আমেরিকার একটি
প্রাইভেট কোম্পানি তারা মানুষকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহে ট্রিপ
দিবে। মঙ্গল গ্রহে ৮০ হাজার মানুষের কলোনি তৈরি করা হবে। মঙ্গল গ্রহে যেতে ত্রিশ
দিন ও ফিরতে ত্রিশ দিন লাগবে বর্তমান সময়ের স্পেস শীপের গতির উপর নির্ভর করে এ সময়
বিবেচনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সময় আরো কমবে বলে কোম্পানিগুলো আশাবাদী। স্পেস-এক্স
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার হাথ্রো নামক স্থানে স্থাপিত
হয়। ২০০৬ সালে নাসা বোয়িং ও স্পেস এক্স নামে দুইটি কোম্পানিকে স্পেস স্টেশনে
কার্গো পরিবহন ও ক্রু পরিবহনের জন্য কন্ট্রাক্ট করে। বোয়িং দীর্ঘদিন মহাকাশ ফ্লাইট
নিয়ে কাজ করছে। তাদের জন্য স্পেস স্টেশনে ফ্লাইট পরিচালনা করাটা কেবলমাত্র
চুক্তিবদ্ধ বাণিজ্যিক কাজ। স্পেস-এক্স কোম্পানিটি চিন্তা ধ্যান ধারনা মূলত: আর্থিক
ভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা। নাসার চুক্তিবদ্ধ
ফ্লাইটের পাশাপাশি তারা চাচ্ছে স্পেস স্টেশনে বেড়িয়ে আসার জন্য ফ্লাইট চালু করা।
চাঁদে ফ্লাইট চালু করা। অতঃপর ২০৩০ সালে মঙ্গল গ্রহে কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালু করা।
স্পেস-এক্স
প্রাইভেট কোম্পানির সিইও ও সিটিও(চীফ টেকনিক্যাল অফিসার) ইলন মাস্ক হলেন টেসলা
মটরের সিইও এবং পৃথিবীর ৮৩ তম সেলফ মেইড বিলিয়নিয়ার। একজন টেক ব্যবসায়ীর জন্য এ
ধরনের চিন্তাটা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি। তাকে এ সুযোগ ও অনুমতি দিয়েছে স্বয়ং আমেরিকার
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও আমেরিকার সিনেটররা। এ কোম্পানিটি ফ্যালকন-১ ও ফ্যানকন-৯
এর প্রায় ১২ টি ফ্লাইট সফলভাবে পরিচালনা করেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ৬ টি ফ্লাইট
সফলতার সাথে পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে চারটি ফ্লাইট রিইউজ করার জন্য পৃথিবীতে ফেরত
আনিয়ে ল্যান্ডিং করিয়েছে।
কোম্পানিটি ২০১২
সালে ড্রাগন স্পেস ক্রাফট সফলতার সাথে মহাকাশে পরীক্ষামূলক ভাবে পাঠায়।
ইলন মাস্ক
বিভিন্ন সময় বলেছেন কোম্পানিটি তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এটা লাভজনক হবে কিনা তা
তার জানা নেই। তার যাবতীয় সঞ্চয় এই কোম্পানি ঢেলেছেন। এই কোম্পানির প্রাথমিকভাবে
তিনটি টেস্ট ফ্লাইট ক্রাশ করে। এতে ২০০৮ হতে ২০১০ পর্যন্ত চরম সংকটময় অবস্থা পার
করে। এমনকি এক পর্যায়ে তার একটি মাত্র রকেট বাকী থাকে। সেটি ফেল করলে পুনরায় রকেট
বানানোর জন্য তাকে গুগল কোম্পানির কাছে তেসলা কার কোম্পানি বিক্রি করতে হত। এমনকি
তেসলা মটর কোম্পানি বিক্রির জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যমান নির্ধারণ করা ছিল। যাক
পরবর্তীতে মিশন ফেল করার মত মহাবিপদ থেকে কোম্পানিটি রক্ষা পায়। নাসার অনেক অভিঞ্জ
ইঞ্জিনিয়াররা তার দলে যোগ দেয়। ২০০২ সালে কয়েক শত জনবল নিয়ে চালু হওয়া কোম্পানিটি
বর্তমানে ৫০০০ এর উপর জনবলের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে ইলন মাস্কের ধারনা পৃথিবীর
সমস্ত স্থানে ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ ও টেলি কাস্টিং করার জন্য
এখনও ৪০০০ স্যাটেলাইট অরবিটে স্থাপন করার চাহিদা রয়েছে। এর জন্য ৪০০০ বার লঞ্চিং
করতে হবে। পুরাতন স্যাটেলাইট সার্ভিসিং করা ও অতি পুরাতন স্যাটেলাইট ডি কমিশনিং
করার কাজও আছে। মহাকাশে কাজের প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে।মহাকাশে ব্যবসা আরো জমজমাট
হবে এটা ইলন মাস্ক ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। শুধু বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্যাটেলাইট লঞ্চ
করেই তার কোম্পানি বিশাল র্যাভিনিউ পাবে বলে তার ধারনা।
২০০২ সালে ইলন
মাস্ক একাধিকবার রাশিয়া গমন করে। রাশিয়ার নভোচারীরা অত্যন্ত হাস্যকর ও অবাক ভাবে
তাকে মূল্যায়ন করে। একজন ব্যক্তির কোম্পানি মহাকাশে ফ্লাইট চালাবে এটা হজম ও
বিশ্বাস করতে তাদের কস্ট হয়। তার কাছে রাশিয়া প্রতিটি রকেটের দাম চায় ৮ মিলিয়ন
ডলার। ইলন মাস হিসাব করে দেখল এর ৩% মূল্য দিয়ে রকেট তৈরি করা সম্ভব। রকেট তৈরিতে
