সেদিন গ্রামের বাড়ীতে গেলাম। ঢাকা থেকে বাসে এসে কুমিল্লার
শাশনগাছা নামক স্থানে বাস থেকে নামলাম। সাথেই সিএনজি স্ট্যান্ড । আমাকে সিএনজিওয়ালা
জিঞ্জাসা করল, কোথায় যাবেন।
বললাম, ব্রাম্মনপাড়া। ‘সিএনজি রিজার্ভ নিবেন’। মানা করলাম। আমাদের দুইজনের জন্য পিছনের
তিনসিট রিজার্ভ চলেন। তারপর সিএনজি নিয়ে গ্রামের রাস্তায় প্রথমে বুড়িচং উপজেলা
তারপর ব্রাম্মনপাড়া উপজেলা। নামলাম ব্রাম্মনপাড়ায়। আবার সিএনজি নিতে হবে। যেতে
হবে বিশ মিনিট “চানলা টানা
ব্রিজ”। চানলা টানা
ব্রিজে নেমে নিতে হবে রিক্সা। আবার ২০ মিনিট ধরে ভাংগা রাস্তা। তারপর
মন্দভাগ বাজারের পাশে দেউস সাহেব বাড়ী। আগে কুমিল্লা থেকে বাসে
ব্রাম্মনপাড়া আসতাম। বেবীটেক্সি ছিল। ১৯৯৫ সালে বাস ভাড়া মাথাপিছু
পাঁচ টাকা বেবিটেক্সি ভাড়া ২৫ টাকা। এখন বাস ভাড়া ৩০ টাকা। সিএনজি মাথাপিছু
ভাড়া ৫০ টাকা। সিএনজি যায় মিনিটে মিনিটে। বাস ভর্তি হতে লাগে ৩০ মিনিট। আর
জায়গায় জায়গায় থামা তো আছেই। এখন বাসও কম। বাসের যাত্রীও কম। সিএনজি রয়েছে
শত শত। সমস্যা একটাই রাস্তাগুলো বড় করা প্রয়োজন। পরিবেশবাদীরা বলবেন, বাস বেশী থাকা পরিবেশের জন্য ভাল। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে অধিক সিএনজি। অধিক কর্মসংস্থান।
অধিক রিক্সা। অধিক কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে আমাদের দেশে
সিএনজি বা রিক্সা কমানো নয় বরং রাস্তা ঠিক করতে হবে। বড় করতে হবে।
অনেক দেশে প্রতি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য গাড়ী রয়েছে।
আমাদের দেশে প্রতিটি সদস্যের জন্য গাড়ী নয় প্রয়োজন অধিক সংখ্যক ছোট সিএনজি
জাতীয় গাড়ী। চার চাকা হলে আরো ভাল। ব্যাটারীর গাড়ীর ভাড়াটা খারাপ নয়। আজ
ব্যাটারীর রিক্সার ব্যাটারী বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ করা হলেও আগামীকাল সোলারের
চার্জ করার একটা প্রক্রিয়ায় যাওয়ার
সুযোগ তৈরী
থাকবে। কোন দেশের প্রতিটি মানুষ গাড়ীর মালিক হওয়া বা চালনা আমি বলব, পরিবেশের জন্য ভাল না। কার শেয়ারিং, সিএনজি ও মটর সাইকেল রাইড শেয়ারিং এগুলো
পরিবেশের জন্য ভাল অপশন। ট্রেন ও বাস পরিবেশ বান্ধব। এগুলো খুব ভাল অপশন
কিন্তু জেলা থেকে উপজেলা কানেকশনের জন্য ভাল নয় কারন যাত্রী পূর্ণ করতে বেশী
সময় লাগে। রিক্সার দুই যাত্রী আর সিএনজির পাঁচ যাত্রী পেতে তেমন কোন সময়ই লাগে
না। তাই রিক্সা ও সিএনজি শেয়ারিং অনেক অনেক গতিশীল। কংগোর রাস্তাগুলো ভাল
নয়। সেখানে দেখতাম ব্যাপক হারে মটর সাইকেল রাইড নাম হল “বুডা বুডা”। সেখানে গ্রামে গঞ্জে ও শহরে বিপুল
মানুষের কর্মসংস্থান করেছে এই “বুডা বুডা”। একবার তো দেখলাম মটর সাইকেলে ডেড বডি
ক্যারি করতে। বাংলাদেশের গ্রামের রাস্তাগুলি এখন ধীরে ধীরে প্রয়োজন মাফিক
আরো প্রশস্ত হচ্ছে। রাস্তাগুলো আরো দ্রুত প্রশস্ত করা প্রয়োজন। খরচ বেশী
গেলেও গ্রামের রাস্তা ঢালাই করে করা প্রয়োজন। ঢালাই রাস্তা তৈরীর সামগ্রী
গ্রামে খুবই সহজলভ্য। ইট ভাংগা, বালি, রড ও সিমেন্ট
হলেই ইটের রাস্তা হয়ে যায়। এর বিপরীতে বিটুমিন রাস্তার জন্য বিটুমিন যোগাড়
করা; সেগুলো
জ্বাল দিয়ে গলানো, রোলার
লাগানো এই ধরনের কাজ থেকে সিমেন্টের রাস্তা
খরচ বেশী হলেও যখন তখন যেন তেন ভাবে করা যায়। তাই আমাদের দেশে গ্রামে গ্রামে বিটুমিন নয় সিমেন্টের রাস্তা করাটা বেশ জরুরী।
বাংলাদেশের বাজারে এখন বেশ কয়েকটি কোম্পানী এখন ব্যাটারীর
মটর সাইকেল চালু করেছে। রাইড শেয়ারিংএর জন্য এগুলো অনেক অনেক ভাল। ঢাকার
রাস্তায় রাইড শেয়ারিং চালু হলেও গ্রামের রাস্তায় চালু করাটা জরুরী।
গ্রামে ব্যাটারীর রিক্সা বেশ গতিতে চলে। শহরের আমরা যারা আছি। আমাদের কাছে
মাঝে মাঝে সে সব ব্যাটারীর রিক্সার গতিটা ভয়াবহ মনে হবে। কিন্তু গ্রামের
মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। গ্রামে এখন প্যাডেল রিক্সায় কেউ উঠে না। গ্রামেও শহরের মত গতি এসেছে।
সবাই ছুটছে। পিছে তাকানোর সময় বা সুযোগ নেই। গতি গতি। সেই গতিতে সিংগেল যাত্রীর জন্য মটর সাইকেল রাইড। দুই যাত্রীর জন্য
ব্যাটারী রিক্সা রাইড। পাঁচ যাত্রীর জন্য সিএনজি বা এলপিজি টেক্সি রাইড ব্যাপক
হারে বাড়ানো গেলে কর্মসংস্থান আরো বাড়বে। এখন শুধু প্রয়োজন সরকারী
ব্যবস্থাপনায় রাস্তাগুলো সিমেন্টের ঢালাইয়ে তৈরী করে নিয়মিত মেরামত করে
যাওয়া।
(যথাযথ এডিট হয়নি)
No comments:
Post a Comment