আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে তখনই বাবা মা
আমাদের ভাই বোনদের কে কি করবে ও কিসে পড়াতে চান তার একটা গাইড লাইন তুলে ধরেন। আমরা
বাবা মার গাইড লাইন পেয়ে একটা গোল সেটিং করে ফেলি। যেমন বাবা বললেন তুমি খেলনাপাতি
ও অন্য যন্ত্রপাতি ভাংগাভাংগি কর। তুমি ইঞ্জিনিয়ার হও। ভাল করে পড়। যেন সাইন্স পাও।
বাবা বরিশাল বদলী হলেন। তখন বললেন, বরিশাল ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হও। ভাল রেজাল্ট করতে
পারবে ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সহজ হবে। গেলাম ক্যাডেট কলেজে। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর
বাবা বললেন আর্মিতে যাও। আমি বললাম, এটা কি বলছেন। আমি তো ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। বাবা
বললেন আর্মিও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়। ওখানে পড়। সপ্তাহ কাল নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করে
আইএসএসবিতে গেলাম। বাবার ইচ্ছেই জীবনটা পরিচালিত করেছি। সফলতা বিফলতার হিসাব করিনি।
আজ বাবা হয়ে যখন ছেলেমেয়ের পছন্দের কাছে হার মানি, তখন মনে হয় আমি যখন সন্তান ছিলাম
তখন বাবার পছন্দের কাছ হার মেনেছিলাম। যখন বাবা হলাম তখন সন্তানদের পছন্দের কাছে হার
মানি। আমার স্ত্রী আমাকে বলে তুমি আসলে হারু পার্টি। এই হারু পার্টির আর একটা গল্প বলি। একজন সহকর্মী জানতে
চাইল শান্তি রক্ষী মিশনে যাচ্ছি অমুক স্কুলে
বাচ্চা ভর্তি করতে চাচ্ছি। অধ্যক্ষ ভর্তির
বিষয়ে কোন সহযোগীতা করছে না। আমি জানতে চাইলাম পরিবার কোথায় বাসা ভাড়া করবে। তিনি
যে লোকেশান বললেন তার থেকে যে স্কুলের নাম বলেছেন তার দূরত্ব বেশী। তাকে বাড়ীর কাছে
স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তি করতে বললাম। তিনি বললেন ছেলে মেয়েদের বুঝিয়েছি তারা রাজী না।
তাহলে একটা কাজ করুন আপনার প্রস্তাবিত স্কুলের পাশে বাড়ী ভাড়া নিন। ভাড়া বেশী হলেও
বাচ্চারা হেটে স্কুলে যেতে পারবে। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে পড়বে না। সময় বেচে যাবে। তিনি
তখন বললেন, স্ত্রী তার আত্মীয়দের নিকটে থাকবেন। এ প্রস্তাবে স্ত্রী রাজি নয়। আর এই হল হারু পার্টিদের গল্প। আমাদের মত অনেক হারু পার্টি আছে। আবার অনেক সফলও আছেন। আমি আমার সন্তানদের জন্য
যা আশা করলাম তা তার পছন্দ যে সব সময় মিলাতে পারব তা নয়। বরং আমাদের তাদের পছন্দে যেতে
হচ্ছে। আমার পছন্দ চাপিয়ে দিতে পারি। তাতে যে আন্দোলন হবে। তাও সামাল দেয়া যাবে। তবে
সামলাসামলি থেকে মজার বিষয় হল নীতি নৈতিকতা ত্যাগ না করে সন্তানরা নতুন কোন ভেঞ্চার
করতে চায় তবে করুক না। একবার এক বন্ধু বলল, তার ছেলে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে বেসরকারি
কলেজে ভর্তি হয়ে বলল, সে যে সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছে তা তার পছন্দ নয়। অন্য সাবজেক্টে
পড়বে। সুতরাং লস হলে আগে হওয়াই ভাল। আমি মাঝে মাঝে আমার সন্তানদের তাদের ফিউচার গোল
