Pages

Thursday, October 3, 2019

রিটায়ার জীবনের ডে‌মো অ‌ফিস

রিটায়ার জীবনের ডে‌মো অ‌ফিস

‌সে‌দিন আমার থে‌কে আট বছ‌রের বড় একজন অবসরপ্রাপ্ত অ‌ফিসার আমার অ‌ফি‌সে আস‌লেন। যে‌হেতু অবস‌রের দিনগু‌লি এ‌গি‌য়ে আস‌ছে তার কা‌ছে অবস‌রের প্রস্তু‌তি কিভা‌বে কাটাব তা জান‌তে চাইলাম। বললাম, চাকুরী ছে‌ড়ে আবার নতুন চাকুরী‌তে যে‌তে চাই না। করনীয় ক‌ি? তি‌নি রিটায়ারমে‌ন্টের পর করনীয়‌  কিছু কাজ বল‌লেন:
প্রথমত: কাউ‌কে কোন ধার কর্জ দি‌বে না।
‌দ্বিতীয়ত: পেনশ‌নের টাকা নস্ট করা যা‌বে না। সঞ্চয়পত্র বা বি‌নি‌য়ো‌গে রাখ‌তে হ‌বে।
তৃতীয়ত: দোকান পাট, বাড়ী ভাড়া কিছু ক্যাশ ফ্লো রাখ‌তে হ‌বে।
চতুর্থত: বু‌ঝে শু‌নে চল‌লে ও ছোটখাট ব্যবসা করাটাও মন্দ না।

