বাংলাদেশের একজন ইউএনডিপি
প্রতিনিধির সাথে মন্ত্রণালয়ের একটা মিটিং এ পরিচিত হই। সে বিভিন্ন দেশের শান্তি
মিশনে কাজ করেছিল। আমার শান্তি মিশনে অভিজ্ঞতা থাকায় আমার সাথে তার বেশ গল্প জমে
যায়। তিনি বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ বছর যাবত আছেন। নাইজেরিয়ান অরিজিন আমেরিকান। আমাকে
এমন একটা কথা বলল, আমার গর্বে বুক ফুলে
গেল। সে বলল, তোমাদের বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের
আমি খুব পছন্দ করি। তারা যে দেশেই ক্যাম্প করে; কিচেন
গার্ডেন করে। তোমাদের অনেক শান্তিরক্ষী ক্যাম্পে গিয়ে আমি তোমাদের ক্যাম্পে
উৎপাদিত শাক সব্জি খেয়েছি। এমনকি তোমাদের ক্যাম্পের শাক সবজি উৎপাদন দেখে আফ্রিকার
স্থানীয় অলসরাও উজ্জীবিত হয়ে শাক সবজি উৎপাদন শুরু করেছে।
আমার প্রয়াত বাবা ৮৬ বছর বয়সে মারা
যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গ্রামের বাড়ীতে ও চাকুরীকালীন অবস্থায় সরকারী কোয়ার্টারের
আশে পাশে বাগান করতেন। তিনি টেলিভিশনে কৃষির কোন অনুষ্ঠান বাদ দিতেন না। তিনি তার
জীবনে খুব কমই শাক সবজি বাজার থেকে কিনেছেন। চাকুরীকালীন সময়ে তিনি গ্রামে গেলে
প্রায়ই মানুষকে কিচেন গার্ডেন ও গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করতেন। আমি তাই
জেনিটিক্যালি কৃষিকে খুব পছন্দ করি। টেলিভিশনের কৃষি অনুষ্ঠানগুলি আমার খুব প্রিয়
অনুষ্ঠান ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে কৃষি অনুষ্ঠান মনে করার ব্যবস্থা ও ঘড়িতে
অ্যালার্ম দেয়ার মত কাজ করতাম।
আজ কৃষি অনুষ্ঠান দেখা কত সহজ।
ইউটিউবে রয়েছে হাজার হাজার ভিডিও। নতুন পুরাতন অনেক অনেক কৃষির উপর টিভির অনুষ্ঠান
ইউটিউবে রয়েছে। সাইখ সিরাজের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অন্যতম একটি অনুষ্ঠান। তিনি দেশে
বিদেশে কৃষি বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন। সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। প্রবাসীর কাছে তার
কৃষির নানা বিষয় ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব চ্যানেলই কৃষির উপর অনেক অনেক অনুষ্ঠান
তৈরি করছে আর তার টিভিতে প্রচারের পাশাপাশি ইউটিউবে দিয়ে দিচ্ছে। এগুলোর অনেক অনেক
হিটও হচ্ছে। অনেকই জানেন কোন ইউটিউব চ্যানেল এক মিলিয়ন হিট হওয়ার পর থেকে প্রতি
হিটের জন্য তাই চ্যানেলগুলো টাকা পেতে থাকে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষের হিট দেখলে ধারনা
করা যায় তাদের উপার্জনও আছে অনেক।
“হৃদয়ে মাটি ও মানুষ” এর প্রতিটি ভিডিও কয়েক লক্ষ করে ভিউ হচ্ছে। এতে অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা কেমন তা
সহজেই বুঝা যায়। আমি খুব সহজেই একটা বিষয় বলতে চাই আর তা হল "হৃদয়ে মাটি ও
মানুষ" অনুষ্ঠানটি বিশাল একটি কৃষিপ্রেমী জনগোষ্ঠীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
সাইখ সিরাজ দেশে বিদেশে নানা কৃষি বিষয়ক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরে মূলত: সমাজকে
সবুজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করছেন। ছাদ বাগান কৃষি অনুষ্ঠানটি শহুরে মানুষের ছাদের
বাগানের ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়েছে। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের কৃষির সাথে সম্পৃক্ত
করে ভিন্ন ধর্মী একটি ধারা সৃষ্টি করেছেন। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে প্রবাসীদের সাথে
কৃষিতে কানেক্ট হয়ে এখন বাংলাদেশী কৃষি আন্তর্জাতিক সীমানায় গেছে। প্রবাসীদের
প্রতিবেশীরাও কৃষিতে অভীষ্ট হচ্ছে। এতে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশীদের কৃষির একটা চমৎকার
চক্র। প্রবাসীর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি অনুপ্রেরণা বিদেশীর মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আমি প্রথমে যা বলেছি, যেভাবে ইউএন-এ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর কিচেন গার্ডেনের সুনাম রয়েছে, তেমনি প্রবাসীদের বাংলাদেশীর কৃষিও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিদেশীরাও
প্রবাসী বাংলাদেশীদের বলা শুরু করবে, “বাংলাদেশী
গুড ইন এগ্রিকালচার” এবং “গুড ফাইটার
এগেনইস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ”।
বাংলাদেশী জাতির জন্য কৃষিটা আজ
বিশ্বব্যাপী অনেক গর্বের বিষয়। প্রেরণার বিষয়। হয়ত বাংলাদেশীরা সবুজ জাতি হিসাবে
আত্মপ্রকাশ করবে। আজ বাংলায় হাজার হাজার কৃষি ভিডিও ইউটিউবে দেখে মনে হয় কৃষির
একটা রেভুলেশন চলছে। এটা বিস্তৃতি লাভ করতেই থাকবে। তা থামবার নয়। আজ ইউটিউবে
কৃষির অনুষ্ঠানের হিট দেখলে বুঝা যায়, সকল
ঘরে ঘরে সবাই আধুনিক কৃষির সচেতনতা বাড়াতে পেরেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাত ধরে সবুজ
রেনেসাঁ আরো বেগবান হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।
No comments:
Post a Comment