Pages

Thursday, September 13, 2018

গামছা বনাম টাওয়েল


২০০৭ সালের ডিসেম্বরে সামরিক ট্রেনিং এর একটা অংশ হিসাবে দুইটি প্যাকে করে নিজের সমস্ত সামগ্রী বহন করে নিয়ে যেতে হবে। কাটাতে হবে ১৫ দিন। এই প্যাকটা আবার ২৫ কি:মি: বয়ে নিয়ে জংগলে নীচে স্থাপন করা গুপ্ত আশ্রয়ে কাটাতে হবে। আবার ২৫ কি:মি হেটে সেনানিবাসে একই প্যাক নিয়ে ফেরত আসতে হবে। মেজর র‍্যাংকে কোম্পানি কমান্ডার হিসাবে সৈন্যদের সাথে আছি। তাই নিজের ব্যাগ নিজে নেয়াটা সন্মানজনক। ব্যাগ বহন ওজন কম ও আরাম দায়ক করার জন্য সমস্ত সামগ্রী ওয়ান টাইম ও মিনি প্যাক টাইপ করে নিলাম। তোয়ালে বড়সড় হয়ে যায়। এটা প্যাকের জায়গা নষ্ট করে। আবার যদি কোন কারণে প্যাকটা ভিজে যায়, তবে ভিজা তোয়ালে প্যাকে ওজন বাড়িয়ে দিবে। কোন জায়গায় আছি হঠাৎ করে স্থান ত্যাগ করলে ভিজা টাওয়েল থাকলে প্যাকের ওজন বাড়বে। মাথায় তখন বুদ্ধি আসল, তোয়ালের পরিবর্তে গামছা হলে কেমন হয়। ঝটপট মাঝারী সাইজের ইউনিফরমের সাথে ম্যাচিং রং হয়, সবুজ রংয়ের দুইটি গামছা তোয়ালে (গামছা থেকে একটু পুরু কাপড়) কিনে ফেললাম। এখন দেখলাম দুইটি গামছা আমার একটি মাঝারী সাইজের তোয়ালে থেকে পাঁচ ভাগের একভাগ জায়গা কম লাগছে। ১৫ দিন আমি চমৎকার ছিলাম। গোছল করে গা মোছার পর চট করে গামছাটা ধুয়ে দিয়ে রোদে শুকাতে দিতাম। ৩০/৬০ মিনিটের মধ্যে গামছা শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হত। অনেক অনেক কমফোর্টেবল। যখনই গোসল করছি, তখনই শুকনো পরিষ্কার গামছা দিয়ে গা মুছে তা পুনরায় ধুয়ে ভাল করে নিংড়ে শুকোতে দিচ্ছি। কত সুবিধা। মূহুর্তেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পুনরায় আবার ধোয়া শুকনো গামছা ব্যবহার করতে পারছি । গামছা প্যাক করতে সমস্যা নেই। দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে প্যাক নিয়ে যখন যেখানে যাচ্ছি, তখন আর ভিজা তোয়ালের মত কোন টেনশন নাই। গামছা ভিজা থাকলেও একে প্রায় অতি টাইটভাবে নিংড়ানো যায়। একদম পানি শুকিয়ে ফেলা যায়। ওজনও কমে যায়। আমার এই গামছা টেকনিক হয়ত সেনাবাহিনীর অনেকেই ব্যবহার করে। আমি ১৫ দিন অনুশীলন শেষ করে বাসায় যাওয়ার পর একই ভাবে মনের অজান্তে দুইটি গামছা ব্যবহার করে চলেছি। হঠাৎ দশ/বার দিন পর খেয়াল হল, বাসায় এসেও আমি মোলায়েম ও সুন্দর তোয়ালে ব্যবহার করছি না। আমি গোসলের পরে আমার গামছাই ব্যবহার করছি আর ধোয়া কাপড়ের সাথে গামছাগুলো ওয়াশিং এর জন্য রেখে দিচ্ছি। আমরা ছোটবেলা হয়ত অনেক কিছু পরিবারের সাথে শেয়ার করতাম। গ্লাস, তোয়ালে, প্লট ইত্যাদি। যখন নিজের পরিবার হল; তখন ধীরে ধীরে অনেক পরিবারের মত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা গ্লাস, প্লেট ও টাওয়েল আলাদা করতে শিখলাম। এতে পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছোঁয়াচে রোগ গুলি কম ছড়ে। যেমন: পরিবারের এক সদস্যের স্কীন ডিজিজ আছে; একই টাওয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য সদস্যের মাঝে ছড়তে পারে। আবার কারো ভাইরাল ফিভার হয়েছে; একই গ্লাস প্লেট ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত অন্য সদস্যদেরও ছড়াতে পারে। স্বাস্থ্যকর দিক দিয়ে কিছু কিছু ক্লোজ কন্টাক্টের সামগ্রীগুলো ওয়ান টাইম বা ব্যক্তিগত হওয়াটা অতি প্রয়োজনীয়। পুনরায় গামছার আলোচনায় ফিরে আসি। সামরিক অনুশীলন শেষে দশ দিন গামছা ব্যবহারের পর যখন টের পেলাম; পুনরায় তোয়ালে ব্যবহারে ফিরে গেলাম। গোসল শেষে তোয়ালেটিকে ধোয়ার ঝুড়িতে রাখলাম। পরেরদিনও গোসল করে তোয়ালেটি ধোয়ার ঝুড়িতে রাখলাম। এভাবে চলছিল, তিন চারদিন পর দেখলাম; তোয়ালে শুকনো নাই। বৃষ্টি হওয়ার কারণে তোয়ালে রৌদ্রে দেয়া যায়নি। আর তোয়ালেও শুকায়নি। পুনরায় গামছা ব্যবহারে ফিরে গেলাম। এভাবে গামছা/তোয়ালে ব্যবহার করতে করতে হঠাত মনে হল আমি তো আগে সপ্তাহে একবার বা দুবার তোয়ালে ধুতে দিতাম। প্রতিদিন ধোয়ার জন্য দিতাম না। এরূপ মোটা তোয়ালে প্রতিদিন ধুতে দেয়াটা ভয়ংকর ব্যাপার। আবার প্রতিদিন তোয়ালে না ধুলে ব্যবহার করতেও পারছিলাম না। কেমন যেন একটা খচ খচ মনে হত। এভাবে মোটা তোয়ালে প্রতিদিন ধোয়ার পেরেশানি বাদ দেয়ার জন্য স্থায়ীভাবে গামছা ব্যবহারে ফিরে গেলাম। গামছা প্রতিটি বেলায় গোসলের পর ধোয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেও ফ্যানের নিচে ভাল করে নিংড়ে দিলে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রতিটি গোসলের পর ধোয়া ফ্রেশ টাওয়েল ছাড়া গা শুকাতে পারছি না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। এখন দুইটা গামছা আমার সাথে সবখানে যাচ্ছে। ফাইভ স্টার/ থ্রি স্টার যে কোন হোটেল হোক না কেন নিজের গামছাই আমার ভরসা। পরিশেষে বলব, প্রতিদিন তোয়ালে ধোয়া কষ্টকর। তাই তোয়ালে যত আরামের হোক না কেন হাইজেনিক ও গোসলের পর পরিষ্কার ভাবে গা মোছার জন্য দুইটি গামছা হতে পারে আমাদের চির সাথী। গামছা তোয়ালে থেকে অনেক বেশী হাইজেনিক। এই গামছাই আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক শ্রমিক দরিদ্র মানুষকে সুস্থ ও হাইজেনিক রাখছে।

No comments:

Post a Comment