জুন ২০১৪ প্রথম
সপ্তাহে বাসে করে চট্টগ্রাম হতে ঢাকা
আসছিলাম। সকাল আনুমানিক ৪টায় বাসটি যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার দিয়ে যাচ্ছিল তখন আলোর
তীব্রতায় আমার ঘুম ভাঙ্গে। চোখ খুলে দেখতে পাই সারি সারি লাইট পোষ্টের উজ্জ্বল
আলো। লাইটগুলোর দিকে তাকিয়ে চিনতে পারলাম। এলইডি লাইট। অনেক গুলো ছোট ছোট এলইডি
লাইটের সমন্বয়ে উজ্জ্বল আলোবিশিষ্ট ফ্লাড
লাইট। এরূপ আলো আছে হাতির ঝিল প্রজেক্টে। এ লাইটগুলো উঁচু উঁচু পিলারে লাগানো দেখে
আমার মাঝে যে আনন্দটা আসল সেটার কারণ অন্তত পাঁচ বছর এ লাইটগুলোকে এত উপরে উঠে আর বদলাতে হবে না। আর
যদি ড্রাইভারলেছ এলইডি লাইট হয় তবে আরও অধিক সময় এই লাইটগুলো নষ্ট হবে না।
ড্রাইভার লেছ এলইডি হল, এলইডি লাইটগুলোকে এমনভাবে সেট করা
যাতে এলইডি লাইট জ্বালানোর জন্য ভোল্টেজ কমানো বা বাড়ানোর জন্য কোন সার্কিট
ব্যবহার হয় না এবং এলইডি গুলোকে সিরিজে দীর্ঘ সারিতে সংযোগ করা হয়। এলইডি লাইটের
আয়ু যদি হয় ৫০,০০০ ঘণ্টা তবে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে
জ্বললে সর্বমোট স্থিতি হবে ৫০,০০০/১২ ঘণ্টা/৩৬৫
দিন=১১ বছর। যদি অর্ধেক আয়ু ধরা হলে ৫ বছর একটানা চালু থাকবে ভাবতেই অবাক লাগে।
এখনও আমরা দেখতে পাই চারিদিকে শহরের সরকারী স্থাপনার লাইট একবার নষ্ট হলে তা বদল
করার জন্য কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। তবে আগে আমরা দেখতাম ফিলামেন্ট লাইট খুব ঘন ঘন
বদল করতে হত। তারপর এনার্জি সেভিং লাইট। এ লাইটগুলি বাহিরের পরিবেশে মোটামুটি চলে
যাচ্ছিল একবার লাগালে ঝড়/বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কমপক্ষে এক বছরের উপরে পার
হচ্ছিল। আর এবারকার এলইডি লাইট পাঁচ বছর কমপক্ষে। এটা ভাবতেই অবাক হতে হচ্ছে। উঁচু
পোষ্টে লাইট লাগানোর পর পাঁচ বছর নিশ্চিন্ত থাকা।
এলইডি লাইটের
মূল্য এনার্জি সেভিং লাইট হতে দ্বিগুণ হলেও আমরা বেশ কিছু সুবিধা পাচ্ছি তা হল
নিন্মরুপ।
১। এলইডি
লাইটের আয়ু এনার্জি সেভিং লাইট হতে প্রায় তিনগুণ।
২। কম বিদ্যুৎ
এ অধিক আলো পাওয়া যায়।
৩।
ড্রাইভার-লেস এলইডি ব্যবহারে লাইটের ওয়াট আরও সাশ্রয়ী হয় এবং সার্কিটের কারণে
লাইটে ব্রেক-ডাউন আরো কমে যায়।
৫। লাইটের ওয়াট
কম হওয়ার কারণে কম অ্যাম্পিয়ারের তার ব্যবহার করে খরচ কমানো যাবে।
একটি বিষয় বেশ
গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল রিসাইক্যাল। কারণ সিএফএল লাইটে থাকে মার্কারি বা পারদ যা
কিনা নবায়নযোগ্য নয় ও বিষাক্ত আইটেম। পারদ ক্রমাগত লাইট থেকে ভূমিতেই সকলে নির্গত
