আমার একজন
সহকর্মী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার পর রিকশার বিষয়ে তার মতামত হল। আমাদের
দেশে রিকশার কারণে আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিশেষ করে মহিলারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
রয়েছে। কারণ চারিদিকে রিকশার পর্যাপ্ততা থাকার কারণে মহিলারা ১০০ গজও হাটতে চান
না। তাই ঘরের বাইরে কাজে গিয়ে আমাদের দেশের মহিলারা যদি ২০/৩০ মিনিট হেটে
প্রতিনিয়ত বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনা নেয়া ও বাজার সদাই করার কাজগুলি করতে পারতেন
তবে মধ্যবিত্তদের মধ্যে ওভার ওয়েটের কারণে ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশার রোগগুলি অনেক
কম হত। যদিও মহিলাদের অধিকাংশরাই গৃহ স্থলীতে ছেলেদের তুলনায় অনেক অনেক বেশী
পরিশ্রম করে। রিকশা বা বাইসাইকেল পরিবেশ বান্ধব। তবে সাইকেল পরিবেশ বান্ধব ও
স্বাস্থ্য সম্মত। কারণ যিনি সাইকেল চালাতে অভ্যস্ত তিনি অবশ্যই কর্মস্থলে যাওয়া
আসার দীর্ঘ সময় সাইকেল চালিয়ে থাকেন বিধায় তিনি অনুশীলনের সুফল পান। ওজন নিয়ন্ত্রণ
রাখতে পারেন এবং অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। রিকশা যে চালান তার জন্য রিকশা
চালনা স্বাস্থ্য সম্মত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও শারীরিকভাবে
অতিরিক্ত চাপ দিয়ে রিকশা চালালে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চাপ দিয়ে রিকশা চালনার জন্য হাড় ক্ষয়, মেরুদণ্ডের ক্ষতি ইত্যাদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে বেশীরভাগ মানুষই যত্র তত্র গাড়ী পার্কিং করে। যদি পার্কিং এর
কাজটা সবাই সঠিকস্থানে যথাযথভাবে করত তবে আমাদের সমাজের উচ্চবিত্তদের কিছুটা হাটার
সুযোগ হত। নিদিষ্ট স্থানে পার্কিং করে কিছুদূর হেটে যেতে হবে আমরা এ কষ্টটুকু করতে
চাই না। আমরা চাই যেখানে আমার কাজ সেখানেই থামতে এবং পার্কিং করতে। এতে অন্যদের যে
সমস্যা হয় সেটা মাথার মধ্যে রাখি না।
রিকশা
বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশের জন্য বেকারদের কর্মসংস্থান করার একটা বিশাল সুযোগ
রেখেছে। শহরে গ্রামে গঞ্জে কাউকে না খেয়ে দিন পার করতে হয়না। একটা রিকশা বা ভ্যান
নিয়ে বের হলেই হল। গ্রামের রিকশাওয়ালারা ভিআইপি টাইপের। আমাকে বাবা মার জন্য গ্রামের
বাড়ীতে যেতে হয়, সেহেতু আমি দেখেছি । গ্রামের রিকশা নির্দিষ্ট সময়ে চাইলে
রিকশাওয়ালাকে বাড়ীতে যেয়ে খবর দিতে হয় আর এখন মোবাইলে কল করতে হয়। রিকশা/ভ্যান
চালনা হল অল টাইম জব। এখন রিকশা ভ্যান চালনার জন্য আবার ব্যাটারি চালিত মটর রিকশার
সাথে যোগ হচ্ছে। এটা একটা ভাল ব্যবস্থা এতে অতিরিক্ত পরিশ্রমের চাপ থেকে
রিকশাওয়ালাদের কষ্ট লাঘব হবে।
এখন প্রশ্ন হল, রিকশার ব্যবহার আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে স্বাস্থ্য
ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। কারণ কাছাকাছি দূরত্বও আমরা না হেটে রিকশায় যাচ্ছি। তবে এ
ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির চিন্তা আমরা না করে বরং সম্পূর্ণ বিষয়গুলি একটা নির্দিষ্ট
নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করলেই চলবে। রিকশা পার্কিং হবে নির্দিষ্ট স্থানে।
অবশ্যই রাস্তা ব্লক করে নয়। এতে রিকশায় আরোহণের জন্য আমাদেরকে কিছুনা কিছু পথ
হাটার প্রয়োজন পড়বে। বেশী গতির গাড়ী আর কম গতির গাড়ী এক রাস্তায় না চালিয়ে আলাদা
লেনের ব্যবস্থা করলে তা অনেক ভাল হবে। আর এটা হলে রিকশা বিরোধী আন্দোলন থেকেই
অনেকে সরে আসবেন।
রিকশা
বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থায় নিন্মবর্নিত কারণে থাকা প্রয়োজন:
১। রিকশা বেকার
সমস্যার কিছুটা প্রশমিত করে। কেউ কোন কাজ না পেলে যে কোন মানুষ রিকশা চালিয়ে বাচতে
পারে।
২। রিকশা
পরিবেশ বান্ধব। মনে করুন, দেশে যদি ১০ লক্ষ
রিকশা থাকে তবে তা ১০ লক্ষ গাড়ীর জ্বালানী বাঁচাচ্ছে। রিকশার পাশাপাশি ভিয়েতনামের
মত আমরা সাইকেল চালনায় সাধারণ মানুষদের উৎসাহিত করা যায়। সাইকেল পরিবেশ বান্ধব ও
স্বাস্থ্য সম্মত।
৩। রিকশার
মূল্য ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। একটা যেন তেন গাড়ীর মূল্য দিয়ে ২০/২৫ টি রিকশা ক্রয়
সম্ভব। এতে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হচ্ছে।
৪। রিকশার
মটর লাগিয়ে কায়িক পরিশ্রম কিছু লাঘব করার পাশাপাশি রিকশাওয়ালার আরও বেশী আয় রোজকার
বাড়াতে পারে।
উপরের
পয়েন্ট ছাড়াও আরো অনেক অপকারী বিষয় আপনাদের নজরে আসতে পারে:
১। আমাদের
দেশে রাস্তা প্রশস্ত নয় বলে রিকশার মত ধীর যান ট্রাফিক জ্যামের কারণ হিসাবে ধরা
হয়।
২। আধুনিক ও
উন্নত যুগে মানুষ মানুষকে কায়িক পরিশ্রম করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এটা দাস প্রথার
একধরনের অমানবিক রূপ।
পক্ষে
বিপক্ষে যত বিষয় থাকুক না কেন দুইটি কারণে রিকশার ব্যবহার চলতে পারে একটি হল:
পরিবেশ বান্ধব ও অন্য বিষয়টি হল সুলভ কর্মসংস্থান।
তবে
ব্যাটারি দিয়ে চালালে তখন পরিবেশ বান্ধব আর থাকছে না। কারণ ব্যাটারি চার্জ করতে যে
বিদ্যুৎ খরচ হয় তা কয়লা, ফসিল তৈল বা
গ্যাস পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে আর এতে বায়ুমণ্ডলে পরোক্ষভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত
হচ্ছে। তবে সোলার ব্যবস্থা থেকে ব্যাটারি চার্জ করতে পারলে ব্যাটারি চালিত রিকশাও
পরিবেশ বান্ধব করা সম্ভব।
পরিশেষে রিকশা
তোলার বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে রিকশা বান্ধব পরিবেশ করার ব্যবস্থা করাই হবে উত্তম।
জোর করে রিকশা তোলার প্রয়োজন নেই। যেদিন বাংলাদেশের মানুষের আর্থিকভাবে উন্নত
পর্যায়ে যাবে সেদিন পার্ক ও চিত্তবিনোদন কেন্দ্রে বিনোদন ব্যতীত রিকশা খুঁজে পাওয়া
যাবে না। পরিবেশ বান্ধব রিকশা তুলে দেয়ার অন্দোলনে না গিয়ে আমরা বরং সেদিন গুলোর
অপেক্ষায় থাকলাম।
No comments:
Post a Comment