আমি আগষ্ট ২০১০ হতে তারিখ মার্চ ২০১১ পর্যন্ত
চাপাইনবাবগন্জ্ঞে ৩৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নে উপ-অধিনায়ক হিসাবে কাজ করি।
চাপাইনবাবগন্জ্ঞে গ্যাস না থাকায় তাদেরকে জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করতে হত। তখন দেখা
যেত প্রতিমাসে ২০০/৩০০ কেজি জ্বালানী কাঠ সৈনিক মেসে কম পড়ত। তখন আমি জ্বালানী
সাশ্রয়ী চুলার ব্যবস্থা করে জ্বালানীর খরচ কমিয়ে জ্বালানী কাঠ উদ্বৃত্ত করতে সক্ষম
হই। বিজিবিতে চুলা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে প্রায়শ:ই বিজিবির লোক
ট্রেনিং করিয়ে বিশেষ চুলা বানানোর নানা চেষ্টা চলে। কখনও আবার চুলা প্রতি ৩০০০/৪০০০
টাকা খরচ করে বন্ধু চুলা বানানোর অনেক প্রজেক্ট চালু হয়। কার্যত: সমস্ত প্রজেক্ট
আমার জানা মতে ফেল করে। কারণ বেশীরভাগ বিওপিতে লাকড়ির মূল্য বেশী থাকায় কাঠের বদলে
গোবর শুকানো লাঠি ব্যবহার করা হয়। এগুলো ধীরে জ্বলে এবং প্রচুর ছাই তৈরি করে। এতে
চুলা ভর্তি হয়ে যায়। তাই বন্ধু চুলা হলেও কুকরা এটাকে বন্ধু না রেখে মুখ বড় করে
এবং হাড়ির নীচে খুঁটি দিয়ে বন্ধু চুলাকে অবন্ধু বানিয়ে ফেলে। এতে তাদের জ্বালানী
সাশ্রয় না হয়ে আরো বেশী জ্বালানীর প্রয়োজন হয়। বন্ধু চুলায় মূলত জ্বালানী কম খরচ
হয় ধূয়া কম হয়। কার্যত দেখা যায় বন্ধু চুলা জ্বালানী কম খরচ হলেও তাপ কম এবং সময়
বেশী লাগে বিধায় বন্ধু চুলা বাবুর্চিরা পরিহার করতে চায়। তাদের বক্তব্য হল তাপ কম
হওয়ায় সময় বেশী প্রয়োজন এবং তারা সময়ের মধ্যে কাভার করতে সক্ষম হয় না।
আমি একবার বন্ধু চুলা নিয়ে মেহেরপুরের একজন টেকনিশিয়ানকে
নিয়ে গবেষণা শুরু করি। সে টেকনিশিয়ান আমাদের একটি বড় আকারের চুলা তৈরি করে দিতে
সক্ষম হয়। তার তৈরি চুলা আমাদের বেশ কিছু সুবিধা দেয়।
প্রথমত: ধুয়ার সমস্যা কমে যায় অর্থাৎ রান্না ঘরে কম
পরিমাণে ধুয়া নির্গত হয়। মোটা ও কাত করা চোংগা দিয়ে অধিকাংশ ধুয়া বাইরে বেড়িয়ে
যাওয়ায় রান্না ঘর অনেকটুকু ধুয়া মুক্ত ছিল। যা কিনা বাবুর্চির স্বাস্থ্যের জন্য
অনেকটুকু উপকারী বলা যায় এতে বাবুর্চির শ্বাস কষ্ট জনিত রোগের ঝুঁকি অনেকটুকু কমে
যায়।
দ্বিতীয়ত: গোবরের তৈরি কাঠিগুলো জ্বালানী হিসাবে সহজে
ব্যবহার করা যায়। এতে ধুয়া বেশী বা চুলা ভর্তি হওয়ার মত সমস্যাগুলো কমে যায়।
তৃতীয়ত: জ্বালানী সাশ্রয় বেশী না হলেও মোটামুটি ভাবে
জ্বালানী সাশ্রয় করা যায়।
এ চুলাটিও একধরনের বন্ধু চুলা। পার্থক্য হল একটু বড় করে
বানানো চুলা। ছাই ফেলার ঝালীটা বড় আকারের। ধুয়ার পাইপটা বড় আকারের আর ধুয়া সহজে
বের হওয়ার জন্য কাত করে তৈরি করা।
