আজকাল নানা সরকারী অফিসে ছাদের
উপর এক গাদা কার্ড বোর্ড ও নানা লাইট ব্যবহার করে চলছে ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন।
এতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এগুলোর কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে? মোটেই নেই। সুন্দর ঝকঝকে ছাদ আছে। এটা পছন্দ হচ্ছে না। এক গাদা কাঠ ও বোর্ড
ব্যবহার করে দেয়া হচ্ছে ফলস সিলিং। যদি মূল সিলিং খারাপ থাকে বা টিনশেড স্থাপনা
হয়, তবে হয়ত ফলস সিলিংএর ব্যবহার মানা যায়। কিন্তু সুন্দর তকতকে সিলিং থাকতে
বাহারি লাইটিং করা ইত্যাদি কারণে ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন চলছে। মজার বিষয় খেয়াল
করবেন; অফিসের ইন্টোরিয়র ডেকোরেশনের পিছনে লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ কর্মচারীদের বসার জায়গা ও টয়লেট অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। আমার
কাছে মনে হয়, ইন্টোরিয়র ডেকোরেশনে এত এত টাকা পয়সা খরচ না করে সরকারী অফিসের
সাধারণ কর্মচারীদের টয়লেট, বসার স্থান ও কাজের পরিবেশ উন্নত
করাটা জরুরী। কনফারেন্স রুম ইন্টোরিয়র
ডেকোরেশন ছাড়া সাদামাটা, পরিষ্কার, ঝকঝকে ও পরিপাটি হলে ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন ছাড়াও সুন্দর লাগবে। আমি গ্যারান্টি
দিয়ে বলতে পারি, ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন ছাড়া
কনফারেন্স রুম আমাদের খারাপ আউটপুট দেবে না। পারফরমেন্স একই থাকবে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শো রুম, হোটেল রুম ইত্যাদিতে ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন চলতে পারে। কারণ সেটার প্রয়োজনীতা
ব্যবসায়িক। সরকারী স্থাপনার সেটা অপচয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার ট্যাক্স
পেয়ারদের কাছ থেকে আসে। সেটায় আউটপুট ছাড়া কেবল মাত্র দেখানোর জন্য এ ধরনের
কার্যক্রম ভয়ংকর অপচয়।
আজকাল চারিদিকে দেখা যায়; ইন্টোরিয়র ডেকোরেশনের একটা কালচার চলছে। সুন্দর ঝকঝকে টাইলেসের ফ্লোর।
কাঁচের জানালা দরজা। ছিমছাম ফাইল ক্যাবিনেট সবই প্রয়োজন। প্রয়োজন নেই মাথার উপর ফলস সিলিং এর ফলস খরচ। এটা অপচয়।
এটার খরচ দিয়ে অন্যান্য অনেক ওয়েল ফেয়ার করা যায়। সাধারণ কর্মচারীদের টয়লেট উন্নত
করা যায়। টয়লেটে স্যানিটারি আইটেম সরবরাহ করা যায়। হ্যান্ড ড্রাইয়ার সেট করা যায়।
অটোমেটিক পানির কল খোলা/বন্ধ করার যন্ত্রাংশ বসিয়ে পানির অপচয় রোধ করা যায়।
অনেক সময় ফলস সিলিং হল ঘরের শব্দের
ইকো দূর করে। এটার হয়ত প্রয়োজন আছে। তবে ইকো দূর করতে অফিস রুম বা কনফারেন্স
রুমের ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন অপচয় বই কিছু নয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানের ইন্টোরিয়র ডেকোরেশনের
বাজেট সরকারী অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে খরচ করা যায়। ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন
থেকে আরো কত কত অগ্রাধিকার কাজ আছে, তার তালিকা
তৈরি করতে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা হয়রান হয়ে যাবেন।
আমি সরকারী প্রতিষ্ঠানের ইন্টোরিয়র
ডেকোরেশনের কথা বলছি। এই জন্যে যে, এটা পাবলিক
মানি। এটা যেন তেন বা বিলাসী কাজে খরচ করা অনুচিত। তবে সরকারী হোটেল মোটেল বা
পর্যটনের নানা স্থাপনায় ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন চলতে পারে। কারণ এগুলো সরকারী
কিন্তু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য সরকারী শো রুম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিতে সীমিত আকারে ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন
করলে তা ভাল। তবে অতিরিক্ত বাজেট নিয়ে মাত্রারিক্ত করাটা আবার ঠিক হবে না।
এখন অনেকে বলবেন, দেশ মধ্য আয়ের দেশ। সরকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দর না হলে চলে। আমি বলল দেখতে
সুন্দর নয় বরং পরিচালন ব্যয় কমিয়ে সেবার মান বাড়ানোটাই হওয়া উচিত আসল লক্ষ্য।
দেশ ধনী হলেও ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন করার সুযোগ নাই। অগ্রাধিকার বিবেচনায় সব সময়
এত এত প্রয়োজনীয় ও সাধারণ কর্মচারীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকবে যে কেখনোই
আসলে অপচয় করার সুযোগ হবে না। বেশীর ভাগ ইন্টোরিয়র ডেকোরেশন দশ বছর পরই
পুনরায় খরচ করার প্রয়োজন হয়। অথচ রং করা
সুন্দর ছাদ কখনোই রং করা ছাড়া বড় ধরনের কোন বিনিয়োগ নাই। তাই সরকারী
অফিস গুলোর অপচয় রোধ করতে ইন্টোরিয়র ডেকোরেশনকে না বলা প্রয়োজন। ইন্টোরিয়র
ডেকোরেশন না করে সমস্ত কর্মচারীদের সুন্দর ব্যবস্থা দেয়াটাই হবে সম্পদের
মহামূল্যবান ব্যবহার। পরিশেষে বলব, উচ্চ পর্যায়ের
কর্তাদের বিবেকবোধই অপচয় দূর করতে পারবে।
No comments:
Post a Comment