আপনার একটা বাড়ী আছে। ছাদ আছে।
গাড়ী আছে। কিন্তু শাক সবজির বাগান নাই। আমি বলব, আপনি আপনার গাড়ীটা বিক্রি করে তার অর্ধেক দামে গাড়ী কিনুন। গাড়ীর বাকী অর্ধেক
টাকা কোথাও বিনিয়োগ করুন। সেই আয় দিয়ে
একটা মালী রাখুন। শাকসবজির বাগান করুন। আপনার চকচকে গাড়ী আপনার ইজ্জত বাড়ালেও আয়ু
বাড়াতে পারবে না। হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। তবু আমরা ভেজালমুক্ত খাওয়া ও বিষমুক্ত
শাক সবজির জন্য অন্তত চেষ্টা চালাতে পারি। আমরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না।
এই পৃথিবীর সবাই যার যার লাভ লোকশান নিয়ে ব্যস্ত। দরিদ্র কৃষক
আপনার জন্য অধিক খরচ করে বিষমুক্ত শাক সবজি উৎপাদন করবে না। কারণ তার নিজেরই চলছে
না। আপনার জন্য অধিক খরচ করে কৃষি সে করবে না। আপনি বেশী দাম দিয়ে ভেজালমুক্ত খেতে
চাইলেও সবাই যে খাবে তার কোন গ্যারান্টি নাই। আপনি বেশী মূল্য দিয়ে আপনার খাবার
চাইলেও আপনি বিষমুক্ত পাবেন না। আপনাকে নিজেই উৎপাদন করতে হবে। আজকাল চাষ করতে মাটি লাগে না। ককো পিট, কম্পোস্ট ও ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে মাটি ছাড়া বা অল্প মাটি দিয়েও ছাদে
বারান্দা ও কার্নিশে চাষাবাদ করা যায়। টবে, কাটা ড্রামে, রেইজ বেড তৈরি করে, ছাদের উপর পাকা রেইজ বেড করেও
চাষাবাদ করা যায়। ইচ্ছেটা প্রয়োজন। যারা ডায়বেটিস, কিডনি, ক্যান্সার ইত্যাদিতে আক্রান্ত তারা
বাইরের বিষাক্ত শাকসবজি বর্জন করতে পারেন। বৃদ্ধ ও বাচ্চারা নিজেদের উৎপাদিত বিষমুক্ত
শাকসবজি খাওয়ানোটা সবচেয়ে ভাল। আধুনিককালে হাইপোফোনিক কালচারের মাধ্যমে মাছ চাষ
করে মাছের পানি গাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেও চাষাবাদ করা যায়। আপনার আর্থিক
অবস্থা ভাল। আপনি যদি বেশীদিন বেঁচে অর্থকে উপভোগ করতে চান তবে অন্য সৌখিন
খরচ কমিয়ে মালী রেখে ছাদ কৃষি বা আঙ্গিনা কৃষি শুরু করে দিন। নিশ্চিতভাবে বলা যায়
অন্যদের চেয়ে বেশী লাভবান হবেন।
যারা আর্থিক ভাবে সবল আছে; ছাদ আছে।
তারা ছাদ কৃষির জন্য তৃতীয় পক্ষকে নিয়োগ দিতে পারেন। তারা ছাদ কৃষির শুরুটা
আপনাকে করে দিবে। দিনে দিনে ঢাকাতে এ ধরনের উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। এখন ফেইসবুক
আর ইন্টারনেটে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন। এত সহজ কৃষি। তাহলে আর দেরী কেন। আমরা আমাদের
মুখের খাবারগুলি ভেজাল আর বিষের উপর দিয়ে পার করতে পারি না। তার জন্য খরচ বেশী
হবে। বেশী খরচে বিষমুক্ত খাবার খাওয়াটা বেশী জরুরী। প্রয়োজনে আমরা দামী কাপড়
চোপড় কম কিনব। ঘোরাঘুরি কমিয়ে খরচ বাঁচাব। সৌখিনতায় খরচ বাঁচাব। তাও আমাদের
নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করাটা জরুরী। প্রয়োজনে
আমাদের আশে পাশে অনেকই কিডনি ডায়ালাইসিস ও নানা জটিল রোগী লক্ষ লক্ষ টাকা
খরচ করে অথচ সেই টাকা আমরা আগে থেকেই বিষমুক্ত
খাবারের জন্য ব্যয় করতে পারি। ছাদ বাগান লাভজনক নয় সেটা থেকে স্বাস্থ্য রক্ষা বেশী
জরুরী তাই ছাদে শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদনে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ দালান কোটার
ছাদ বিদ্যমান আমার ধারনা সে সব ছাদে চাষ করলে দেশের প্রায় ৫০% খাবার উৎপাদন হবে। বিষমুক্ত খাবার হবে। আজ কোন
ফসলে বা কৃষিপণ্যের খাদ্য শস্যে কোন স্বাদ নেই। তার একমাত্র কারণ বিষযুক্ত খাবার।
নিজের জমির বাঁকা, তেরা, ছোট,
বড় ও পোকায় ধরা শাকসবজি বাজারে কেনা টসটসে সবজি থেকে অনেক ভাল কারণ নিজেরটায়
বিষ নাই। আমার সবজী আমি ফলাব আর বিষমুক্ত জীবন গরব এটা হতে পারে আদের শ্লোগান।
বাকীটা হবে আমাদের ইচ্ছে। শহরের সবাই যদি ছাদ বাগান করে নিশ্চিতভাবে বলা যায়
প্রায় ২০% বিষমুক্ত শাকসবজি শহরেই উৎপাদন করা
সম্ভব। আমরা কিছু না পারি সালাদ আইটেম যা আমরা কাচা খাই যেমন লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, টমেটো, শসা ও মরিচ ইত্যাদিও যদি আমরা টবে ফলাই তাতেও স্বাস্থ্য খাতে বিশাল উপকার হবে।
আমাদের দেশের শহরের প্রতিটি ছাদ যদি সবুজে আবৃত থাকে তবে এটাও নিশ্চিত কয়েক
ডিগ্রি তাপ কমে যাবে। বাতাসের অক্সিজেন বেড়ে যাবে। এত এত উপকার থাকতে আর আমাদের
সামর্থ্য থাকতে ছাদ বাগান না করাটা হল একটা অপরাধ। নিজের সামর্থ্য থাকলে নিজ, স্ত্রী ও সন্তানদের বিষাক্ত খাবার থেকে রক্ষা করতে নিজের ফসল নিজে উৎপাদন না
করে আর কোন উপায় নেই। আসুন সামান্য সামর্থ্য থাকলেও আমরা নিজের শাকসবজি নিজে উৎপাদন
করি।
No comments:
Post a Comment