Pages

Thursday, January 31, 2019

ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামের চিকিৎসা


আমার বাবা ২০১৮ সালের পহেলা মে মারা গেলেন গ্রাম থেকে ডাক্তার পর্যন্ত উনা‌কে নেয়া যায়নি। আমার বাবা ১৯৯১ সালে ৫৭ বছরে রিটায়ার করার পর দীর্ঘ ২৭ বছর গ্রামে কাটালেন। গ্রামের চিকিতসার জন্য তার ছিল গ্রামের ডাক্তার। সাথে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর।   ২৭ বছরে ওনা‌কে দুইবার অ্যাম্বুলেন্সে শহরের হাসপাতালে আন‌তে হয়। তৃতীয়বার হাসপাতালে আনার পথে মারা যান। হায়াত মওত আল্লাহর হা‌তে। এখনও মা গ্রামে আছেন। তা‌কে দেখ‌তে গ্রামে যাই। শহরের মানুষ রিটায়ার করার পর গ্রামে যাবে এটা সহজে হয় না। সবাই সন্তান‌দের সাথে ভাল যোগাযো‌গের জন্য শেষ বয়সে শহরে থাক‌তে চায়। চিকিৎসার জন্য শহরে থাক‌তে চায়। গ্রামে থাকার মূল চ্যালেঞ্জ হল চিকিৎসা ও ভাল রোড কা‌নেক‌টি‌ভি‌টি। বর্তমানে গ্রামের বাজা‌রে উন্নত জীবন ধারণ করার সব কিছু পাওয়া যায়। টি‌ভি ফ্রিজ এখন গ্রামের সব বাজা‌রে পাওয়া যায়। বাকী আইটেম বাদই দিলাম। মেশিনে তৈরি কফি গ্রামের সব বাজা‌রে আছে।
চিকিৎসা সেবায় গ্রাম আজও দুর্বল। কমিউনিটি ক্লি‌নিকগু‌লো খুবই ভাল কাজ করছে। তবে আরো অগ্রগতি প্রয়োজন। প্রতিটি গ্রামে একজন ক‌রে এম‌বি‌বিএস ডাক্তার সম‌য়ের দাবী। কমিউনিটি ক্লিনিকে মাঝে মাঝে উপজেলা থেকে ডাক্তার আসে তবে পো‌স্টেড নয়। এটা ঠিক না। পো‌স্টেড ডাক্তার অবশ্যই প্রয়োজন
আমি গ্রামে গেলে দেখি গ্রামের বাজার জমজমাট। স্কুলগু‌লো চলছে। কমিউনিটি ক্লি‌নিকগু‌লো চলছে। শহরের মত ব্যস্ত না হলেও কাজের মধ্যে সবাই আছে। গ্রামের বাতাস পরিষ্কার। ফল ফসলে ভেজাল কম। টাটকা। জীবন ধারণ শহরের মত জটিল নয়। মানুষে মানুষে যোগা‌যোগ ভাল। সবার শরীর স্বাস্থ্য ভাল। বিপদ একটাই, তা হল; দ্রুত চিকিৎসা। মোবাইল ও ইন্টারনেট তথ্যের অভাব ঘুচিয়েছে। তবে ডাক্তারের সরাসরি উপস্থিতির প্রয়োজন আছে। দেশের পল্লী চিকিৎসকরা আজও অনেক বড় অবদান রাখছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে মাঝে মাঝে উপজেলা বা শহর থেকে ডাক্তার আসার শিডিউল থা‌কে। উপজেলায় প্রা‌ধিকৃত ডাক্তাররা নানা প্রতিকূলতায় উপজেলায় বেশীর ভাগই থাক‌তে পা‌রে না। এই যখন বাস্তবতা, তখন গ্রামে অন্তত ২৪ ঘন্টা এম‌বি‌বিএস ডাক্তার প্রাপ্তির ব্যবস্থা কিভাল চিকিৎসা না থাকলে অনেকেই  গ্রামে থাকবে না। আমার জানা ম‌তে আমার কিছু আত্মীয় আছে যারা কুমিল্লা শহরে চাকুরী ক‌রে কিন্তু অফিস শেষে গ্রামে ফি‌রে আসে। এ ধরনের গ্রামমূখী মানুষ‌দের জন্য চিকিৎসা সেবাটা অনেক অনেক বেশী জরুরী।
