Pages

Wednesday, June 27, 2018

কেমন বন্দী বন্দী লাগে


ক্যাডেট কলেজ ও বিএমএ সহ ৩৪ বছর ঢাকার বাইরে কাটা‌নোর পর আমি খু্ব আনন্দিত হলাম। রাজধানী‌তে আমি বদলী এসেছি। ২০১৭ সালের জুন মাসে ফ্যামিলিসহ ঢাকায় আসার চার মাস পর অক্টোবরে আমার স্ত্রীর কাছে ঢাকায় থাকার অনুভূতি জানতে চাইলাম। আমা‌কে অবাক ক‌রে দি‌য়ে স্ত্রী উত্তর দিল, ঢাকায় কেমন বন্দী বন্দী লাগছে। আমি সত্যি উত্তরে বিস্মিত হয়ে উত্তর দিলাম, বড় শহরে এসেছ। বাইরে যাওয়ার গাড়ী আছে। বিশাল ক্যাম্পাসে হাঁটার জায়গা আছে। তব‌ে বন্দী লাগবে কেন? স্ত্রী বলল, বাইরে যেতে মন চায়; সেজন্য অনেকদিনই বাইরে গেলাম। এখন আর বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না। কারণ বাইরে যাওয়ার চিন্তা হলেই মনে হয় ট্র্যাফিক জ্যামে বন্দী দশা
এই ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম থেকেই আমারও এই বন্দী ভাবনার রোগটা এসেছে। স্ত্রীর এই রোগ শোনার পর আমারও মনে হল আসলেই তো ঢাকার বাইরে ছোট ছোট শহরগুলোতে এত বন্দী বন্দী লাগত না। যেটায় ঢাকায় লাগছে। ৩৪ বছর ঢাকার বাইরে থেকে নিজেকে অ্যালিয়ন মনে হচ্ছে।
আমি আমার স্ত্রীর ঢাকা নি‌য়ে বন্দিত্বের বেশ অনুসন্ধান করলাম। আমি ফেইস বুক ও ইউটিউবে আরো কিছু মানুষের এ ধরনের অনভু‌তি জানলাম। তা জানার পর মনে হল, এই ধরনের অনুভূতি প্রতিনিয়ত প্রাপ্ত ট্রাফিক জ্যামের ট্রমা থেকে হ‌য়ে‌ছে। এটা দূর করার কোন ব্যবস্থা আছে কি? জটিল চিন্তা সন্দেহ নেই। আমি বিশেষজ্ঞ নই তবে আমার অনুভূতি থেকে উত্তরণের একটা রি‌মে‌ডি মনে হয় আছে। অনেকের হয়ত পছন্দ হবে না। তা হল হাঁটা। আমি ছোট ছোট কিছু শহরে চলাচলে একটা কাজ করতাম তা হল জ্যামে পড়লেই রিক্সা থেকে নেমে যাওয়া। ময়মনসিংহ শহরে রিক্সার বেশ জ্যাম বাঁধে। সেখানে রিক্সা থেকে নেমে পড়ার কাজ‌টি করতাম। কিছু টাকা হয়ত বেশী খরচ হল তবে সময় তো বাঁচল। এটা কম কিসে। এভাবে হাঁট‌তে হাঁট‌তে এমন অভ্যাস হ‌য়ে গিয়েছিল; প্রায়ই হেটেই  বাজা‌রে চলে যেতাম। ফেরার সময় বেশী বাজার থাকলে রিক্সায় চলে আসতাম।
ঢাকায় হাঁটাহা‌টি হয়ত করা যাবে, যদি অফিসটা কাছে থা‌কে। মার্কেটটা কাছে থা‌কে। অন্যথায় পরিবহন ছাড়া যাতায়াত সম্ভব নয়। শহরের বন্দী রোগ থেকে বাঁচানোর জন্য পৃথিবীর স্মার্ট সিটির পরিকল্পনায় প্রাইভেট গাড়ীমুক্ত রাখার পক্ষ‌ে মত দেয়া হচ্ছে। স্মার্ট সিটিতে ৫০০ গজ গুন ৫০০ গজ অথবা এক বর্গ ‌কি‌লোমিটার জায়গা বা কিছু সংখ্যক বাড়ী ঘর, দোকানপাট ও অফিস আদালত নি‌য়ে ক্লাস্টার তৈরি করা হয়। এই  ক্লাস্টারের মধ্যে সবাই হাঁটবে বা সাইক্যাল চালাবে। ইলেকট্রিক ছোট ছোট গাড়ীর মতন পড থাকবে কিন্তু কোন প্রাইভেট কার বা অন্য গাড়ী থাকবে না। প্রাইভেট কার থাকবে ক্লাস্টারের বাইরের অংশে এক সিটি হ‌তে অন্য সিটির মধ্যে প্রাইভেট কার ব্যবহার হবে। তবে এক এলাকা বা ক্লাস্টার হ‌তে অন্য এলাকায় যে‌তে গাড়ী ব্যাবহার চলতে পারে কিন্তু নিজ ক্লাস্টারের এলাকার মধ্যে কার বা গাড়ী নয়।
ঢাকা শহর‌কে আধুনিক করার জন্য শহরকে  ক্লাস্টার ভাগ কর‌তে হবে। গাড়ী রাখ‌তে হবে ক্লাস্টারের বাইরে। ক্লাস্টারে মধ্যে শুধু হাঁটা আর সাইক্যাল চালা‌নো যাবে। তবেই  শহরের সবাই সুস্থ থাকবে। ফিট থাকবে। নিজেদের বন্দী থাকার মত ট্রমা‌টিক অবস্থা মনে হবে না।
আবার অনেক সিটিতে এরূপ আছে, সমস্ত গাড়ী চলবে আণ্ডার গ্রাউন্ড বা ফ্লাইওভার দি‌য়ে। নিজের দালানের সামনে, স্কুলের সামনে বা অফিসের সামনের রাস্তা থাকবে হাঁটা ও সাইক্যাল চালা‌নোর জন্য। শহর‌কে গাড়ীমুক্ত কর‌তে পারলেই  শহর‌কে স্বাস্থ্যকর ও স্মার্ট বলা যাবে। ট্রাফিক জ্যাম থাকবে না। মানুষের শ্রমঘণ্টার অপচয় হ্রাস পাবে। তাই আর বেশী দেরী না ক‌রে ঢাকার বাইরে নতুন শহর ক‌রে যানবাহনমুক্ত স্মার্ট সিটি করা প্রয়োজন। আর ঢাকাকে প্রাইভেট গাড়ীমুক্ত ক্লাস্টারে ভাগ করা প্রয়োজন আর এভাবে দূর করা যাবে আমাদের বন্দী বন্দী ভাবনা।


No comments:

Post a Comment