করে। আর এভাবে ভূমি দূষণ বেড়ে যায়। এলইডি লাইটে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত আছে।
এটা সম্পূর্ণ রিসাইক্যাল করা যাবে।
এলইডি বর্তমানে
সারফেস মাউন্টেড সার্কিটের মধ্যে হওয়ায় এলইডির আকারও আনুপাতিক ভাবে ছোট হয়েছে এবং
রিসাইক্যাল যুক্ত মালামালও কম পরিমাণে ব্যবহ্রত হচ্ছে।
কিছুদিন আগে আমরা ঢাকা চট্টগ্রামে
পরীক্ষামূলক ভাবে সোলার পাওয়ার লাইট স্থাপন করতে আমরা দেখছি। বড় বড় প্যানেল নিয়ে
পোষ্টগুলোতে লাইট জ্বলছিল। সম্পূর্ণ বিষয়টি পরীক্ষাধীন পাইলট প্রজেক্ট ছিল।
পরবর্তীতে এ প্রজেক্টটি ফলপ্রসূ হয়নি। ধুলোবালি জমে সোলার প্যানেল থেকে যথাযথভাবে
লাইটের ব্যাটারি চার্জ হচ্ছিল না। ব্যাটারি যথেষ্ট পরিমাণ চার্জ না হওয়ায় লাইটগুলো
সারারাত জ্বলতে পারছিল না। দেখা গেল পরীক্ষামূলক প্রজেক্টটি সম্পূর্ণ ফেল করে।
বর্ষাকালে হয়তবা সোলার প্যানেল অটোমেটিক
বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে তাই বর্ষাকালে সোলার প্যানেল ব্যবহারে প্যানেল
পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই। যদিও সৌর প্যানেল ধুয়া মোছা করার জন্য পরিকল্পনায় রাখা হয়
না। কিন্তু বাস্তবতা হল যেখানে ধুলা বালির প্রবাহ বেশী এবং খুব সহজে সোলার প্যানেল
ধুলা ও বালিতে ঢেকে যায় সেখানে সোলার প্যানেল ময়লামুক্ত না করলে সৌর চার্জ বিঘ্নিত হবে। মনে
হয় অনেক উপরে না তুলে ৩/৪ ফুট উচ্চতায় অর্থাৎ সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করার মত উচ্চতায় সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলে তা ভাল হবে।
আর বড় বড় পিলারের উপর সোলার সেট না করে ২০/৩০ টি পিলারের প্যানেল একস্থানে সেট করে
সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাটারি ব্যাংক স্থাপন করে সোলার পাওয়ার ব্যবহার করলে ভাল
ফলাফল আসবে। শহরের ধুলোবালি ও ধুয়ার রাস্তায় এটা হতে পারে সহজ ও সাশ্রয়ী সমাধান।
তবে গ্রামীণ পরিবেশ ও কম ধুলাবালি এলাকায় সোলার প্যানেল পিলারের উপরে স্থাপন করা
যেতে পারে।
প্রয়োজনে সোলার লাইট ব্যবহার সাশ্রয়ী না
হলেও মানব কল্যানে সোলার লাইট বেশী দামী হলেও অফ গ্রীড এলাকায় ব্যবহার হতে পারে।
তবে শহরাঞ্চলে এর ব্যবহার সাশ্রয়ী হবে না। তবে গ্রীড লাইনের বিদ্যুত যথাযথ ভাবে
থাকলে সোলার লাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইটের ব্যবহার হবে অনেক বেশী সাশ্রয়ী। এটা
দেশের জন্য সাশ্রয়ী বিনিয়োগ।
No comments:
Post a Comment