আমার আর্থিক ব্যবস্থাপনা আমি কখনোই যুতসই ভাবে করতে
পারিনি। আমি অনেক পরিকল্পনা করি ঠিকই কিন্তু আমার খরচের হাতটা স্থির রাখতে পারি
না। আর্থিক ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে যে পরিমাণ ধৈর্য ধারণ করতে হয় সে পরিমাণ
ধৈর্য আমার কখনোই ছিল না।
মাঝে মাঝে
মনে হয় ক্যান্টিনে, রেস্ট হাউস
ইত্যাদি খরচ যত কম বকেয়া করে করা যায় ততই মঙ্গল। বকেয়া খরচের প্রধান সমস্যা হল
খরচের হিসাবের লাগাম ধরা যায় না। যারা বকেয়া পরিহার করে নগদে ক্রয় করতে পারে তারাই
বুদ্ধিমান।
উন্নতির
সবচেয়ে বড় শর্ত হল আয়ের থেকে ব্যয় কম করতে হবে। আয়ের থেকে ব্যয় কম করে জমাতে
পারলেই কেবল উন্নতি করা যায়। আয়ের থেকে ব্যয় কম করতে হবে আর কিছুটা জমাতে হবে।
আমেরিকার প্রেক্ষাপটে তারা কমপক্ষে ১০% জমানোটা যথাযথ মনে করে। আমরা সব সময় অন্যকে
অনুসরণ করতে চাই। ধার কর্জ করে চাকচিক্য করে আমরা তৃপ্তি পেতে চাই। এর থেকেও আমি কোনও ব্যতিক্রম নই। আমার প্রথম জীবনে
বেহিসাবি খরচের মধ্য পরিবারকে দেয়া, ছুটিতে বেড়িয়ে খরচ করা। যেটা হয়, মধ্যবিত্ত
পরিবারের কেউ চাকুরী পেলে সে মনে করে স্বর্গ হাতে পেল। আর যদি জীবনে অতৃপ্তি থাকে
তবে তো কথাই নেই। বাজেট কমানো বা খরচের রাশ টেনে ধরা অনেক বড় অনুশীলনের বিষয়।
এ অনুশীলনটি
পরিবারের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অর্জন করা সম্ভব। পরিকল্পনা ছাড়া হটাৎ করে
কেনাকাটা করা উচিত নয়। সবচেয়ে সর্বনাশা হল, বাচ্চাদের আবদার। ছোট বাচ্চারা কখনোই
হিসাব অনুযায়ী আচরণ করে না। প্রায়শ:ই তারা পিতামাতাকে বিপাকে ফেলার মত আচরণ
করে। পরিকল্পনা করে গেলেন আপনি ২০০০ টাকায় কেনাকাটা সারবেন। হুট করে একটা খেলনা ও
খাবার আইটেম বগলদাবা করে বসল। আপনি কোনক্রমেই অতিরিক্ত ১০০০ টাকা পরিশোধের জন্য
প্রস্তুত ছিলেন না। তখন নিজের ইজ্জত বাচাতে আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট
কার্ড ব্যবহার করতে বাধ্য হন অথবা তাৎক্ষনিক লোণ করতে বাধ্য হন।
আবেগ ও
ভালবাসা প্রায়শই আমাদের এত বেশী ইমোশনাল বা আবেগপ্রবণ করে ফেলে এতে আমরা শাসনে
শক্ত হতে পারিনা। বর্তমান যুগে বাচ্চাদের মারধর করা একদম নিষেধ তাতে ভালোর চেয়ে
মন্দ হয় বেশী। এতে অনেক শিশুর কথা না শোনার মাত্রা এত বেড়ে যায়। তখন মনে হয় আগের
পদ্ধতিতে মারধর করলে হয়ত ভাল হত। মাঝে মাঝে ধমকেও বাচ্চারা এত রিএক্ট করে তখন অবাক
লাগে। সেসময় নিজেদের অতীত বিষয়গুলো মেলালে একটু অবাক হতে হয়। এ ধরনের ইমোশনাল
সমস্যা বর্তমান সময় থেকে আগে বেশী ছিল কিনা মনে করতে পারছিনা।
উন্নতির প্রথম
শর্ত হল আয় থেকে ব্যয় কমাতে হবে। যদি তিন-বেলা খাওয়ার সামর্থ্য না থাকে তবে
দুইবেলায় খাবারের বিল কমিয়ে আনতে হবে। সস্তা খাবারের জন্য প্রাণীজ প্রোটিনের
পরিবর্তে উদ্ভিদজাত প্রোটিনের ব্যবহার বাড়ালে খাবারের বাজেট কমবে। মোট কথা আয় থেকে
ব্যয় কমিয়ে রাখতে হবে। কোন কিছুই বাকীতে( ক্রেডিটে) কেনা যাবে না। ওভার ড্র করা
যাবে না।
তবে একটা
বিষয়ে মনে হয় আমি আমার বাবার ধৈর্যের ও বিচক্ষণতার প্রশংসা না করে পারছিনা যিনি ছয়
সন্তানের পরিবার চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছেন। আজকে আমি তিন সন্তানের পরিবারের প্রথম
শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসাবে খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
