Pages

Sunday, August 10, 2014

নিরাপদ ও অ-ডুবন্ত জলযান তৈরি করুন আর বন্ধ করুন মানুষ মারা

ঈদ উল ফিতর ২০১৪ দিনটিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মহিলা শিশুসহ ১১ জন মারা যায়। তারা ট্রলারে করে পদ্মার চরে বেড়াতে যাচ্ছিল। পদ্মার ঢেউয়ে ট্রলার ডুবে এ দূর্ঘটনা ঘটে। অত্যন্ত দুঃখজনক। বিজ্ঞানের উন্নয়নের যুগে এ মৃত্যু আশা করা যায় না। তার কয়েকদিন পরে পিনাক-৬ নামে মুন্সিগঞ্জে লঞ্চ ডুবিতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। অনেক লাশ নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে। আমাদের জলযান কেন ডুববে? আমরা কি পারি না অ-ডুবন্ত(Unsinkable) জলযান ডিজাইন করতে । অবশ্য তা পারি। এ ধরনের জলযান টাইটানিকের মত ভয়াবহভাবে আঘাত না পেলে এবং জলযানের তলদেশ না ফাটালে বা না লিক হলে তা ডুববে না।

আমরা যদি একটা খালী বোতল ছিপি আটকিয়ে পানিতে টেনে ডুবানোর চেষ্টা করি তবে সেই বোতল কখনোই পানিতে ডুবানো যাবে না। আপনি পরীক্ষাটি করে দেখতে পারেন। যদি ছিপি আটকানো খালী বোতলকে পানিতে ডুবানো না যায় তবে এর আদলে ডিজাইন করা জলযান  সরাসরি আঘাত করে বিধ্বস্ত করা ছাড়া ডুবানো যাবে না। আর যদি জলযান টুকরো হয়ে যায় তবে তার টুকরোগুলো যেন ভেসে থাকে কারণ সেসব টুকরোগুলো ধরে মানুষ ভেসে থাকতে পারবে। আমরা বুঝতে পারছি আমাদের বাংলাদেশ যে সব জলযান নিমজ্জিত হচ্ছে সে সব জলযানের ডিজাইন গত ত্রুটি রয়েছে।

প্লাস্টিক ফাইবারে তৈরি স্পীডবোড গুলি সাধারণত হালকা ও ফাঁপা হওয়ায় এগুলো ডুবে না। তবে ঢেউয়ে উল্টিয়ে যেতে পারে। যদি কোন জলযান না ডুবে তা উল্টিয়ে পালটিয়ে ভেসে থাকে তবে সে জলযানে ধরেও জলযানের আরোহীরা  বেচে থাকার চেষ্টা করতে পারে। বাংলাদেশে রিক্সাকে পৌরসভা লাইসেন্স দেয়। কিন্তু নসিমন ও করিমন অবৈধ বলে লাইসেন্স নেই। তেমনি অবৈধ জলযান ট্রলারেরও লাইসেন্স নেই। এমনকি স্পীড বোটের ইঞ্জিনেরও কোন লাইসেন্স বা নিয়ন্ত্রণ নেই। শুধুমাত্র যাত্রীবাহী লঞ্চের কিছুটা/নামমাত্র  পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ আছে।
এটা পরীক্ষিত যে, ছিপি আটকানো খালি বোতল পানিতে ডুবে না। আমরা বোতল টেকনিকে খালি ট্যাংক সংযুক্ত করে জলযান ডিজাইন করতে পারি। ছোট বড় যে কোণ জলযান তার ওজন অনুযায়ী সামনে পিছে টিনের শিট 
দিয়ে জলযানের ওজনের সমান আয়তনের পানির ছিপি আটকানো বোতলের ন্যায় দুইটি/তিনটি খালি ট্যাংকি স্থাপন করতে পারি। এধরনের জলযান সহজে ডুববে না। যদি না সেই ট্যাংকি ফুটা বা ভাঙ্গা না হয়। একাধিক খালী ট্যাংক থাকলে একটি বা দুটি ট্যাংক ফুটো হলে ৩য় ট্যাংক জলযানকে আংশিক ভাসিয়ে রাখবে। এ ধরনের খালী ট্যাংকি সমৃদ্ধ জলযান ঢেউয়ে উল্টালেও তা ভেসে থাকবে। এমনকি ভেঙ্গে টুকরো হলেও টুকরো গুলো ভেসে থাকবে। আর কিছু 

