তপু একজন টগবগ যুবক। বিভিন্ন জেলায় তার
যেতে হয়। তার ছোট ব্যবসা। পণ্যের মার্কেটিং কাজের জন্য তার এই ছোটাছুটি। সে একটা
কার কিনবে তার ইচ্ছায় রেখেছে। ব্যবসাটা কেবল দাড় করানোর অবস্থায় আছে মূলধন কম। তাই
এখনই কার কিনে টাকা আটকিয়ে কি লাভ। সে কল্পনা করে ঢাকা থেকে ট্রেনে রাজশাহী গেল।
পথে সে ট্রেনে রাজশাহী আসার কাছাকাছি সময়ে তার স্মার্ট ফোন থেকে সার্চ করে দেখে
নিল রাজশাহী স্টেশনের কাছাকাছি শেয়ার কার পার্কিং আছে কিনা এবং কোন কার আছে কিনা।
সে দুইটি কারের উপস্থিতি দেখল। একটি কার বুকিং দিল। গাড়ীর নম্বর ও পাকিং স্লটের
নম্বর তার কাছে চলে আসল। ট্রেন থেকে নেমেই শেয়ার কারের পাকিং এর কাছে চলে গেল।
গাড়ীর নম্বর মিলিয়ে নিল। গাড়ীর সামনের উইন্ডশীল্ডের কোনে তপু সাহেব শেয়ার কারের
রেজিস্ট্রেশন কার্ডের বার কোডটি ধরল। কারটি দরজা আনলক হল। কার খুলে ইগনিশন চাবি
দিয়ে কারটি চালু করল। আগামী তিনদিন কারটি চালিয়ে বেড়াবে। তারপর যখন ঢাকা যাবে তখন
স্টেশনের পাকিংএ রেখে গেলেই চলবে। একটানা রাখতে না চাইলে মোবাইলের গুগল ম্যাপে
সার্চ দিয়ে কাছাকাছি পাকিংএ গাড়ীটি রেখে দিলেই হল। আর মনে করে কারটির চার্জিং
কর্ডটি লাগিয়ে গেলে আরেকজন যখন কারটি চালাবে তখন গাড়ীটি ফুল চার্জ পাবে। শেয়ার কার
এমনই একটা কনসেপ্ট গ্রাহকরা গাড়ীর মালিক নয় কিন্তু ভাড়ায় দেশের যে কোন জায়গায় যে
কোন কোম্পানির শেয়ার কার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ব্যবহার করে সুবিধাটি ভোগ করা যাবে।
এটা অনেকটা এটিএম কার্ড দিয়ে যে কোন স্থান থেকে টাকা উঠানোর মত। যে কোন স্থানে কার্ড
ব্যবহার করে নিজের মত গাড়ী চালানো ও ব্যবহার করা। আমাদের দেশের ভাড়ায় কারে চালকের খরচসহ
দিতে হয় তারপর চালকের কারনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংকটাপন্ন হতে পারে। চালকে
চালানোর মান খারাপ হতে পারে। খরচ কম ও নিরাপত্তার কারনে চালকবিহীন শুধু কার
শেয়ারিং অনেক বেশী সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। যারা গাড়ী চালাতে জানেন তাদের জন্য খুবই
মজাদার বিষয় এই কার শেয়ারিং।
পৃথিবীর অনেক দেশেই কার শেয়ারিং অনেক
আগেই চালু হয়েছে। জার্মানি এ বিষয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তারপর ব্যাপক ব্যবহার শুরু
হয়েছে। এটাকে বলা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি। এটার জন্য সাধারণত ইলেকট্রিক কার
ব্যবহার করা হয়। পার্কিং স্থানগুলোতে চার্জিংর এর ব্যবস্থা করা থাকে। প্রতিটি গাড়ী
জিপিএস ট্র্যাকিং আছে। ব্যবহারকারী মোবাইলে বুক করে পাকিংএ এসে গাড়ীটি নিয়ে যে কোন
জায়গার পাকিংএ ছেড়ে দিলেই হল। বৈদ্যুতিক কার হওয়ার কারণে তৈল উঠানো ও পেমেন্টের
কোন সমস্যা নেই। শেয়ার কারের বিল ক্রমাগত গ্রাহকদের জামানত হবে কর্তন হতে থাকবে। টাকা
কমে গেলে পুনরায় মোবাইলের মত রিচার্জ করে নিলে হবে। এছাড়াও ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড
হতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা থাকবে। কোম্পানির কম্পিউটার জিপিএস ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে
কত কিলোমিটার চলল ও কত সময় ব্যবহার হল ইত্যাদি তথ্যের উপর শেয়ার কারের বিল
গ্রাহকের প্রিপেইড একাউন্ট হতে কর্তন করতে থাকবে। যখন যে কার চালাবে তখন সেই কারের
বীমার সাথে গ্রাহক যুক্ত হবে। এক্সিডেন্ট করলে গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে শেয়ার
কার রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রাহককে ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হতে হবে। কারণ শেয়ার
কারের রেজিস্টার্ড ব্যক্তি গাড়ীটি চালাবে ও ব্যবহার করবে। কারণ এটা চালক ছাড়া নিজে
ব্যবহার করার ব্যবস্থা কেউ যদি গাড়ী অন্যকে দিয়ে চালাতে চান সেক্ষেত্রে তাকে আলাদা
পেমেন্টে শেয়ার কার নিজের নামে ভাড়া করে শেয়ার কারের রেজিস্টার-কৃত কাউকে দিয়ে
চালনা করাতে হবে। গাড়ীর নিরাপত্তা ও নিজের নিরাপত্তা অনেক জরুরী বিষয়। ২০১২ সালে
উইকিপিডিয়ার হিসাব মোতাবেক পৃথিবীর ২৭টি দেশের প্রায় ১০০০ শহরে প্রায় ১৭ লক্ষ
গ্রাহক কার শেয়ারিং সার্ভিস ব্যবহার করছে। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। নভেম্বর
২০১৪ সালে ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকার ৭,৬৭,০০০ গ্রাহক ১১০০০ গাড়ীর মাধ্যমে তারা
সার্ভিস নিচ্ছে। এখানে দেখা যাচ্ছে ৭৬,৭০,০০ গ্রাহক রাস্তায় ৭,৬৭,০০০ কার না নামিয়ে নিজের মত একেক সময় একেক ধরনের কার ব্যবহারের আনন্দ
পাচ্ছে। এতে তার খরচ কমে যাচ্ছে। কার শেয়ারিং এক একটি কার ৬৯৭ জন ব্যবহার করছে।
অবাক ব্যাপার তাই না। এটা পরিবেশ বান্ধব
এজন্য যে এটা বিপুল পরিমাণ কার বিক্রয় কমিয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কারের অপটিমাম
ব্যবহার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের মত ছোট দেশের কম রাস্তা ঘাটে কার শেয়ারিং অনেক বেশী
পরিবেশ বান্ধব ও উপকারী হবে। ২০২০ সালে এটা ২.২ বিলিয়ন ব্যবসা হিসাবে দাঁড়াবে বলে
বিশেষঞ্জরা মনে করছেন। বর্তমানে সিমের মাধ্যমে ট্র্যাকিং, জিপিএস ট্র্যাকিং ও বিটিআরসির আরএফআইডি
ট্র্যাকিং এর কারণে গাড়ী চুরির সম্ভাবনা কমে গেছে। তাই বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা ও
উদ্যোগতারা এটা চালু করতে পারেন।
No comments:
Post a Comment