Pages

Wednesday, February 27, 2019

বাস রে‌পিড ট্রানজিট বনাম ট্রেন

বাস রে‌পিড ট্রানজিট বা বিআরটি স্থাপন‌ে প্রাথমিক খরচ রেল থেকে সাশ্রয়ী। বিআর‌টি রাস্তা তৈরিতে কি‌লো‌মিটার প্রতি খরচ ৬৪ কোটি টাকা। মে‌ট্রো, পাতাল বা স্কাই রেলে কম বেশী প্রতি কি‌লো‌মিটারে খরচ ৮০০ কোটি টাকার মত। দেখা যাচ্ছ‌ে  কি‌লো‌মিটার প্রতি বিআর‌টি থেকে প্রায় ১২ গুন খরচ বেশী। যে টাকায় ১০০ কি:‌মি: মে‌ট্রো রেলের রাস্তা বানা‌নো যায় সম টাকায় ১২০০ কি: মি: বিআর‌টি বানা‌নো যাবে। বিআর‌টি রাস্তা পুরোটা পাকা করার প্র‌য়োজন নেই  শুধুমাত্র চাকা বরাবর পাকা ক‌রে আরো খরচ সেইভ করা যায়। মনে করুন ঢাকা থেকে কুমিল্লা ১০ মিনিট পর পর বাস যায়। এখন ঢাকা কুমিল্লার ৮৫ কি:‌মি: যে‌তে ৩/৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাই ঢাকা কুমিল্লার জন্য আলাদা আসা যাওয়ার লাইন বসিয়ে ৩/৪ মিনিট অন্তর সরু রাস্তা দি‌য়ে বাস চালা‌নো সম্ভব। যা কিনা বড় বড় দুই, তিন বা চার‌টি বাস জোড়া দি‌য়ে এক‌টি ইঞ্জিন দি‌য়ে   বাস তৈরি করা যায়। তবে বাস গুলির বৈশিষ্ট্য হল বড় দরজা দ্রুত নামা উঠা করা যায়। টিকেট প্রি‌পেইড কার্ড‌ের মাধ্যমে দ্রুত প‌রি‌শো‌ধের ব্যবস্থা। ফলে আধা কি‌লো‌মিটার দূরে দূরে থামলেও প্রতি স্টেশনে যাত্রীরা দ্রুত নামা উঠার কারণে প্রতি স্টেশনে ১/২ মিনিটের বেশী থাম‌তে হচ্ছে না। এমনকি ৩০/৪০ সেকেন্ডও নামা উঠা সম্ভব। লোকাল বাসের মত স্থানে স্থানে ৫/১০ মিনিট অপেক্ষা কারার প্র‌য়োজন হয় না বলে ঘন ঘন অল্প সম‌য়ের জন্য থামলে যাত্রী‌দের জন্য অত‌বেশী কষ্টকর, ক্লান্তিকর ও  বিরক্তিকর মনে হয় না। পুরো প্রক্রিয়া খুব দ্রুত। যারা বাই সাইকেল নি‌য়ে বাসে উঠবে তা‌দের জন্য গাড়ীর সামনে বা পিছনে বাইসাইকেল বহন করার ব্যবস্থা আছে। কেউ হয়ত বাসা থেকে বাইসাইকেল নি‌য়ে বাসে উঠল। বাস থেকে নেমে পরবর্তী কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাইসাইকেল নামিয়ে নিলে। বাইসাইকেল বহন করার ব্যবস্থা‌টিও আধুনিক। হুইল চেয়ারে যারা আরোহী আছেন তা‌দের জন্য সুবিধাজনক কারণ বড় বাস ও বড় দরজা। প্লাটফরমের সাথে লেভেল বা রে‌মের ব্যবস্থা থাকবে। একটা দেশের মে‌ট্রো ট্রেন বা অন্য কোন লাইট ট্রেন‌কে তখনই মূলত: আমরা পরিবেশ বান্ধব বল‌তে পারি যখন তা বৈদ্যুতিক ট্রেন হয়। আর সেই বিদ্যুৎ যদি সৌর থেকে আসে। তবে তা সম্পূর্ণ ভাবে দূষণ ফ্রি। আমা‌দের অল্প দূরত্বে যেমন ঢাকার আসে পাশের জেলা শহরগু‌লি যোগা‌যোগটা ট্রেনে করার আগে হ‌তে পা‌রে বিআর‌টি এর মাধ্যমে। কারণ ট্রেন থেকে প্রায় দশ ভাগের একভাগ খরচে বিআর‌টি করা যায়। ঢাকার গাজীপুর হতে উত্তরা আবার উত্তরার হ‌তে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআর‌টি চালুর কার্যক্রম চলছে। ঢাকার আশে পাশে অল্প দিনে ও অল্প খরচে বিআর‌টি চালু করা যায়। বিআর‌টি চালু করার জন্য যে কোন বাস বা দোতালা বাস দি‌য়ে চালু করা যায়। বাসের দরজাগু‌লি ‌অটোমে‌টিক ও বড় কর‌তে হবে। রাস্তা পুরো আট দশ‌ ফিট পাকা করার প্র‌য়োজন নেই। চাকা বরাবর ব্লক বসিয়ে গেলেও বাস চল‌তে পারবে। ইন্টারনেটে ও ইউটিউবে স্টাডি করলে দেখা যাবে কেবল চাকা বরাবর পাকা অংশ দি‌য়ে বাস চলছে মাঝ বরাবর সবুজ ঘাস বিদ্যমান। আসলে বিআর‌টি লাইন প্রক্রিয়াটি বেশ চমৎকার ও সাশ্রয়ী। সকল দেশে সমস্ত ট্রাফিক সিগনালে বিআর‌টি প্রা‌য়ো‌রি‌টি দেয়া হয়।
আমরা যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ট্রাফিক জ্যামযুক্ত রাস্তা চিন্তা করি তবে ঢাকা আশে পাশে জেলাগু‌লো থেকে বেশী মানুষ ঢাকা‌তে আসে। সে সমস্ত সকল জেলা বিআর‌টি দিয়ে চালু করলে সাধারণ বাহনের উপর চাপ কমবে। একটা বিআর‌টি নব্বইটি  প্রাইভেটকা‌রের যযাত্রী বহন কর‌তে পা‌রে। তাই দুই‌টি লেন বিআর‌টি জন্য রেখে দিলে কি পরিমাণ ট্রাফিক কমে আস‌বে তা সহজেই  অনুমান করা যায়। বাস রে‌পিড ট্রান্স‌পোর্ট সারা পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় হ‌য়ে‌ছে। কারণ এটা ট্রেন থেকে সাশ্রয়ী। অনেক দেশে প্রতিটি স্টেশনে আটোমে‌টিক চার্জ‌িং স্টেশন স্থাপন ক‌রে বিআর‌টি সিস্টেমকে পরিবেশ বান্ধব ও বিদ্যুৎ চালিত ব্যবস্থাও করা সম্ভব হ‌য়ে‌ছে। আমরা কোন শহরে প্রথমে কম খরচে রেল না চালু ক‌রে বিআর‌টি চালু কর‌তে পারি। তারপর তা বৈদ্যুতিক বাসে রূপান্তর কর‌তে পারি। তারপর ধী‌রে ধী‌রে ইলেকট্রিক ট্রেনে যে‌তে পারি। ইলেকট্রিক ট্রেন‌ে প্রাথমিক খরচ বেশী হলেও দীর্ঘদিন কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমে যায় বলে পৃথিবীব্যাপী মে‌ট্রো রেলের চাহিদা বিদ্যমান। কম খরচে দ্রুত চালু করার জন্য বিআর‌টি ভাল অপশন। তবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশী ও ঘন ঘন প্র‌য়োজন। বাসের রাবারের চাকা ট্রেনের লোহার চাকা হ‌তে দ্রুত পরিবর্তনের প্র‌য়োজন হয়। পরিশেষে বলব কোন দেশের ট্রাফিক সমস্যার দ্রুত সমাধানে বিআর‌টি বিশাল অবদান রাখছে তা আজ প্রমাণিত। তাই বাংলাদেশের ঢাকার সাথে নিকটবর্তী জেলাসমূ‌হের সাথে বিআর‌টি লাইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্র‌য়োজন।

No comments:

Post a Comment