Pages

Thursday, November 29, 2018

উত্তরাধিকারীদের জন্য চাকুরী ভাল না ব্যবসা


আমি আজ চাকুরী করছি। সরকারী চাকুরী। সন্তোষজনক বেতন ও সুযোগ সুবিধা। আমি যখন অবসর নিব। আমার সন্তানের কি হবে। তাকেও পড়তে হবে। চাকুরীর জন্য যুদ্ধ করতে হবে। আমার ছোট ভাই ব্যবসা করে তার সন্তানও পড়াশোনা করে। তার সন্তানও চাইলে ছোট ভাইয়ের ব্যবসাটি ধরতে পারে বা চাকুরী করতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত আমার সন্তানের মত দ্বারে দ্বারে চাকুরীর জন্য যেতে হবে না। কারন ব্যবসায়ী ছোট ভাইয়ের সন্তান যাই করুক উত্তরাধিকারী হিসাবে আয় নিশ্চিত। এটা হল ব্যবসায়ীদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তাহলে চাকুরীজীবীদের জীবনের নিরাপত্তা হয়ত ব্যবসা থেকে কিছু বেশী। ব্যবসা আজ ভাল, কাল মন্দ। সর্বদা একটা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যায়। তবে কষ্ট করে ব্যবসায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে ও ক্রমাগত ব্যবসাটি সময়ের সাথে উপযোগী করে নিতে পারলে জেনারেশনের পর জেনারেশন নিরাপদ হয়ে যায়। জেনারেশনকে আর চাকুরীর জন্য সময় ও যৌবনের মূল্যবান শক্তি নষ্ট করতে হয় না। একজন বিসিএস করা জাঁদরেল সচিবের ছেলে হয়তবা প্রাইভেট কোম্পানিতে ক্লার্ক আর অফিসার এর মাঝামাঝি এক্সিকিউটিভ নামের স্বঘোষিত অফিসার পদে চাকুরী করতে হচ্ছে। কিন্তু একটা কোম্পানির মালিকের যেন তেন ইন্টারমিডিয়েট বা গ্রাজুয়েশন করা ছেলে মেয়ে বাবার কোম্পানির এমডি বা ডাইরেক্টর হয়ে যাচ্ছে। একসময় জাঁদরেল চেয়ারম্যান হয়ে যাচ্ছে। এ এক চমৎকার কর্মসংস্থান। এ ধরনের কর্মসংস্থানের কাছে জাঁদরেল সচিব বা যে কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ফেল করে যাবে। অথচ সন্তান থাকলে তার প্রতিষ্ঠাতা সবচেয়ে জরুরী। চাকুরীতে যত জাঁদরেল লোকই হোক, যত বেতন পাক, সে ফেল করবে যেন তেন ব্যবসায়ীর কাছে। কারণ একটা সাধারণ ব্যবসায়ী জানে কিছু কাজ না পাক, তার উত্তরাধিকারীরা তার ব্যবসা ধরে অন্তত তার মত জীবন যাপন করতে পারবে। চিন্তা কম। সুযোগ বেশী। নিরাপদ বেশী। তাহলে আমাদের মত চাকুরীজীবীদের উপায় কি। একটা উপায় আছে প্রতিষ্ঠান তৈরী ও সন্তানদের সেখানে প্রতিষ্ঠা করা। অনেক সচিব বা চাকুরীদের সন্তানকে দেখেছি বাবার সহায়তায় নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এটা কিন্তু মন্দ ধারনা নয়। বরং এর মাধ্যমে জেনারেশনের পর জেনারেশনের কর্ম সংস্থান তৈরী করা যায়। যে কোন ভাবে চিন্তা করি না কেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই টেকসই ব্যবস্থা। ব্যবসায় অনেক রিস্ক ও অনেক উত্থান পতন আছে। যদি সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই শিখতে পারে তবে তা বড়ই কার্যকরী হবে।
প্রফেসর ইউনুস তাঁর অনেক অনেক লেকচারে বলেছেন মানুষ ক্রিয়েটিভ। তারা উদ্যোক্তা হওয়ার জিন নি‌য়ে জন্ম গ্রহণ ক‌রে। তাদের মাঝে ধী‌রে ধী‌রে সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতা তা‌কে দাসত্ব শিখায়। সমাজের বুদ্ধিমান মানুষ সমাজের কম অগ্রসরমান মানুষ‌কে দাসে পরিণত ক‌রে। তার সাথে যোগ হয় আর্থিক অবস্থান। এটা মানুষ‌কে দুর্বল ক‌রে ফেলে। মানুষ আর্থিক নিরাপত্তা পে‌তে সমাজের দাসত্ব মেনে নি‌তে থা‌কে। দাসত্বের ভদ্ররুপ হল চাকুরী। সুতরাং চাকুরীর নিরাপত্তা শুধু নিজের জীবদ্দশা পর্যন্ত। সন্তান‌দের নিরাপত্তা সে দি‌তে পা‌রে না। চাকুরের সন্তান চাকু‌রে হওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা তদবির কর‌তে থা‌কে। কখনও সফল হয়। কখনও সফল হয় না। হা‌তে গোনা অল্প কিছু চাকুরীজীবীর সন্তান হয়ত ব্যবসায়ী হয়। চাকুরীরা ব্যবসার অনিরাপদ কিন্তু স্বাধীন জীবন‌কে ভয় পায়। নিদিষ্ট ইনকাম তা‌দের কষ্টকর মনে হলেও মনে দেয় প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। ইচ্ছে হলে কাজ করব নয়ত করব না। বা এমন ব্যবস্থা করব যেন ঘুমিয়ে থাকলেও টাকা প্রাপ্তি হয় মূলত এটাই হল ব্যবসায়ীর কাজের ধরন।
পরিশেষে বলব, নিজের ভবিষ্যৎ বংশধর‌দের নিরাপত্তার জন্য ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান ও কোন কাজের স্কিল সন্তান‌দের মাঝে প্রসারিত করাটা অনেক প্রয়োজন।
একজন এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ ও অন্যান্য কারিগরি কাজে দক্ষ সে চাকুরী পেলেও কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার শখ ও দক্ষতার কাজ‌টি সর্বদা চালু রাখ‌তে পা‌রে এমনকি তার বংশধর‌দের জন্য সু‌যোগ সৃষ্টি করে রাখ‌তে পা‌রে যেন, তার পরের প্রজন্ম কোন স্ক‌িল, দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠান নি‌য়ে নিরাপদ হ‌তে পা‌রে। পরিশেষে বলব, চাকুরী নয়, উদ্যোক্তা হওয়াটাই সবচেয়ে ভাল পন্থা।

No comments:

Post a Comment