আমরা যারা আর্থিকভাবে মধ্যবিত্ত
আছি তাদের মোবাইল ফোন গুলি সাধারণত ১০ হাজার হতে ২৫ হাজার টাকা দামের মধ্যে হয়ে
থাকে। এই দামের মোবাইল গুলো সাধারণত ছয়
মাস এক বছর পর ইন্টারনেট ও অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহার করতে করতে স্লো হয়ে
যায়। মাঝে মাঝে টাচ স্ক্রিন এত স্লো কাজ করে তখন খুবই বিরক্তিকর হয়ে দাড়ায়। তখন
মনে হয় মোবাইলটি বাতিল হয়ে গেল। আর একটি কিনতে হবে কিনা। মোবাইল ফোন বেশীর
ভাগ লোকজনই সাধারণত দুই/তিন বছরের মধ্যে বদল করে। এটা নয় যে মোবাইল কাজের অনুপযোগী
থাকল। বরং রুচির পরিবর্তন। নিত্য নতুন প্রযুক্তির আগমন। ইত্যাদি কারণে অনেকেই মডেল
পরিবর্তন করে থাকেন। আমাকে একজন বলল, একটা বিষয় কি
খেয়াল করেছেন। আপনাকে মোবাইল ফোন দুই বছর পর পর কিনতে হবে। কারণ মোবাইল
কোম্পানী এমন সিস্টেম করেছে দেড়/দুই বছর ভাল চলার পর স্মার্ট ফোনগুলি স্লো হয়ে
যায়। মনমতো ব্যবহার করা যায় না। আমি তাকে বললাম ফ্যাক্টরি রিসেট করেছেন কি। তিনি
ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন না। আমি তাকে
বললাম। শব্দটি হল “ফ্যাক্টরি রিসেট”। অর্থাৎ আপনি ফ্যাক্টরি হতে যেভাবে কিনেছেন সেই
অবস্থায় আনা। সমস্ত নম্বর মুছে যাবে। সমস্ত বাড়তি অ্যাপ মুছে যাবে। ছবি মুছে যাবে। অন্যান্য তথ্য মুছে যাবে।
তবে যে সব তথ্য ক্লাউড বা অনলাইনে সিন্ক্রোনাইজ থাকবে তা পুনরায় ফেরত পাওয়া যাবে।
বর্তমানে আমরা মোবাইলে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ফেইস বুক ব্যবহার করি। এগুলোর অনেক ছবি মোবাইলের
মেমোরীতে জমতে থাকে। তদুপরি ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারও থাকে। এগুলো স্মার্ট
মোবাইলকে স্লো করে আনস্মার্ট করে ফেলে। তখন ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়ে পুরো
মোবাইলের অতিরিক্ত অ্যাপকে ঝেড়ে ফেলে দেয়া যায় এবং এভাবে স্মার্ট ফোনকে পুনরায়
কার্যোপযোগী করা যায়।
আমি স্মার্ট ফোন ব্যবহারের পর
থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আমার ব্যবহৃত মোবাইলে তিনবার ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়েছিলাম। প্রতিবারই
আমার জানাশোনা ফাইল ও অন্যান্য ডাটা আমি
ব্যাক আপ নিয়েছি। তারপরও কিছু কিছু ঝামেলায় পড়েছি। এর মধ্যে একবার পড়লাম
মোবাইল নম্বর হারানোর সমস্যায়। তারপর পড়লাম ছবি হারানোর সমস্যায়। সর্বশেষ যে
সমস্যাটা ছিল তা হল কিছু এসএমএস আমি নোট প্যাডে কপি করে রেখেছিলাম। যা কিনা
ফ্যাক্টরি রিসেট করার পর হারিয়ে ফেললাম। সেখানে একাউন্ট নম্বর ও অনন্য কিছু
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ছিল। তবে বেশী ক্ষতি হয়নি তবে পুনরায় যোগাড় করার বা কম্পোজ
করে নিতে হয়েছে। ছবি হারালে তা পুনরায় পাওয়া যায় না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা
মোবাইলে ছবি, ট্যাক্সট ও অন্যান্য যে কোন ডাটা রাখি না কেন তা ফ্যাক্টরি রিসেট করলে ব্যাক
আপ করতে অনেক সময় সতর্কতার পরও ভুল হতে পারে। এই ভুলে মূল্যবান ডাটা হারাতে পারে। এ ধরনের
ডাটা হারানো বন্ধ করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল সমস্ত ডাটা ক্লাউডে রাখা। কিভাবে
রাখা যায় তা আলোচনা করা যাক। সমস্ত কন্টাক্টগুলো গুগল কন্ট্রাক্ট লিস্টে রাখা
যায়। ছবিগুলো ড্রপবক্সে আপলোড করা যায়। যখনই কোন নতুন ছবি তোলা হবে তা সাথে
সাথে আপলোড হবে। ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে তা ইন্টারনেট কানেকশন যখনই পাবে
তখনই ছবি আপলোড শুরু করবে। ডকুমেন্ট ও নোটপ্যাডও গুগলে আপলোড করা যায়।
আর একটি বিষয় হল, আপনারা যারা ওয়াই ফাই ব্যবহার করছেন সে সমস্ত হটস্পটের ডাটা পুনরায় পাসওয়ার্ড
দিয়ে সেট করতে হবে। ওয়াই ফাই বা হট স্পটের পাসওয়ার্ড আমরা একবার দিলে অনেকদিন
পর্যন্ত আর দেয়ার প্রয়োজন পরে না। তাই মোবাইলে ফ্যাক্টরি রিসেট করার আগে ওয়াই
ফাইয়ের পাসওয়ার্ড যদি ব্যবহার হয় তার তালিকা করে রাখতে হবে। অন্যথায় পুনরায় ওয়াই ফাই
পাসওয়ার্ডের ঝক্কি ঝামেলায় পড়তে হবে।
আধুনিক সময়ে ক্লাউড একটা
শক্তিশালী মাধ্যম। যা কিনা ডাটা সুরক্ষা করে। যে কোন পরিস্থিতিতে মোবাইল ডাটা
ক্লাউডে রাখাটা অপরিহার্য্য। মোবাইল ফোনে ফ্যাক্টরি রিসেট করা বা হারিয়ে যাওয়ার পর
নতুন মোবাইল ক্রয় করলে সমস্ত ডাটা ক্লাউডে রাখলে আমরা রিসেট করা মোবাইলে বা নতুন
কেনা মোবাইলে আমাদের আগের মোবাইল ফোন সেটিঙের মত অভ্যস্ত সেটিংগুলো ফিরে পাব।
পরিশেষে বলতে পারি আমরা বছরে এক/দুইবার মোবাইল ফোনকে পূর্ণ কার্যোপযোগী করতে
ফ্যাক্টরি রিসেট দিতে পারি। সেই সাথে সমস্ত ডাটা ক্লাউডে রেখে ডাটা হারানো সমস্যা
থেকে মুক্ত থাকতে পারি।
No comments:
Post a Comment