের জন্য ধার দেয়ার জন্য নতুন কৌশল মাথায় আছে তা হল:
আত্মীয় কি কারণে ধার চাইছে তা বের করতে হবে কারণটা মর্মাহত করলে অবশ্যই প্রথমে অনুদান ও পরে ধার দেয়া উচিত
আত্মীয় ধার করার রেকর্ড, ধার পরিশোধের মানসিকতা ও ধার পরিশোধের সক্ষমতা জানতে হবে
জমি বা বাড়ী বন্ধকের বিনিময়ে ধারের একটা স্ট্যাম্প করার প্রয়োজন হবে ধারের টাকা সুদে না বিনা সুদে দেয়া হবে তা উল্লেখ রাখতে হবে অনেকে সুদ নেন না আবার অনেকে বলেন ধার না দিয়ে টাকাটা ব্যাংকে রাখলে আমার পাঁচ বছরে অনেক টাকা বাড়ত তবে যারা সুদ দিবেন তারা টাকা ধার না দিয়ে ব্যাংকে গ্যারান্টার হয়ে ধার গ্রহীতার জমি/বাড়ী  জামানত রেখে ওডি একাউন্ট খুলে দিন আপনার আত্মীয়ের যখন খুশী টাকা প্রয়োজন তখন নিবে আর যখন টাকা হাতে আসবে তা পরিশোধ করবে ওডি একাউন্ট  করিয়ে আত্মীয়ের চারিদিকের মহাজনী ধার কর্জ এক জায়গায় করে দিতে পারলে আপনার আত্মীয়টির ভাল উপকার হবে কারণ ধার অনেক জায়গায় ছড়ানোর চেয়ে ব্যাংকের একটি একাউন্টে আনলে ভাল এতে ধারের প্রতি সচেতনতা বাড়ে ও দ্রুত ধার পরিশোধ হয়
অনেক আত্মীয় আবার বলবে আত্মীয় হয়ে জমি কর্জ রেখে কেন ধার দিবে তখন তাকে পরিষ্কার ভাবে জানাতে হবে লিখে পরে টাকা পয়সার ধার দেনার হিসাব করার ধর্মীয় নির্দেশ রয়েছে ধার নেয়ার সময় মনোমালিন্য হওয়া ভাল এতে পরে মনোমালিন্য কম হবে ধার গ্রহীতার  একাউন্টে চেকের মাধ্যমে বা অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে যেন ট্রানজিশান রেকর্ড থাকে ধার গ্রহীতার কাছ থেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে এক বা একাধিক চেক নিতে হবে তারিখ দেয়া যাবে না কারণ চেকের তারিখের মেয়াদ হল ছয় মাস
ধার গ্রহীতার কাছ থেকে চেক নিলে সুবিধা হল গ্রহীতার একাউন্টে টাকা রাখলেই  হল ধার প্রদানকারীকে ধারের টাকা গ্রহণের জন্য গ্রহীতার পিছে পিছে ঘুরতে হবে না আর গ্রহীতাও তাকে বলতে পারবে না এখানে আসেন টাকা দিব ওখানে আসেন টাকা দিব ধার প্রদানকারী বলবে একাউন্টে রাখেন আমি তুলে নিব আর চেক ডিজঅনার হলে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যায়
স্ট্যাম্পে হাতে লিখে বা কম্পিউটারে নিজেদের মত ধারের চুক্তিনামা করে নেয়া যায় তার জন্য দলিল লেখক ভাড়া করার প্রয়োজন নাই ধার গ্রহীতার কাছ থেকে তারিখ বিহীন ব্যাংক চেক নিতে হবে
বেশী টাকা হলে জমির দলিল জমা নিতে হবে আত্মীয়দের কাছ থেকে স্বর্ণ বা অন্য কোন সামগ্রী বন্ধক নিলে অন্য বিপদ আর তা হল ওই  সব সামগ্রী হারাতে পারে বা চুরি যেতে পারে জমির দলিল হারালে বা খোয়া গেলে তার নকল তোলা যাবে তাই কোন কিছু জমা রাখতে হলে দলিল জমা রাখাই ভাল
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি:
সোলায়মান একজন ভাল ছাত্র এইচএসসি পাশ করেছে বাবা ও মা আছেন বাবা গ্রামের প্রাইভেট স্কুলে স্বল্প বেতনে চাকুরী করে আর টিউশন করে চার ভাইবোন বিভিন্ন ক্লাসে পড়ে সোলায়মান কোচিং ছাড়াই মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়ে গেল সোলায়মান একমাত্র অবস্থাপন্ন মামার কাছে গেল সাহায্যের জন্য মামা জানাল তিনি ভর্তি হওয়ার এককালীন খরচ বই কেনা জামা কাপড় কিনে দিবেন কিন্তু নিয়মিত খরচ দিবেন না আসলে মামা নিয়মিত খরচ দিতে সক্ষম হলেও মামীর জন্য  পারবেন না কারণ নিজের সংসার আছে নিজের সন্তানকে তো আগে দেখতে হবে মামা একটা বুদ্ধি বের করে তার স্ত্রীর অনুমোদনের জন্য গেল স্ত্রী অনুমোদন দিল পরিকল্পনাটা হল এরূপ সোলায়মানদের একটা জমি মামা বন্ধক রাখবেন প্রতি মাসে মামা ৫০০০ টাকা করে বছরে ৬০০০০ টাকা দিবেনএভাবে মাসিক ৫০০০ টাকা হিসাবে পাঁচ বছরে অর্থাৎ ডাক্তারি শেষ না করা পর্যন্ত বিনা সুদে পাঁচ বছরে তিন লক্ষ টাকা প্রদান করবেন ডাক্তারি পাশ করে চাকুরীর পর সোলায়মান টাকা ধারাবাহিক ভাবে ফেরত দিবে অথবা জমি বিক্রয় করে পরিশোধ করবে মামা ভাগনের প্রতি দায়িত্ব হিসাবে টাকাটা বিনা সুদে প্রদান করবে শুধু মূল টাকাটা ফেরত নিবে
সোলায়মান ২০১৪ সালে ডাক্তারি পড়া শেষ করল বিসিএস চাকুরী পেল ২০১৭ সালের জুনেই সোলায়মান মামাকে সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দিল মামাও খুব খুশী মামা দলিল ফেরত দিল সোলায়মানও কৃতজ্ঞ থাকল মামার এই অবদানের জন্য

আমাদের মাঝে যারা সচ্ছল আছেন তারা এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের নিকট আত্মীয়দের দায়িত্ব পালন করতে পারেন আশা করি আমরা সবাই চাইলেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে পারব

No comments:

Post a Comment