সেটিং নিয়ে আলোচনা করি। তারা অনেক বেশী পর্যবেক্ষণ করে। তারা নিশ্চিত নয় তারা কি গোল
সেটিং করবে। আমিও তাদের চিন্তার ম্যাচিউরিটির জন্য অপেক্ষা করছি। তবে তারা সাইন্সে পড়বে এটা নিশ্চিত করেছে। একবার
ভাবলাম সন্তানদের সাথে ফাইনালসিয়াল গোল সেটিং
নিয়ে কথা বলি। একদিন রাতে ডিনারে সন্তানদের কাছে জানতে চাইলাম, ২০১৭ সালে শেষে ৪৭ বছর
বয়সে আমি যদি প্রাইভেট জেট কেনার স্বপ্ন দেখি, এটা কি বেশী হয়ে যাবে। ইন্টারমিডিয়েট
পড়া বড় ছেলে বলল, তোমাকে এখনই পরিকল্পনা করে ফাইনানসিয়াল গ্রোথ শুরু করতে হবে। বড়
ছেলের এই সম্মতিতে আমি তার চিন্তার গভীরতা
ও গোল সেটিং এর অসীম লক্ষ্যকে অনুধাবন করলাম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া ছোট ছেলে বলল, পাপা অনেক দেরী করে ফেলেছ। ক্লাস
ওয়ানে পড়া মেয়ে বলল, তুমি একটা ফানি পাপা, গাড়ীই কিনতে পারছ না, আবার প্রাইভেট জেট।
সন্তানরা আমাদের ইচ্ছেয় চলবে না। তাদের
চিন্তার জগতটা থেকে জানতে হবে আসলে তারা জীবন সম্পর্কে কি ভাবে। কোনটায় তাদের আগ্রহ আছে। ফাইনানশিয়াল
গ্রোথ তারা কিভাবে করতে চায়। ইথিকাল ও মরাল ভেলু কিভাবে তারা ইনকর্পোরেট করবে। ইত্যাদি
ইত্যাদি। আমাদের এখনকার স্মার্ট বাচ্চাদের গোল সেটিং ও ফাইনানশিয়াল গ্রোথ তাদের উপরই
ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের কাজ হল গাইডিং ও মেন্টরিং।
এখনকার বাবাদের চাইল্ড সাইকোলজী সম্পর্কে
জানতে হবে। অনেকে বলবেন ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ে আসুন সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবার কথা পই পই
করে শুনবে। কথা শোনা আর অন্তরে অনুধাবন করে কাজ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য। অল্প বয়সে
প্রেম পিরীতি থেকে অন্য কোন ক্রিয়েটিভ কাজ করা ভাল ও সেভাবে বাবা মা সন্তানদের গাইড
করতে পারে। ধর্মীয় অনুশাসন মান্যের বিষয়ে তাদের ভাবনা চিন্তায় ধর্মীয় কল্যাণকর দিক
তুলে ধরে অনুপ্রাণিত করা যায়। বন্ধুদের সাথে অপরিকল্পিত সময় কাটানো থেকে অন্য কোন
ভাল মুভি, আলোচনা ও ঞ্জান অর্জন উত্তম হতে পারে। প্রতিটি মূহুর্ত যেন নিজের মানবীয়
ও দক্ষতার উন্নয়নে ব্যয় করা যায় তা তাদের অনুধাবন করাতে হবে। সবচেয়ে বড় হল আমরা বাবা
ও মা,রা নীতি ও নৈতিকতার ঞ্জানে ও অনুশীলনে থাকতে হবে যেন সন্তানরা আমাদের অনুসরণ করতে
পারে। নবীন প্রবীণের দ্বন্ধ চিরকাল ছিল। আগামীতে থাকবে। এটা কমানোর উপায় হল আমাদের
নিজস্ব ধ্যান ঞ্জানে সীমাবদ্ধ না থেকে নতুন নতুন ধারনা ও ঞ্জান আমাদের অর্জন করতে হবে
ও তার জন্য সময় দিতে হবে। আমাদের বাবা মা নির্দেশ দিয়েছে আমরা পালন করেছি । এখন বাবা
হিসাবে হারু পার্টি না হওয়ার বুদ্ধি হল সন্তানরা তাদের পছন্দের প্রফেশন নির্ধারণ করবে
আর আমরা তাদের সে প্রফেশনে সফলতা করার জন্য সহযোগীতা ও মেন্টরিং করব। আমার এক বন্ধু বলেছিল পরীক্ষা দেয় বাচ্চা পড়তে হয়
আমার। তাই কষ্ট করে সন্তানদের পছন্দ করা বিষয়ে আমাদের আরো পড়তে হবে ও জানতে হবে। এতে
আমরা হারু বাবারা সফল বাবা হতে পারব।
No comments:
Post a Comment