Pages

Thursday, January 11, 2018

চাকুরী শেষে কি করব?

মান্যবর প্রফেসর ইউনুসের একটি লেখনীতে পেয়েছিলাম, চাকুরী  মানুষকে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীতে বেধে রাখে। তাহলে সম্পদ বাড়াতে হলে ও আর্থিক মুক্তি পেতে হলে চাকুরীতে আবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাহলে চাকুরী হতে বের হতে গেলে কেন এত চিন্তা। আমি ঢাকার বাইরে দীর্ঘ ২৭ বছর  চাকুরী করে ঢাকায় বদলী এসে আমার অনেক বন্ধু কারো সাথে ৫ বছর এবং অনেকের সাথে ১০ বছর পর দেখা। তাদের সকলের একটা কমন প্রশ্ন এরা বেশীর ভাগই মেজর ও লে: কর্নেল র‍্যাংকের । রিটায়ারমেন্টের পর কি করবি। কারণ সেনাবাহিনীতে মেজর র‍্যাংকে ৫০ বছর ও লে কর্নেল র‍্যাংকে ৫১ বছরে রিটায়ার্ড করতে হয়। যখন অন্যান্য সকল চাকুরীজীবীরা ৫৯ বছর ও প্রফেসররা ৬৫ বছর বয়সে রিটায়ার করে। এটা অনেকের জন্য অনেক অনেক চিন্তার কারণ হলেও আমি এর মধ্যে চিন্তার কোন কারণ দেখছিনা। এর মধ্যে আমি সুযোগ দেখতে পাই। মুক্তি দেখতে পাই। পঞ্চাশ বছর বয়সে দেশের ভিতরে বাইরে একটা সেনা সদস্যের অনেক অনেক অভিঞ্জতা হয়। এই  সময় সে সমাজের অনেক অনেক কাজ করতে পারে। আমি একদিন একজন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সাথে পেনশন বিষয়ক আলোচনা করছিলাম। আমি বললাম, এখন পুরো পেনসন বিক্রি  করতে সরকার দিচ্ছে না। অবিক্রীত পেনসনের আবার প্রতি বছর ৫% করে বাড়বে। এটা খুব ভাল দিক। চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকলে আজকে দশ হাজার টাকা পেনশন পেলে তা বিশ হাজার টাকা হয়ে যাবে দশ বছর পর। তার দশ বছর পর অর্থাৎ ২০ হাজারের দ্বিগুণ ৪০ হাজার টাকা হচ্ছে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে ২০ বছরে চল্লিশ হাজার টাকা হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই লাভজনক। কর্মকর্তাটি বলল আপনারা ৫০ বছরে রিটায়ার করছেন আপনাদের জন্য উপকারী। আমরা যারা ৫৯ তাদের জন্য ভাল নয়। তার চেয়ে এককালীন বিক্রি করলে বেশী লাভ হত। আমি  এখানে দমে গেলাম। আমরা সেনা মেজররা ৫০ বছর বয়সে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ার চাপ নিয়ে রিটায়ার করছি। আর ৫৯ বছরে যে রিটায়ার করছে সে বলছে, ৫০ বছরে রিটায়ার করে আমরা নাকি লাভবান। আসলে লাভ ক্ষতির বিশ্লেষণ হল নিজের বিবেচনায় ও পারিবারিক চাহিদার উপর। আমার আশে পাশের অনেক অবসর প্রাপ্ত মেজর বা লে: কর্নেলের সাক্ষাত পাই। তারা বেশীর ভাগই কোন না কোন কাজ নিয়ে আছে। বেতন ৫০ হাজার হতে ৫০০ হাজার পর্যন্ত। এখানে চাকুরীর বেতনের একটা বিশাল ভেরিয়েশন চোখে পড়ল। বাইরের চাকুরীতে ব্যক্তিগত ডিগ্রি হতে যোগাযোগ অনেক বেশী ভূমিকা রাখছে। তাই সেলারী দিয়ে বিচার করাটা একটু জটিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটির এমবিএ নিয়ে অনেকে যে বেতনে চাকুরী করছে তার চেয়ে অনুন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ নিয়ে তার চেয়ে বেশী বেতনে চাকুরী করছে। তাই জানা শোনা ও নেটওয়ার্কটাই বেশী ইম্পরট্যান্ট। মাঝে মাঝে আমার গ্রাম থেকে জানাশোনার মধ্যে অনেকে জানতে চায় চাকুরী দিতে পারব কিনা। তখন আমি নিজে নিজে হাসি। কয়েকদিন পর আমাকেই চাকুরীর প্রার্থী হতে হবে। আমাকে এমবিএর ছাত্র হতে হবে। নাহলে ভাল বেতনের চাকুরী পাওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে চিন্তা হয়। ব্যবসায়ী মালিক কোন ছোকড়া ছেলেকে “স্যার বলে তার খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করব। সেই ছোকড়া বুক ফুলিয়ে বলবে বড় বড় অবসর প্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমার বেতন ভুক্ত কর্মচারী। ৫৯ ও ৬৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা এই  সমস্যার মধ্যে নাই। কারণ ওই  বয়সে তাদের সেকেন্ড ক্যারিয়ার করার প্রয়োজন পড়ে না।  যারা এই সমস্যায় আছে তারা হল ৫০ বা ৫১ বছরের রিটায়ার্ড পার্টি। সব কিছুর ভাল দিক আছে। মন্দ দিক আছে। ভাল দিক হল ৫০ বছর বয়সে কিছু কিছু ব্যবসা শুরু করা যায়।  মনের অনেক আকুতি থাকে নিজের গ্রামে কিছু করা। সে কাজগুলো করা যায়।