অনেক অনেক কোম্পানি অনেক ধরনের কম্পোনেন্ট সাপ্লাই করে। এতে রকেটের দাম বেড়ে যায়।
ইলন মাস্ক তাই তার ওয়্যার হাউজে রকেটের ৮৫% মালামালই নিজেরা তৈরি করা শুরু করে।
এতে তার খরচ অনেক কম হতে লাগল। রাশিয়ার দাম হতে রকেট প্রতি দাম দশগুণ কমে গেল এবং
তাতেও ৭০% গ্রস প্রোফিট হল। এ কারণে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের চিন্তাটা আরো সহজ হল। ২০০৪
সালে নাশা তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে। ২০১১ সালে নাশা তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ
করে দেয়। নাশা স্পেস স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ স্পেস-এক্স আর আমেরিকার বোয়িং কোম্পানিকে
দিয়েছে। অপরদিকে স্পেস-এক্স ও বোয়িং কেউ নভোচারী পরিবহনের সক্ষমতা অর্জন করতে না
পারায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার নভোযানের মাধ্যমে আমেরিকার নভোচারীদের মহাকাশে
পাঠানো ও ফেরত আনার জন্য নভোচারী প্রতি ৮২ মিলিয়ন ডলার বা ৬৫৬ কোটি টাকার খরচ
রাশিয়াকে দিবে। রকেট রিইউজ কারার কারণে স্পেস এক্সের প্রতি লঞ্চে খরচ হচ্ছে ৩২০
কোটি টাকা। অন্যান্য দেশে যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠাতে প্রতি লঞ্চে খরচ ১৫৭ মিলিয়ন
ডলার বা ১২৫৬ কোটি টাকা। এটা আরো কমানো যাবে বলে ইলন মাস্ক আশ্বাস দিয়েছে। তার
১০০/২০০ যাত্রীর ফ্যালকন হেভি কর্মাশিয়াল ফ্লাইট চালু হলে ধারনা করা যায় বাংলাদেশী
এক কোটি টাকায় মহাকাশ ভ্রমণ সম্ভব হবে। আমার ধারনা ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশ থেকেও
অনেক সামর্থবান ব্যক্তি মহাকাশের স্পেস স্টেশন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। যেভাবে
আরবের যুবরাজ বেড়িয়ে এসেছিল।
ইলন মাস্কের
মাথায় আরেকটি বিষয় ঢুকে তা হল রকেটকে রিইউজ করা। এর জন্য সে এমন প্রযুক্তি তৈরি
করে যাতে করে অক্সিলারী রকেট ও মুল রকেট নির্দিষ্ট উচ্চতায় স্পেস ক্রাফটকে
পৌঁছানোর পর নিজে নিজেই লঞ্চিং প্যাডে ফেরত আসে। এতে রকেট রিইউজ করার পথ সুগম হয়।
ফেরত আসা রকেটটি রিফুয়েলিং করে পুনরায় এক ঘন্টার মধ্যে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত
করা যায়। স্পেস ক্রাফট ও রকেটের জন্য তার কোম্পানি স্থির হোবারিং ও ভার্টিক্যাল
টেক অফ/ল্যান্ডিং টেকনিক আবিষ্কার করে। এতে রকেট বা স্পেস ক্রাফটকে যে কোন গতিপথে
যে কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রকেট ও স্পেস ক্রাফট রিইউজ করার কারণে শুধুমাত্র
জ্বালানীর খরচ ব্যয় করে যুক্তিসংগত টাকা খরচ করে ধণ্যাঢ্য ব্যক্তিদের স্পেস স্টেশন,
চাঁদ ও মঙ্গলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে ঘুরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
স্পেস-এক্স আমেরিকার কেইপ ক্যানাভেরাল এয়ারবেজ স্টেশন রকেট লঞ্চিং এর কাজে ব্যবহার
করছে। ইলন মাস্ক চাঁদ ও মঙ্গলে যাওয়ার গতিপথে অনেকগুলো স্পেস স্টেশন বানানোর
পরিকল্পনা করেছে। এগুলো চাঁদে বা মঙ্গলে যাওয়ার জন্য রিফুয়েলিং, স্পেস
ক্রাফটে সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত ও বানিজ্যিক ফ্লাইটের যাত্রীদের যাত্রা
বিরতিতে ব্যবহার করা যাবে। কোম্পনিটি রকেটের জ্বালানীরও পরিবর্তন এনেছে। তারা
লিকুইড অক্সিজেনের বদলে মিথেন গ্যাস ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। এতে চাঁদে বা
মঙ্গল গ্রহে যেহেতু কার্বন ডাই অক্সাইড ও সীমিত অক্সিজেন পাওয়া যায় তাই পৃথিবী
থেকে জ্বালানী না নিয়ে চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে রকেটের জ্বালানী প্রস্তুত করা সম্ভব।
ব্যক্তিগত
চিন্তায় ও উদ্যোগে মহাকাশ ভ্রমণ, চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে যাওয়া সচ্ছলদের
জন্যে এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব হতে চলেছে। আমি অনেক সংক্ষেপে বিবরণ দিলাম এরূপ
একটি মজাদার বিষয়ে জানতে চাইলে স্পেস-এক্স এর ওয়েব সাইট www.SpaceX.com ভিজিট
করতে পারেন। ইউটিউবে এ বিষয়ে অসংখ্য ভিডিও রয়েছে। তাতেও চমকপ্রদ সব তথ্য পাওয়া
যাবে।
No comments:
Post a Comment