গ্রামের রাস্তা ঘাঁটের জন্য যে কোন রোগী গ্রামের যে কোন প্রান্ত হ‌তে প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে উপজেলা শহরে নেয়া যায়। জ্যামের শহর ঢাকা‌তে একটা রোগী নিকটবর্তী হাসপাতালে আস‌তে কোথাও কোথাও এক ঘণ্টার উপর লেগে যায়। এখানে শহর আর গ্রামের পার্থক্য ঘুচেছে। সমস্যা হল রোগী আনা হল। ঠিক আছে। এখন উপজেলায় যদি সর্বদা ডাক্তার না থা‌কে তাহলেই বিপদ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যথেষ্ট ডাক্তার থাকলেও ২৪ ঘণ্টার উপস্থিতির ডাক্তার কম। রোগী আসলে জেলা শহরে নি‌তে হয়।
পুনরায় আমার মা‌য়ের বাস্তবতায় ফি‌রে আসি। বাবাকে সময়মত হাসপাতালে না নেয়ার ব্যথাটা আজও আছে। তাই মা‌কে নি‌য়ে অ্যাম্বুলেন্স ও নিকটবর্তী হাসপাতালের আগাম কিছু পরিকল্পনা ক‌রে রাখি। কাছাকাছি অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর ও ডাক্তারের নম্বরটা রাখাটা জরুরী। উপজেলা হাসপাতালে জরুরী রোগীর জন্য ডাক্তার পাব সেই বিশ্বাস আমার মত অনেকেরই নেই। তাই বেসরকারি ডাক্তার খোজার পালা। কোথায় পাই গ্রামে থাকা এম‌বি‌বিএস ডাক্তার। লোক লাগালাম। আমার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় পেয়ে গেলাম, ২৪ ঘণ্টা পরিবারসহ অবস্থানকারী এম‌বি‌বিএস ডাক্তার। আরো খুশী হলাম সপ্তা‌হে একদিন ক‌রে বিভিন্ন স্পেশালিষ্ট ডাক্তার আসেন। ভিশন হাসপাতাল একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের এম‌ডির সাথে কথা বললাম। শুনলাম চমৎকার উদ্যোগের কথা। এম‌ডি ভদ্রলোক সাইপ্রাস ছিলেন। অনেক বছর থাকার পর দেশে ফি‌রে আসেন। নিজের মত ব্যবসা শুরু করেন। উপজেলায় বাড়িঘর তৈরি করেন। উপজেলায় থাক‌তে থাক‌তে তার মনে হল, উপজেলায় সুপার মার্কেট হ‌য়ে‌ছে। আরো অনেক সেবা এসেছে। কিন্তু  ২৪ ঘণ্টা এম‌বি‌বিএস ডাক্তার নাই। সর্বক্ষ‌নিক এম‌বি‌বিএস ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ছোট আকা‌রে একটা হাসপাতাল করলেন আবার দেখলেন, ডাক্তারের শুধু থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলে হচ্ছে না বেতন ডাবল না দিলে গ্রামে থাকছে না। তাই করলেন। ডাক্তার রোগী পাক আর না পাক, বেতন শহরের প্রাইভেট হাসপাতালের চে‌য়ে ডাবল। কন্ডিশন একটাই ২৪ ঘণ্টা থাকবে। ছুটি গেলে ২৪ ঘণ্টার আর একজন এম‌বি‌বিএস ডাক্তার প্রতিস্থাপন ক‌রে যাবেন।
এই  মহতী কাজের জন্য আমার এলাকার সেই উদ্যোক্তার জন্য আমি গর্ব‌িত।
আমার কাছে মনে হয় শহর থেকে ডাবল বেতন দি‌য়ে একই ভাবে গ্রামে গ্রামে এম‌বি‌বিএস ডাক্তার নিয়োগ দেয়ার মত সামর্থ্য অনেক গ্রামের অনেক সম্পদশালী ব্যক্তিদের আছে। অথবা চাঁদা দি‌য়ে সমবায়ের মাধ্যমে গ্রামের লোক‌েরা এম‌বি‌বিএস ডাক্তারের ব্যবস্থা কর‌তে পারেন।

No comments:

Post a Comment