১৯৭৭ সালে আমার বড় ভাই কুমিল্লা
জেলার হাই স্কুলে পড়তেন। প্রতিদিন যাওয়া আসায় প্রায় দুই টাকা রিক্সা ভাড়া খরচ যায়।
বড় ভাইয়ের আবদার একটা ফনিক্স বাই সাইক্যাল কেনা। বড় ভাইকে বাই সাইক্যাল দেয়া হবে। পাঁচশত
টাকা লাগবে। আব্বা ও আম্মা তিন মাস ধরে মাসের খরচ থেকে জমাচ্ছেন বড় ভাইকে বাই
সাইক্যাল কিনে দিবেন বলে। এভাবে আমার মা ও বাবা বেতনের টাকা হতে জমিয়ে বিভিন্ন সময়
ঘরের অনেক সামগ্রী কিনতেন। আমরাও জানতাম কোন মাসে কি কেনা হবে। সেই অনুযায়ী আমরাও
কৃচ্ছতা সাধন করতাম। তখন আগে সঞ্চয় পরে ক্রয় করা হত। এটা একটা কষ্টকর প্রক্রিয়া।
অপেক্ষা করা। আর কোন জিনিষ আমি চাইছি তা দেরী করে কেনা। অনেক কষ্টকর বিষয়। তবে
কষ্টকর হলেও আগে অপেক্ষা করে পরে ঋণ মুক্ত
থাকা যেত। অথচ এখন আধুনিক কাবুলিওয়ালারা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে হাজির। শুধু আপনার একটু
ঋণ নেয়ার জন্য আওয়াজ দিতে হবে এই আরকি।
বাড়ী বাড়ী গিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার
কালচার চালু হয়েছে এটার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া আছে। গ্রামের নিরীহ মানুষ সাধারণ
ভাবে আর্থিক অনটনে থাকে। তাদের কিছু খায়েশ থাকে যা তাদের ছোট ছোট উপার্জনে পূর্ণ
করতে সক্ষম হয় না। যখন নগদ কিছু টাকা হাতে আসে তখন তারা বেহিসাবি ভাবেই খরচ করে
ফেলে। ক্ষুদ্র ঋণের গরু, ছাগল ও হাস মুরগী কেনার টাকা দিয়ে
টাচ মোবাইল, গয়না ঘাটি, ফার্নিচার ও ঘরের কাজ করে ফেলে। তখনই মূলত বিপর্যয়টা ঘটে। ক্ষুদ্র ঋণের
আইডিয়াটাই এসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে বা কৃষির বিনিয়োগ করে আয় করা। সেই আয় দ্বারা
কিস্তি বা ঋণ শোধ করা। কিস্তি পরিশোধের জন্য শক্তিশালী আয়ের উৎস থাকতে হবে। নচেৎ
কষ্টকর আয়ের বড় অংশ ব্যাংকের সুদ পরিশোধে চলে যাবে। তাই ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের
শেখাতে হবে শখে শখে বা উৎপাদনীল খাত ছাড়া ঋণ না করা। এমনকি অনেক সময় আয় রোজগার ভাল
মনে হচ্ছে কিস্তি নিতে সমস্যা কোথায়। আজ ভাল চলছে। কালকে অত্যন্ত মন্দ অবস্থায়
যেতে পারে। তখন এই ঋণ গুলো আপনাকে চরম বিপদে ফেলে দিবে। ব্যবসায় লস। আয় নাই।
কিন্তু কিস্তি গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ আগে ছিল দরিদ্র
কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণ চালু হওয়ার পর গ্রামের মানুষ হয়েছে ঋণ গ্রস্থ দরিদ্র মানুষ।
ঋণ ও কিস্তির ক্ষেত্রে সাধারণ
মানুষকে আয় বর্ধক কাজ ছাড়া ঋণ বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করতে হবে। একান্তই
চিকিৎসার জন্য বা পড়াশোনার জন্য ঋণ নেয়া যেতে পারে। তার বাইরে অবশ্যই নয়।
কোন বাড়ীতে শিশুরা আবদার করল তাদের
রঙ্গিন টিভি চাই। এখনই কিস্তিতে কিনতে হবে তা নয়। সময় নিতে হবে। মাসিক ভিত্তিতে
জমাতে হবে। তার পর কিনতে হবে। বাচ্চাদের শিখাতে হবে একটি টিভি কিনতে আমাদের
প্রয়োজন হবে ২০ হাজার টাকা। অপর দিকে মাসে আমরা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে সেইভ করতে পারি
২০০০ টাকা। তাই ২০ হাজার টাকার টিভি কিনতে আমাদের সঞ্চয় করতে হবে ১০ মাস ধরে।
এভাবে যে কোন ভোগ্য পণ্য ক্রয় অবশ্যই নগদে করাটাই বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় কিস্তিতে অধিক
টাকা খরচ হবে। অনেকে বলবে একটু বেশী গেলেও কিস্তিতে কিনলেও দশ মাস আগে থেকেই আমি
টিভি উপভোগ করতে পারি। তাহলে সমস্যা কি। সমস্যা আছে। মনে করুন আপনি কিস্তি করে টিভি কিনেছেন। আপনার ইনকাম ভাল। আয় রোজগার ভাল।
হঠাৎ করে আপনি অসুস্থ হয়ে গেলেন। চিকিৎসায় অনেক খরচ চলে গেল। এখন মাসিক কিস্তি
আপনি নিয়মিত দিতে পারলেন না। আপনার ঋণ ও সুদ আরও বেড়ে যাবে। অথচ আপনি যদি দশ মাস
টাকা জমিয়ে কিনতেন তবে আপনি আর এই সমস্যায় পড়তেন না। আপনি অসুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসায়
বেশী খরচ হয়েছে। সমস্যা নাই। সেই ক্ষেত্রে আপনি দশ মাসের বদলে আরও কয়েক মাস বেশী
জমিয়ে কয়েক মাস পড়ে টিভি কিনবেন। অনেকেই নিজের ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
ঝোঁক হল। কিস্তিতে কিনে ফেলল। এর জন্য সুদূর প্রসারী চিন্তা করে না। খরচের
ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হওয়াটা জরুরী। পরিশেষে বলব, আসুন আমরা আমাদের আশে পাশের মানুষদের শখের বসে কিস্তিতে ঋণ গ্রহণ করায়
নিরুৎসাহিত করি।
চমৎকার আইডিয়া। কিস্তি নিয়ে কাজ সারার পর বলতে শোনা যায় কিন্তি দিতে বুকের পাটি মাটিতে ঢেকে। তার বুকের পাটি মাটিতে না ঠেকিয়ে তা উচা রাখাই ভাল।
ReplyDelete