করতে না পারলেও বড় বড় ছিপি-যুক্ত খালী জারিক্যান অথবা সাদা শোলা জলযানের তলদেশে শক্ত করে বেধে রাখলে জলযান কাত চিত হোক, ফাটল ধরুক বা ভেঙ্গে যাক তবুও ভেসে থাকবে। যদি জলযান কাত চিত হয়েও ভেসে থাকে তবুও যাত্রীরা জলযানটি ধরে ভেসে থেকে উদ্ধারের অপেক্ষা করতে পারে। ২০১৪ সালে বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নয়নের সময় জলযান ঢেউয়ের বারিতে ডুবে যাবে এটা মেনে নেয়া যায় না। যারা জলযান তৈরি করেন তারা মেধা খাটিয়ে শুধু একটু চিন্তা করলেই হল, আর তা হল, উল্টানো পাল্টানো যাই হোক জলযান যেন যে কোন অবস্থায় না ডুবে। সর্বদা ভাসমান থাকে । এতে ভাসমান দ্রব্যাদি(খালী জারিক্যান, শোলা ইত্যাদি ভিজে নষ্ট হয়না এরূপ হালকা ভাসমান দ্রব্যাদি) দিয়ে জলযানের তলদেশে সেট করে নিলে জলযান ডুববে না। আর যদি জলযান ভেঙ্গে যায় বা উল্টিয়ে যায় তবুও জলযান ভাসমান থাকলে তা ধরে যাত্রীদের প্রাণহানি কমে যাবে। এখন প্রয়োজন জলযান মালিকদের সততা ও মানবিকতা। জলযান ডিজাইনার ও মিস্ত্রীদের ইতিবাচক মানসিকতা । কেবলমাত্র ২০% অথবা ৩০% বেশী অর্থ খরচ করে একটা জলযানকে নিরাপদ করা যায়। অথচ আমাদের বাংলাদেশে এখনও মানুষদের সে মানুষিকতা গড়ে উঠেনি।

আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে নিরাপদ ট্রলার। নিরাপদ জেলে নৌকা। নিরাপদ ফেরির নৌকা। প্রযুক্তির অভাব নেই। শুধু রয়েছে অর্থলোভ। আর এই অর্থলোভের কারণে জলযান নিরাপদ ভাবে তৈরি বা ডিজাইন করা হয় না। ঈদের আগে অনিরাপদ ও দুর্বল কাঠামোর জলযান চালানো হয় বাড়তি কামাই ও বাড়তি পরিবহনের জন্য।
অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে ও বাড়ী ফেরার তাড়া থাকায় যাত্রীরা বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে জলযানে যাত্রা করে। জলযান পরিচালনাকারী সাথে সাথে জলযানের যাত্রা বন্ধ করার মানসিকতা দৃঢ়তা দেখালে শয়ে শয়ে মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। অধিক যাত্রী অধিক টাকা। এ মানুষিকতায় বিপর্যয় নেমে আসবে।
যারা জলযানে অনিরাপদ জানা সত্বেও যাতায়ত করতে বাধ্য হন, তাদের প্রয়োজন জলযান ডুবে যেতে পারে এ ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করা। যদি সামর্থ্য থাকে তবে মুখ দিয়ে বাতাস ফুলিয়ে হাতে পড়ার ব্যান্ড বা লাইফ জ্যাকেট বহন করতে পারেন। জলযানে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট বা বয়া থাকবে বাংলাদেশে তার গ্যারান্টি নাই কারন প্রায় সকল জলযানই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে।

