Pages

Sunday, August 17, 2014

ফেরিওয়ালাদের লাইট


সেদিন( জুলাই ২০১৪) বগুড়া শহরের সাত মাথায় পাশ দিয়ে খান মার্কেটে যাচ্ছিলাম আমার ল্যাপটপের এ্যাডাপটার বা চার্জার মেরামত করার জন্য। সাত মাথায় চটপটি-ওয়ালা, বাদাম-ওয়ালা, পত্রিকাওয়ালা ও কাপড়-ওয়ালা সহ শতাধিক ফেরিওয়ালা বিদ্যমান। লাইন ধরে সমস্ত ফেরিওয়ালা বিশেষ ধরনের টিউব লাইট সদৃশ এলইডি লাইট জ্বালিয়ে আছে। আমার শশুরালয় বগুড়াতে হওয়ায় মাঝে মাঝে বগুড়ায় আসা পড়ে। আর অনেক অনেক দিন আগে থেকেই লক্ষ করে আসছি এই সাত মাথা মোটামুটি ফেরিওয়ালাদের জন্য একটা জমজমাট স্থান।
ফেরিওয়ালার বিশেষ ধরনেরই লম্বাটে দুই ফুট দৈর্ঘ্যের টিউব লাইট ব্যবহার করছে। এই লাইট বছর খানেক আগে চোখে পড়েনি। যে ধরনের লাইট কিছুদিন পূবে চোখে পড়ছিল তা হল সিএফএল ছোট ছোট ১৫/২০ ওয়াটের টিউব লাইট বা এনার্জি সেভিং লাইট। এবার চোখে পড়ল ভিন্ন ধরনের লাইট। এ ধরনের লাইটের আমদানি বা ব্যবহারও বেশীদিন আগে শুরু হয়নি। এলইডি টিউবগুলি সাধারণত ১০/২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মাত্র ৬ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ফেরিওয়ালারা বিশেষ করে শহরে দোকানদারী করে তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরনের লাইট ব্যবহার করে আসছে। যেমন আজ থেকে ২০ বছর আগের প্রেক্ষাপটে গেলে আমাদের স্মৃতিতে উদ্ভাসিত হবে চানাচুরওয়ালা আর বাদাম ওয়ালাদের বড় বড় কুপি বাতি। আর যেসব ফেরিওয়ালাদের অবস্থা ভাল তারা ব্যবহার করছিল বড় বড় হ্যাজাক বাতি। যার আলো অনেক উজ্জ্বল। এখনও বিদ্যুৎ বিহীন এলাকায়, চর অঞ্চলে মাছের ব্যাপারী ও অন্যান্য ফেরিওয়ালারা কুপি ও হ্যাজাক ব্যবহার করছে। যদিও সংখ্যাটা কম।
শহরের ফেরিওয়ালাদের আজ থেকে আনুমানিক দশ বছর আগে তারা ব্যাটারি দিয়ে গাড়ীর বাতি বা ছোট ১০/২০ ভোল্টের লাইট ব্যবহার করত। এ ধরনের লাইট এখনও গাড়ীতে ব্যবহার হয়। তখন ব্যাটারি দিয়ে টেপরেকর্ডারও চালানো হত। আর এখন চালানো হয় এমপি থ্রি প্লেয়ার। এগুলো আবার প্যান ড্রাইভ থেকে চালানো হয়। আগের ক্যাসেট প্লেয়ার থেকে বর্তমান এমপিথ্রি প্লেয়ার অনেক বেশী এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট। যেহেতু ক্যাসেট প্লেয়ারের মত বা সিডির মত এমপি থ্রি প্লেয়ার কোন মুভিং পার্টস নাই সেহেতু এ পদ্ধতি অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। রেডিওতে ক্যাসেট প্লেয়ারের মত মুভিং পার্টস না থাকার কারণে রেডিও দীর্ঘ সময় চালানো যায়। তেমনি পেন ড্রাইভ বা মেমোরি কার্ড থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ারও নিখুঁত শব্দে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায়। আর এ পদ্ধতি অনেক ফেরিওয়ালারা ব্যবহার করছে।
ফেরিওয়ালারা তাদের ব্যাটারি সোর্স থেকে লাইট জ্বালানো ও মিউজিক বাজানো ইত্যাদি কাজ করে থাকে। ব্যাটারির আকৃতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী কয়েকদিন পর পর ব্যাটারিগুলো চার্জ করা হয়। সাধারণত ব্যাটারি চার্জিং শপে এ সমস্ত ব্যাটারি ৫০/ ৬০ টাকার বিনিময়ে চার্জ করা যায়। ফেরিওয়ালাদের ভ্যানে রাখা ব্যাটারিটি হল ফেরিওয়ালাদের মোবাইল পাওয়ার স্টেশন।


ফেরিওয়ালাদের মোবাইল পাওয়ার স্টেশনের ব্যাটারি চার্জ দিতে চার্জিং শপে নিতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুইটাই খরচ করতে হয়। আমরা যদি ফেরিওয়ালার ভ্যানের ছাদে সোলার প্যানেল তুলে দেই তবে ব্যাটারি চার্জ করার জন্য ব্যাটারি নিয়ে দৌড়াতে হবে না। সোলার প্যানেল থেকে ব্যাটারি চার্জ হবে আর ফেরিওয়ালাকে ব্যাটারি চার্জ করার জন্য টাকা আর সময় খরচ করতে হবে না। তবে আশার কথা বর্তমানে অনেক ফেরিওয়ালা তাদের ভ্যানে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি ব্যবহার করছে। সোলার সিস্টেম এনজিওদের সহায়তায় আমরা স্থাপন করতে পারি। ফেরিওয়ালাদের এ ধরনের প্রয়াস বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

No comments:

Post a Comment