আমার বন্ধুদের সাথে আলোচনায় একটা বিষয় আসে তা হল প্রথমে পরিবারকে আর্থিক ভাবে নিরাপদ করা। যাদের নিজ, পৈত্রিক  বাড়ী নাই এই  সময় আর করা যাবে না। পেনসনের মাসিক টাকা ব্যয় করতে হবে বাড়ী ভাড়া, ফ্লাটে থাকলে নিরাপত্তা, জেনারেটর অন্যান্য খরচাদির জন্য। পেনশন যেহেতু প্রতিবছর ৫% হারে বাড়বে তাই বাড়ী বৃদ্ধির সাথে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পেনশনের টাকা থেকে আরও কিছু টাকা বাড়লে তখন তা জমানো যেতে পারে। পেনশন থেকে প্রাপ্ত এককালীন টাকায় সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোন পন্থায় বিনিয়োগ করে মাসিক খরচ বের করা যাবে। গাড়ী আগে থেকে না থাকলে নতুনভাবে কেনার প্রয়োজন নেই। পেনশনের মাসিক টাকা ও পেনশনের এককালীন টাকা বিনিয়োগ করে পরিবারকে নিরাপদ করে নিন। এবার চলুন জীবন যুদ্ধে নামি। আপনার পেনশন ব্যতীত অন্য কোন টাকা সঞ্চয় থাকলে তা দিয়ে শুরু করি। বাপের জমি থাকলে এগ্রো প্রোডাক্ট করা যেতে পারে। পুকুর থাকলে মাছ চাষ করা যায়। কোন কোম্পানী করা যায়। কোন চাকুরী করা যায়। এখানে অনেকে চিন্তা করতে পারে অনেকে অনেক টাকায় চাকুরী করছে। আমি অল্প টাকায় চাকুরী করব। এটা এই হিসাবে গেলে হবে না। চাকুরী বা কাজ প্রয়োজন হবে নিজের আয়ুটাকে বাড়ানোর জন্য। ভাল না লাগলে সেটা জীবনের পোস্টিং এর মত বদল করলে হবে। আমার বাবা রিটায়ার্ডমেন্টের পরে গ্রামে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শুধুমাত্র এগ্রো প্রোডাক্টে কাজ করে ৫৭ বছর বয়স থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন শুধু বাগান করে। ৮০ বছর পর থেকে ২০১৭ সালে ৮৪ বছর পর্যন্ত ৪ বছর তিনি স্ট্রোক করে ডান হাত অবশ আর খুড়িয়ে হাঁটেন। এছাড়া অন্য কোন অসুখ নেই। বাবার অন্যান্য শহুরের ইঞ্জিনিয়ার কলিগরা ৬৫ হতে ক্রমান্বয়ে ৭৫ বছরের মধ্যে বিধাতার দরবারে চলে গেছে। তাই অবসর জীবনে সহনীয় পরিমাণে কায়িক পরিশ্রমের কাজ না করলে অতি তাড়াতাড়ি বিধাতার সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য মিলবে। পেনশনের পর মাসিক টাকা আর এককালীন টাকা বিনিয়োগ করে বাচা যাবে। তবে নিজেকে বাচাতে কয়েকটি অভ্যাস করতে হবে। হাটাহাটি ও ব্যায়াম। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ। প্রয়োজনে নিজে বাজারে যাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়লে আরো ভাল। সমাজের মানুষদের জন্য কিছু করা। পড়াশোনা করা। লেখালেখি বা ক্রিয়েটিভ কিছু করা। নিজেকে বিতর্ক, ধান্ধাবাজি ও অসৎ জীবন যাপন থেকে দুরে রাখা। গঠন মূলক বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সমাজে অবদান রাখা যেতে পারে। পরিশেষে বলব রিটায়ার্ড শব্দটা আসলে সৈনিক জীবনের জন্য প্রযোজ্য নয়। সৈনিক যুদ্ধে ধ্বংস হয় কিন্তু পরাজয় বরন করে না। আর একটি বিষয় কিছু রোজগার আসুক বা না আসুক কোন ব্যবসা বা চাকুরীতে/ স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়োজিত থাকলে দীর্ঘ আয়ু পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ আমরা তা আশা করতে পরি।

No comments:

Post a Comment