লাইফ জ্যাকেট শোলা বা ফোম দিয়ে তৈরি করতে পারেন। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর সাথে যে পরিত্যক্ত শোলা থাকে সেগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে ভাসমান বয়া তৈরি করে সহজেই নিজেকে ভাসমান রাখতে পারবেন। এছাড়া আপনার সাথের ব্যাগগুলো শোলা ঢুকিয়ে ভাসমান করুন যেন আপনার জলযান ডুবার সাথে সাথে আপনার ভাসমান ব্যাগগুলো বয়ার মত আপনার সাথে ভাসতে থাকে। এতে আপনি ব্যাগ হারানোর অতিরিক্ত লস থেকেও মুক্ত থাকতে পারবেন। যারা সাতার জানেন না, নারী ও শিশুরা অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট বা ভাসমান কিছু গায়ের সাথে বেধে নিবেন। একান্তই যদি কিছু না পান, দুইটি লিটারের খালী বোতল ছিপি বন্ধ করে নিজের শরীরের  সাথে বেধে রাখুন। অন্তত জলযান ডুবলে বোতল ধরে ভাসতে পারবেন। মানুষের সম্পূর্ণ শরীর পানির সম আয়তন থেকে ভারী নয়। তবে মানুষের মাথা ভারী বলে মানুষের মাথা ডুবে। মানুষ পানি খায়। পানি খেয়ে আরো ভারী হয়ে ডুবে যায়। তাই সাতার হল মাথা ভাসিয়ে রাখার কৌশল। ফলে কোন রকমে খালী বোতল ,খালী জারিকেন, শোলা ইত্যাদি অবলম্বন ধরে মাথা ভাসাতে পারলে ভেসে থাকা বা বেচে থাকা সম্ভব। অনিরাপদ জলযানে যাতায়তে বাধ্য হলে পাজামা পাঞ্জাবীর মত জটিল পোশাক না পড়ে সাতার সহায়ক পোশাক পড়ে থাকা নিরাপদ। আর একান্তই জলযান ডুবে গেলে আন্ডার ওয়্যার বাদে সব পানিতে বিসর্জন দিন। কারণ জান বাঁচানো ফরজ। আর মরে গেলে পানির তোড়ে আপনার শখের কাপড় চোপড় খুলে যাবে আর আপনার লাশ হয়ে যাবে দিগম্বর। তাই আগেই নিজেকে হালকা করে নিন ও বাচার চেষ্টা করান। মূলত: অল্প কিছুটা সতর্কতা অনেক অনেক জীবন হানি বন্ধ করতে পারে। জলযানে চড়ার পূর্বে শুধু একবার ভাববেন এটি ডুবতে পারে। যদি লাইফ জ্যাকেট বা এ জাতীয় কিছু যোগাড় করতে না পারেন তখনই লিটারের সফট ড্রিংকস বা পানির দুইটি বোতল কিনে নিবেন। আর বোতল দুইটি প্রয়োজনে গায়ের সাথে বাধার জন্য দড়ি বা সুতলি সাথে নিবেন। বাতাস দেয়া বালিশ বা এজাতীয় বাতাসে ফুলানো সামগ্রী সাথে থাকলে আরো ভাল। বাচ্চাদের খেলনা টাইপ বাতাসে ফুলানো সামগ্রী গুলো আপনি সহজে আপনার ব্যাগে নিতে পারেন এবং প্রয়োজনে নিজে ও পরিবারকে নিরাপদ করতে পারেন।
শুধুমাত্র আপনার মনকে সর্তক করবেন। আর পরিকল্পনা নিবেন জলযান ডুবলে কিভাবে ভাসবেন। জলযান ডুবতে পারে এ বিষয় চিন্তা করলে জলযানের অভ্যন্তরীণ কোন কোন ভাসমান জিনিস আপনি ব্যবহার করবেন তাও আপনার মাথায় তৎক্ষণাৎ চলে আসবে ।
জলযান তৈরির সময় শোলা/ফোম ইত্যাদি জলযানের তলায় দিয়ে তৈরি করতে পারেন। এছাড়া চারিদিকে ফাইবার গ্লাসের আবরণ দিয়ে জলযানকে হালকা ও অ-ডুবন্ত করে তৈরি করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটি ভিজিট করতে পারেন: http://taratari.org


আমরা অবহেলা করে অন্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হব এটা মেনে নেয়া যায় না। আবার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে অনিরাপদ জলযানে আমরা যাতায়ত করব এটাও মেনে নেয়া যায় না। জলযানে আরোহণের আগে ও পরে 

জলযান ডুবে গেলে নিজেকে উদ্ধার করব এ চিন্তা আমরা করব না এ ধরনের খামখেয়ালীও মেনে নেয়ে যায় না। অতি সহজে অ-ডুবন্ত(Unsinkable) জলযান তৈরি করে আমরা আমাদের জীবনকে ঝুকিমুক্ত করতে পারি। জলযানে আরোহণের পূর্বে জলযান ডুবলে কি করা যায় তার পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিলে প্রাণহানি অনেক কমিয়ে আনা যায়। এ বিষয়ে সকলে সচেতন করাটা আমাদের সকলে পবিত্র দায়িত্ব।

No comments:

Post a Comment