আর একজন অবসর প্রাপ্ত প‌রি‌চিত অ‌ফিসার এল‌পিআর শেষ না ক‌রে নতুন কা‌জে যোগ দি‌য়ে‌ছেন। জান‌তে চাইলাম স্যার চাকুরী শেষ ক‌রে নতুন চাকুরী‌তে ঢু‌কে পড়‌লেন। স্ট্রেট উত্তর পেলাম। আস‌লে কাজ ছাড়া বাসায় ব‌সে থাকা যায় না। বাসাটা হল স্ত্রীর ডো‌মেন ওখা‌নে থাকাটা অ‌নিরাপদ। তাই কাজ নি‌য়ে ভে‌গে যাওয়াটা ভাল।
‌প্লেট ধোয়া, টে‌বিল মোছা ইত্যা‌দি নানা কাজ যা ক‌রি‌নি তার ম‌ধ্যে ঢু‌কে পড়াটা অ‌নেক সময় শরীর ও ম‌নের দিক দি‌য়ে যায় না। তাই স্ত্রী'র ডো‌মেন থে‌কে ভে‌গে যাওয়াটা মন্দ নয়।
চাকুরী শে‌ষে চাকুরী এটাই বেশীর ভাগ মানু‌ষের লক্ষ্য। মানুষ হয়ত কাজ ছাড়া থাক‌তে পা‌রে না। কাজ সবাই কর‌তে চায়। এখন প্রশ্ন হল বে‌চে থাকার জন্য কাজ না মন‌ের আনন্দ‌ের জন্য কাজ। বেশীর ভাগ চাকুরীজী‌বি কাজ নেয় বে‌চে থাকার জন্য। ম‌নের খোড়াক বা আনন্দ পুর‌নের জন্য কাজ কর‌তে পা‌রে খুব কম মানুষ। যারা পা‌রে তারা অবশ্যই ভাগ্যবান।
‌বে‌চে থাকার জন্য কাজ না ক‌রে ম‌নের আন‌ন্দের জন্য কাজ করার জন্য প্রথম প্র‌য়োজন হল চা‌হিদা ক‌মি‌য়ে ফেলা। চা‌হিদা কমা‌নোটা বিশাল চ্যা‌লেঞ্জ। ত‌বে অ‌নে‌কে বল‌বেন, বুদ্ধ‌িমানরা চা‌হিদা কমা‌নোর চিন্তা ক‌রে না বরং ইনকাম বাড়া‌নোর চিন্তা ক‌রে। তাই বু‌দ্ধিমান চাকুরীজী‌বিরা নতুন ভা‌বে আর্থ‌িক মুক্ত‌ির চিন্তা ক‌রে এখা‌নেই নতুন জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। নতুন যুদ্ধ শুধু বয়সটা বেশী নিয়‌মিত ঔষধ খে‌তে হয়। মন চাই‌লেও শরীর পা‌রে না। তাহ‌লে রিটায়ার করার পর সারা‌দিন বন্ধু বান্ধব নি‌য়ে সকা‌লে হাটা, দুপু‌রে টুক টাক সমাজ সেবা, বিকা‌লে গলফ, রা‌তে রেস্টু‌রে‌ন্টে বন্ধু বান্ধব নি‌য়ে খাওয়া এভা‌বে না হ‌লে জীবনটা জ‌মে না। এটার জন্য যে আর্থ‌িক সামর্থ্যতা প্র‌য়োজন তা সবাই অর্জন কর‌তে পা‌রে না।
ত‌বে চাকুরী না কর‌লেও প্র‌তি‌দিন বাসা থে‌কে বের হ‌য়ে এমন একটা স্থান বা অ‌ফিসের আদ‌লে বসার জায়গা প্র‌য়োজন যেখা‌নে পা‌রিবা‌রিক প‌রি‌বেশ থে‌কে নি‌জের জন্য ক্রি‌য়ে‌টিভ কিছু করা য‌ায়। যেটা ছিল আ‌গের যু‌গের মানু‌ষের জন্য কাচারী ঘর। যা কিনা বাড়ীর বাই‌রের দি‌কে মূল বাড়ী থে‌কে বাই‌রে। কাচারী ঘ‌রে ব‌হিরাগতরা যাওয়া আসা ক‌রে নানা রকম জ‌মি জমা সংক্রান্ত কাজ ও বিচার আচার চ‌লে। দেন দরবার চ‌লে। আমরা যারা ফ্লা‌টে থা‌কি তারা এই  কাচারী ঘর কোথায় পাব। বড় বাসা হ‌লে হোম অ‌ফিস বানা‌নো যে‌তে পা‌রে। ছোট বাসায়ও করা যায়। ত‌বে স্ত্রী খে‌টে মর‌বে আর হোম অ‌ফি‌সে ব‌সে আপ‌নি প‌ত্রিকা পড়‌বেন ভয়ানক রিস্ক‌ের ব্যাপার। তাহ‌লে উপায়, বাসার অন‌তিদূ‌রে অ‌ফিস স্প‌েস ভাড়া নেয়া। ত‌বে সমস্যা হল আয় না আস‌লে প‌ত্রিকা পড়া ও কিছু ছোটখাট কাজ করার জন্য অ‌ফিস স্পেস ভাড়া নেয়াটা তেমন যুতসই হ‌বে না। ক‌য়েকজ‌নে মি‌লে একটা কমন অ‌ফিস হ‌তে পা‌রে। পিয়ন, সি‌কিউ‌রি‌টি ইত্যা‌দি থাকল ত‌া মন্দ নয়। আমা‌কে একবার অবসরপ্রাপ্ত স‌চিব ব‌লে‌ছি‌লেন তি‌নি নামমাত্র বেত‌নে প্রাই‌ভেট প্র‌তিষ্ঠা‌নে উপ‌দেস্টার চাকুরী নি‌য়ে‌ছেন একটা অ‌ফিস পাওয়ার আশায়। সারা জীবন অ‌ফি‌সে চাকুরী ক‌রে‌ছেন এখন বাকী জীবনটা সকা‌লে নাস্তা ক‌রে অ‌ফিস নামক বদ্ধ ঘ‌রে না বস‌লে মনট‌ি ভাল কাট‌বে না। অ‌ফিসটাও মিস করার একটা অংশ। তাই হাটার দূরত্বের ম‌ধ্যে বসার জন্য ক‌য়েকজন অবস‌র লোক মি‌লে একটা অ‌ফিস কর‌লে মন্দ হয় না। ওই অ‌ফিস হ‌তে পা‌রে নানা যোগা‌যো‌গের ব্যবস্থা। হতে পা‌রে কনসাল‌টেন্স‌ি অ‌ফিস। হ‌তে পা‌রে নানা রকম প্রব‌লেম সলভিং ব্যবন্থা। 
অ‌নে‌কের অ‌নেক রকম চিন্তা থাক‌বে তাই অ‌ফিস হা‌রি‌য়ে একটা ডে‌মো অ‌ফিস ক‌রে নি‌লে রিটায়ার লাইফ মন্দ কাট‌বে না।

No comments:

Post a Comment