আজকাল দেখলাম আমাদের ছোট ছোট
ছেলে মেয়েরা রান্না জানে। যেভাবে রান্না চলছে হাত পোড়ার ভয় নেই। রান্না ঘর
নোংরা হওয়ার ভয় নেই। কি করছে তারা ? তারা ডিপ
ফ্রিজে রাখা চিকেন নাগেট, স্মাইলি, সসেজ, মিট বল ও রেডি পরোটা এয়ার ফ্রাইয়ার বা
কনভেনশনাল ওভেনে দিয়ে দিচ্ছে খাবার রেডি। মাইক্রোওয়েবে গরম ঝটপট চা কফি আর
কাপ নুডলস প্রস্তুত। আমি এখনকার জেনারেশনের ঝটপট
কাজে সত্যিই মুগ্ধ। অনেকে বলবেন প্রিজারভেটিব দেয়া খাবার বাচ্চাদের
ক্ষতি করবে। আমি বলব সমস্যা নেই আপনিও
পারেন বাসায় চপ, কাবাব, পরোটা, রুটি হাফ কুক করে রেখে দিন ডিপ ফ্রিজে
বাকী বাচ্চারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঝটপট এয়ার ফ্রাইয়ার বা ওভেনে কুক করে নিবে।
কুকিংএর এই কালচারটা আসলেও আমার কাছে মনে
হয় আমরা কৃষিকাজকে বাচ্চাদের উপযোগী করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে কৃষিকাজ
বাচ্চাদের উপযোগী করে তোলা। অনেকে হাসবেন কৃষিকাজ কিভাবে সহজ করা যায়। তা করা
যায়। একটু চিন্তা করুন। কৃষি বলতে চোখের সামনে ভেসে উঠে ময়লা মাখা হাত। ঘামে
ঝড়ানো শরীর। ময়লা কাপড়। অথচ কৃষিকে রেডি ফুডের মতই বাচ্চাদের কাছে রেডি করা
যায়। আমার বাসার কিছু পাতাবাহার গাছ আছে। মেয়ের ইচ্ছে হল একটা লেবু গাছ গ্রো
করবে। আমি নার্সারিতে বললাম একটা লেবু গাছ দুই ফিট হাইট হবে। ফুল থাকবে। মাটিতে
ভার্মী কম্পোস্ট থাকবে। প্লাস্টিক টব থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি। নার্সারিটি আমার
চাহিদা নিল এক সপ্তাহ পর সাপ্লাই দিল। সুন্দর লেবু গাছ ফুল ধরে আছে। এখন আমার মেয়ের
কাজ হল মাটি ড্রাই হতে দেখলে পানি দেয়া আর গাছ বাড়ছে কিনা লক্ষ রাখা। ছোট ছোট
বাচ্চাদের আমরা এভাবে ছোট ছোট কৃষিতে আনতে পারি। আমাদের দেশের শহরের সকল
মানুষরা টবে বা কন্টেইনারে উন্নত দেশের মত টমেটো, লেটুস,পুদিনা পাতা ও কাচা মরিচ জন্মানো শুরু
করবে তখন বিশাল এক বিপ্লব শুরু হবে।
মনে করুন আমাদের একটা মার্কেট থাকল
যেখানে গ্রো ব্যাগ পাওয়া যায়। গ্রো ব্যাগের মধ্যে আছে কম্পোস্টে, ভার্মি কম্পোস্ট ও কোকো পিট দেয়া গাছ জন্মানোর মিডিয়া। আপনার কাজ হবে
গ্রো ব্যাগগুলি কেনা। গ্রো ব্যাগগুলি এনে একটা কন্টেইনারে রাখবেন। স্ট্যান্ডের
উপর রাখবেন। গ্রো ব্যাগে একটু ফুটো করা তারপর ককো পিটে তৈরি করা টমেটোর
চারাটি লাগিয়ে দিয়ে এখন অ্যালুমিনিয়াম স্ট্যান্ড ও প্লাস্টিক স্ট্যান্ড লাগিয়ে
দিলেই হয়ে গেল টমেটো চাষ। টবের মধ্যে
কয়েকটা মরিচ গাছ বা যে কোন সবজির গাছ এনে
লাগিয়ে দিলে হয়ে গেল। পোকা ধরবে সমস্যা নেই। বাজার থেকে মশারী কিনে চারটি খুঁটি
দিয়ে টবগুলির চারিদিকে টাঙিয়ে দিলে হয়ে গেল নেট হাউজে চাষ। নেট হাউজে লাগালে আর
কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন নেই। কম্পোস্ট, ভার্মি
কম্পোস্ট ও ককো পিট দিয়ে তৈরি ব্যাগে সমস্ত উপাদান বিশুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত
থাকবে। গ্রো ব্যাগ বাইরের দিকে থাকবে সাদা আর ভিতরে থাকবে কাল। ভিতরে আল্টা
ভায়ালেট রে ভিতরে যেতে দিবে না। তাতে গ্রো ব্যাগের ভিতরে শিকড় বাড়বে। অনুবীজ
বাড়বে। ভিতরে জলীয় উপাদান ধীরে ধীরে শুকাবে এবং সেচ কম লাগবে। আজকাল গাছের
গোড়ায় ফোটায় ফোটায় পানি দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন করা যায়। অনেক সময় টাইমারযুক্ত
ড্রিপ ইরিগেশন সেট করা যায় যেন হলি ডে ছুটিতে গেলেও সমস্যা নাই। আবার গাছের মধ্যে
বা গ্রো ব্যাগে এমনভাবে প্রোভ সেট করা যায় যে জলীয় উপাদান কমে গেলে অটোমেটিক
ফোটায় ফোটায় পানি পরা বা ড্রিপ ইরিগেশন চালু হবে। বাচ্চারা গ্লাভস পড়ে ও সুন্দর
ও ছোটখাট টুলস দিয়েই করতে পারে সেই
গ্রো ব্যাগের চাষাবাদ। ভালভাবে চাষ করলে একটা টমেটো গাছ থেকে হয়ত ২/৩ কেজি টমেটো
উৎপাদন করা সম্ভব। বাজারে ৩০০ /২০০ টাকার টমেটো উৎপাদনে হয়ত ৬০০/৪০০ টাকা খরচ
পড়বে তবুও কোন সমস্যা নেই কারণ এই টমেটো বিষ ছাড়া। শরীর রক্ষার দিক দিয়ে এই
বাড়তি দামটা কোন বিষয় নয়।
বিষের যুগে প্রয়োজন বাচ্চাদের
কৃষি শেখানো যেন নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে
পারে। এই যুগে এত সহজে কৃষি করা
যায় তা আগে চিন্তাই করা যেত রা। এখন প্রয়োজন
স্কুলের বাচ্চাদের আগ্রহী করা উ কৃষিটাকে সহজ করা। এটা করতে পারলে কৃষি হবে
বিষমুক্ত।
No comments:
Post a Comment