একশতে পাশ মার্ক ২০ আজব শুনাবে বিষয়টা। সেদিন বন্ধুদের
গ্রুপে আমার সাথে তুমুল বিতর্ক হচ্ছিল। সেটা হল ৩৩% পাশ মার্ক নিয়ে আলোচনা। এই পাশ মার্কটা কেন
৩৩ হল কেন ৩০ নয় কেন ৪০ নয়। কারণ হিসাবে জানা গেল ব্রিটিশ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশ মার্ক ছিল নাকি ৬৫%। ব্রিটিশ শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করে
দেখল ভারতের মানুষগুলো দেহের আকারে অর্ধেক, মগজও অর্ধেক হবে। পশ্চাৎপদ
জনপদ। পাশ মার্ক অর্ধেক করে দিল ৩২.৫ মার্ক। অনেকদিন এই নম্বর চলছিল। তারপর মনে
করা হল এই নম্বর ৩২.৫ না রেখে পূর্নাংগ
সংখ্যা ৩৩ করা সুবিধাজনক। তারপর থেকে চলছে সেই ৩৩ নম্বর। অনেকে বলছে পাশ মার্ক দশকে
রাউন্ড আপ হয়ে ৪০ বা ৫০ হতে পারে। হয়তবা কোন কোন প্রতিষ্ঠান তা করেছে।
আমার প্রশ্ন আমরা বাড়াব না কমাব। কোনটা ভাল হবে। তার আগে
আসুন শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র দেখি। দেশে এখনও লক্ষ লক্ষ ছাত্র ফেল করে বার
বার পরীক্ষা দেয়। এটা বন্ধ করতে হবে। পাশটা সহজ করতে হবে। এখন আসি পড়াশোনার
এই প্রান্তিকে যুদ্ধের কথা। আমরা কত এসএসসি
ফেল, এইচএসসি ফেল ও বিএ ফেল রাখব।
ফেল যত কমানো যায় সমাজের প্রতিযোগীতা তত কমবে। মানসিক চাপ তত কমবে। সহজ পড়া
সহজ পাশ মানুষকে আরো সৃজনশীল করবে। এখন পিতা মাতা এক ক্লাস থেকে উপরের ক্লাসে
তুলতে চিন্তায় থাকে। যখন পাশ মার্ক কমে যাবে পেরেন্টস আর চিন্তায় থাকবে না। পাশ
করা নিয়ে টিউশন ও কোচিং বাণিজ্য কমে যাবে। যারা অনেক অনেক ভাল রেজাল্ট করতে
চায় তারা তখন কোচিং করবে। টাকা খরচ করতে থাকবে। যদি পাশ মার্ক ২০ হয় তবে পাশ মার্ক তুলতে টিচারদের ভয়ভীতি ও
জোর করে ফেল করানোটা কমবে। পাশ নিয়ে চিন্তা নাই বলে কোচিং বাণিজ্য অনেক কমে
যাবে। গরীব বাবা মা মুক্তি পাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বস্থি আসবে। ছাত্র/ছাত্রীরা
পাশ নিয়ে চিন্তা না করে সৃজনশীল চিন্তা করবে। পড়াশোনাকে হৃদয়গ্রাহী করে
গ্রহণ করবে। টেনশন ছাড়া মুক্ত মনে পড়াশোনা করবে। অনেক দেশেই পঞ্চম শ্রেণী
পর্যন্ত বাচ্চাদের কোন পরীক্ষা নেই। পরীক্ষা-মুক্ত দেশের বাচ্চারা বরং
পরীক্ষাযুক্ত দেশ হতে এগিয়ে আছে। আমার জানা মতে অনেক সংস্থায় পরীক্ষাবিহীন
পদ্ধতিতে মাস্টার্স পাশ দেয়া হয়। তাদের অ্যাসেসমেন্ট হয় প্রেজেন্টশান ও
অ্যাসাইনমেন্ট ও ব্যবহারিক কাজের উপর ভিত্তি করে। উপরের ডিগ্রীর এই হাল হলে ২০
পাশ নম্বর হলে ক্ষতি কি? কিছু সংখ্যক জ্ঞানপাপী মানুষ
পড়াশোনাটাকে বাণিজ্য করে ফেলেছে। তারা পাশ নম্বর বাড়িয়ে পড়াশোনাটা
স্বতঃস্ফূর্ত না রেখে সবসময় বাণিজ্য করতে চায়।
পাশ মার্ক ২০ করলে
বেকার কমবে। কারণ যারা ২০/৩০ নম্বর পেয়ে পাশ করবে তারা সরকারী বা দামী চাকুরী না
খোজে নিজে নিজে কাজের উদ্যোগ নিবে। সেই
সাথে পাশ কারার কারণে তারা নিজেরা
হীনমন্যতায় ভোগবে না।
মেয়েদের বিয়ের সমস্যাটা দূর হবে হবে। দেশে এখন ছেলেদের চেয়ে
মেয়েরা বেশী শিক্ষিত হচ্ছে। মেয়েরা পরীক্ষায় বেশী পাশ করছে। ফলে অনেক উচ্চ
শিক্ষিত মেয়ে শিক্ষিত পাত্র পাচ্ছে না। মাস্টার্স পাশ মেয়ে আইএ পাশ ছেলেকে বিয়ে
করেতে পারছে না সামাজিক কারণে। ২০% পাশ মার্ক করলে ছেলেদের পাশের পরিমাণ বাড়বে।
ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তার মত সক্ষম শিক্ষিত পাত্রের সংখ্যা বাড়বে। পাশ মার্ক বেশী
হলে পাশ করার জন্য প্রশ্ন ফাঁস ও নানা জালিয়াতি কমবে। বেকার কমে যাওয়ার কারণে সবাই
কাজ করে জীবন যাপন করবে। অসুস্থ প্রতিযোগীতা কমে যাবে। দেশে দুর্নীতি কমে যাবে।
স্কুল কলেজে সহজে পাশ করার কারণে শিক্ষাজীবনে শেখার আগ্রহ বাড়বে। প্রতিযোগীতা
কমে যাবে। ফলে দুনীতি কমে সার্বিকভাবে ভাল একটা অবস্থার সৃষ্টি হবে।
আমি জানি, অনেক জ্ঞান পাপী শিক্ষিতরা আমার এই লেখার তীব্র নিন্দা
করবেন। আমি বলব বুকে হাত দিয়ে কল্পনা করুন, এটা হলে কত মানুষের স্বস্তি আসবে।
সমাজে নানা অনাচার দুর হবে।
No comments:
Post a Comment