আমি
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরী-কালীন সময়ে একটা বিষয় লক্ষ করেছি তা হল
সেনাবাহিনীতে আমরা অধিকাংশ সদস্যই আমাদের প্রায় সমস্ত খরচই আমরা ক্রেডিটে করি। আর
আমাদের এ বকেয়া থাকার কারণে যারা অধিক সচেতন কেবল তারাই হয়তবা নিজের হিসাবের মধ্যে
চলতে পারেন। অধিকাংশই আমরা বেতনের মধ্যে চলতে পারিনা। আলটিমেটলি টিএ/ডিএ ইত্যাদি
বাড়তি আয় কি। আর আমরা যদি একদম শক্তভাবে চিন্তা করে নেই অবশ্যই আমি নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচে
চলব তা অবশ্যই করা সম্ভব। মূলত আমাদের সাংসারিক খরচ বিশেষ করে খাওয়া খরচ আমরা অনেক
সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অনেক সময় সন্তানের
পড়াশোনা বা ইত্যাদি খরচ ইচ্ছে করলেও কমানো যায় না। যেমন: একজন মালী যার মাসিক বেতন
ও অন্যান্য উৎস মিলিয়ে আয় ১৫০০০ টাকা। সে তার এক মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে পড়াচ্ছে।
এখন মেয়ের পিছনে কম করে ৫০০০ টাকা খরচ করলে তার অন্য সন্তান,স্ত্রী ও নিজ খরচ বাকী ১০০০০ টাকায় চালাতে হচ্ছে। যদিও
এধরনের সাধ্যের বাইরে সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের সন্তানদের জন্য আমরা প্রভিডেন্ট
ফান্ড, জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি হতে বাড়তি ব্যয়
নির্বাহের ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ মেধাবী সন্তানের ভাল পরিবেশে পড়াশোনা করানোটাও
একটা বিশাল ইনভেস্ট।
তাহলে যে
কোন চাকুরী বা উপার্জনে একটা লক্ষ্য স্থির করে চলতে হবে। আমার জীবনে আবেগ প্রবণ
হয়ে জীবনে বিভিন্ন সময় ওডি করে বেতনের বিশাল অংশ ওডি,র সুদ হিসাবে ব্যাংক কর্তনে চলে যেত। আর ঋণের একটা মহা
আর্বতে জীবন আবর্তিত হতে থাকত। দুইটি জাতি সংঘ মিশনের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ হয় কিন্তু
উন্নতির ধারা ব্যাহত হয়। মরার উপর খরার ঘা হল পেনশন কমুটেশনের উপর ২০ লক্ষ টাকা
গ্রহণ করে শেয়ার মার্কেটে খাটানো যা ছিল আরো ধ্বংসাত্মক।
আমার এই ৪৩
বছর বয়সে খরচের বিপরীতে পরিবারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা একটা বিশাল বিষয়।
এরূপ একটা যুদ্ধ আমি করেছিলাম। তা হল শেয়ার মার্কেটে ধরাশায়ী হয়ে। তখন বেতনের
অর্ধেক টাকা দিয়ে কিভাবে পরিবারের খরচের চালানো যায় তার জন্য যুদ্ধ করা। এত খরচ
কমাতে না পারলেও অনেকটুকু কমাতে পেরেছিলাম। পারিবারিক খরচ কমানো একটা বিশাল যুদ্ধ।
এ যুদ্ধে পরিবারের সকলে জড়িত থাকে বলে যুদ্ধটা ভয়াবহ। এখন আবার একটা যুদ্ধ করতে
চাচ্ছি তা হল বেতনের আয়ের মধ্যে জীবনধারণ করা। এ যুদ্ধটা করছি ঢাকা শহরের বাইরে
থেকে যদি বেতনের টাকায় চলতে না পারি তবে তা ভয়াবহ বিষয়। আর চাকুরীর পূর্ণ বেতন
প্রাপ্তির সময় আছে মাত্র ৯ বছর। এ ৯ বছর যদি বেতনের খরচের মধ্য চলার অভ্যাস করতে
পারি, তবে সামনের জীবন যুদ্ধটা সহজ হবে।
এখন হয়তোবা
অনেকে দ্বিমত করবেন। বেতনের টাকার পুরোটা জমাব আর বাড়তি টাকায় সংসার চালাব। এটা
অবশ্য চাকুরীজীবীদের সৎ চিন্তাধারার পথ নয়। আমাদের মন্ত্রটা এরূপ হতে হবে যেন
বেতনের অর্থে নিজের জীবন ও জীবিকা চালিত করব। আর কিঞ্চিত বেশী উপার্জন (অবশ্যই সৎ
পথে) করতে পারলে তা সঞ্চয় করব। এভাবে হয়ত সততার জীবন নির্বিঘ্ন হবে।
No comments:
Post a Comment