আমি এ চুলাটি বিজিবি একটা বিওপির কুক হাউসে বেশ কিছুদিন
পরীক্ষাধীন রাখি। ফলাফল অনেকটা সফল বলা যায় । কারণ এটা বাবুর্চি বা কুক বান্ধব
হিসাবে সফলতা পাওয়া গেছে। তবে আগুনের উত্তাপের বিষয়ে যা জানা যায় তা কিন্তু মন্দ
না। কারণ নীচের বড় আকারের জালীটি ঢালাই লোহার তৈরি বলে তা বেশ উত্তপ্ত হয় এবং
চুলার তাপমাত্রা বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বাবুর্চিরা জ্বালানী সাশ্রয়ী চুলা অপেক্ষা বেশী তাপ দেয়া
চুলা তাদের পছন্দ। কারণ তাদের ধারনা অধিক তাপ দিলে তাতে সময় সাশ্রয় করে। তাই তিন
পায়ার চুলা অধিক তাপের জন্য তাদের অধিক পছন্দ। তাদের অধিক তাপের চুলার চাহিদা
পূরণের একটা মাধ্যম হল রকেট স্টোভ। রকেট স্টোভ মূলত লোহার তৈরি। তবে মোটা লোহায়
তৈরি করতে হবে। এছাড়াও টাইলস বা অন্য ধরনের ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরি করা যায়। তবে
এ ধরনের লোহার চুলা বা টাইলসের তৈরি চুলা এমনভাবে একটা ইটের বা মাটির ভিতের মধ্যে
বসাতে হবে যাতে ইটের বা মাটির দেয়ালে তাপ না যায়। এর জন্য লোহার কাঠামো চুলায়
বসিয়ে চারিদিকে ছাই দিতে হবে যাতে চুলার দেয়ালে তাপ পরিবাহিত হয়ে তাপ অপচয় না হয়।
মূলত: ফর্মুলাটি হল কোন তাপ চুলার বাইরে যাবে না। আর অক্সিজেন প্রাপ্তির জন্য
চুলার নীচে ছাই ফেলার জালির নীচে গ্যাপ বা ফাঁক রাখতে হবে। সমস্ত আঙ্গার যেন
সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তার জন্য নীচে ছাইয়ের জালী রাখতে হবে। ছাইয়ের জালী কয়লাকে
সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে সম্পূর্ণ ছাই করে এবং এতে অসমাপ্ত পোড়া থেকে জ্বালানী রক্ষা পায়
ও অধিক জ্বালানী সাশ্রয় হয়। রকেট স্টোভ বহির্বিশ্বে অধিক তাপ উৎপাদনের জন্য অনেক
বেশী ব্যবহৃত হয়। তবে গতানুগতিক বন্ধু চুলা হতে এ চুলায় একটা সমস্যা আমরা দেখতে
পাই আর তা হল চুলা তৈরি করতে খরচ বেশী হয়। অন্যদিকে টাইলসের মাধ্যমে চুলা তৈরি করে
খরচ কমানো যায়।
অনেক সময় চুলার তৈরি মাটির সাথে শুকনো ঘাস লতাপাতা
ইত্যাদি ব্যবহার করে আমরা মাটিকে তাপ অপরিবাহী করে চুলাকে জ্বালানী সাশ্রয়ী করতে পারি। জ্বালানী সাশ্রয়ী চুলা নির্মাণের
ক্ষেত্রে আমাদের দেশের এনজিওরা নির্দিষ্ট
ডিজাইন মোতাবেক তৈরি না করে ব্যবহারকারীর চাহিদা মোতাবেক মডিফাই করতে পারে। যাদের
বেশী তাপ প্রয়োজন তারা রকেট স্টোভ ব্যবহার করতে পারেন। যারা ধীর গতিতে জ্বলা
জ্বালানী (যেমন: গরুর শুকনো গোবর) তাদের জন্য প্রয়োজন হবে বড় ছাকনী ও মোটা ধুয়া
বেরোনোর পাইপ।
গ্রাহকের চাহিদা মাফিক এ চুলার আরএন্ডডি করা প্রয়োজন। আর
এতে বন্ধু চুলা সকলের বন্ধু হবে।
No comments:
Post a Comment