আমার দীর্ঘদিন
সরকারী চাকুরীর পর আমি একটা বিষয়ে মারাত্মক ভাবে মর্মাহত, আর তা হল সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর
রক্ষণাবেক্ষণ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হতে অনেক বেশী নিন্মমানের। প্রথম যে ব্যাপারটি
আমার নজরে এসেছে তা হল সরকারী স্থাপনা নিয়মিত রং করা বা মেরামত করা হয় না।
আমলাতান্ত্রিক বা যে কোন জটিলতায় কোর্য়াটারগুলো প্রয়োজন মোতাবেক মেরামত ও
উন্নয়ন হয় না। কেবলমাত্র আমার দেখা ও জানা মতে সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগুলো
নিয়মিত রং করা হয়। তারপরও বাজেটের অভাবে সেখানকার কোয়ার্টার ও বাসা বাড়ীগুলো
নিয়মিত রং করা বা মেরামত করা হয় না। সরকারী যে কোন কাজে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের
জন্য নজরদারী করা শক্ত একটি কাজ। প্রতিটি দালান রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রতি
দালানের মূল্য অনুযায়ী ১০% টাকা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রতি বছর সরকারের বরাদ্দ
দেয়ার কথা। এটা সরকার কখনও বরাদ্দ করতে পারে না। এক কোটি টাকার দালানের মেরামত
ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর ১০ লাখ টাকা করে সরকার কখনোই বরাদ্দ করতে পারে
না। যা বরাদ্দ করে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বড় কর্তাদের ও অফিস কমপ্লেক্সের জন্য
ব্যয় করে প্রান্তিক কর্মচারীদের কোয়ার্টারের জন্য আর কোন বরাদ্দ থাকে না।
আমার দেখা মতে এমন
ও দালান আছে যা
নির্ন্মান করার পর ২০/২৫ বছরের মধ্যে কোন রং বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। হয়ত রং বা
রক্ষণাবেক্ষণ না করে ২৫/৩০ বছর পর পরিত্যক্ত করে অকেজো ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে
সরকারের শত বছর আয়ুর একটি দালান ৩০ বছরে পরিত্যক্ত হয়ে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
আমার মনে হয়।
সরকার একটি স্থাপনা তৈরি করে তার রক্ষনাবেক্ষনের চাপ একবারে ভুলে যেতে পারে।
এর জন্য প্রয়োজন দুই ধাপে কাজ করা। সরকারী যে কোন স্থাপনা অস্থায়ীভাবে প্রিফেব
হিসাবে ১০ বছরের জন্য তৈরি করা উচিত। প্রিফেবের পর মূলত: বোঝা যাবে কয়টি
সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিবার নিয়ে সরকারী বাসস্থানে থাকবে। সরকারী
স্থাপনার কি পরিমাণ স্কয়ার মিটার অরিজিন্যালী ব্যবহার হবে। প্রিফেব ক্রমান্বয়ে
পরিবর্তন করে স্থায়ীভাবে ৪০/৫০ বছর আয়ুষ্কাল সম্পন্ন দালান বানাতে হবে। দালান
বানানোর উপাদান হবে গ্লাস, এলুমিনিয়াম, এসএস পাইপ, শক্ত প্লাস্টিক ও টাইলস। মূল বিষয় হল আমরা
যাই ব্যবহার করি তা যেন কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর কোনরূপ পরিচর্যা বা রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া
ব্যবহার করা যায়। আমরা অনেকেই লক্ষ করে দেখব অনেক মসজিদ অনেক আগে থেকেই ভিতর বাহির
সম্পূর্ণ টাইলস করে নিয়েছে। এগুলো বছরের পর বছর একই রকম চেহারা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রং পরিবর্তন হয়নি। একটা গর্জিয়াস লুক রয়েছে। বছর বছর তা রং করা বা রক্ষণাবেক্ষণের
প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রাথমিক ভাবে প্রায় দ্বিগুণ বেশী খরচ গেলেও প্রতি দুইবছর পর পর
রং করা বা আস্তর মেরামত বাবদ খরচ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে টাকা সেইভ হবে। মনে করি
একটি দালান এক কোটি টাকায় তৈরি করা যেত। তা তৈরি করতে দুই কোটি টাকা খরচ হল
এমনভাবে যাতে ভিতর ও বাইরে টাইলস করা হয়। এখন এক কোটি টাকা দালানে দশ বছরে নিয়ম
অনুযায়ী খরচ করতে হবে প্রতি বছর ১০% হিসাবে আরো এক কোটি টাকা। এভাবে সাধারনত বছরে
বছরে খরচ ও সিস্টেম লস চলতে থাকে। কিন্তু সরকার একবারে এক কোটির স্থানে দুই কোটি
খরচ করে উন্নতমানের রক্ষনাবেক্ষনমুক্ত দালান বানালে কমপক্ষে ৪০/৫০ বছর ব্যাপী বা
তারও বেশী আর কোন রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নাই। এতে দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের লাভ তা হল বছর
বছর রক্ষণাবেক্ষণের সিস্টেম লসে টাকা অপচয় হল না। অপরদিকে ব্যবহারকারী কর্মচারীদের
লাভ তারা মান সম্পন্ন উন্নত দালানে থাকতে পারল। এভাবে একবার বিনিয়োগে ৪০/৫০ বছর পর
একটা দালান ব্যবহার করে তা ভেঙ্গে ফেললেই চলবে। তাই সিমেন্টের আস্তর, লোহার বা
কাঠের দরজা জানালা দিয়ে কোন দালান করা যাবে না। দালান করতে হবে এমন উপাদান দিয়ে যা
৪০/৫০ বছরে কিছু হবে না।
যত টাকাই লাগুক
সরকারী দালানের ভিতর ও বাইরে টাইলস করা প্রয়োজন। সমস্ত দরজা জানালা হবে গ্লাস ও থাই
এলুমিনিয়ামের তৈরী দীর্ঘস্থায়ী। সমস্ত রেলিং হবে এসএস পাইপের। সমস্ত টয়লেট
ফিটিংসগুলো হবে উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী। ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও তারগুলি হবে এরূপ যেন
তা ১০০ বছরে কোন মেরামত বা পরিবর্তনের প্রয়োজন না হয়। অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে কম
এ্যাম্পিয়ারের তার খরচ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানে তা করা হবে না। তার গুলো
এমন হবে যে কোন পয়েন্ট থেকে রুম হিটার চালনা করলেও যেন তার, সার্কিট ব্রেকার ও সুইচ পুড়ে না যায়।
সরকারী
প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে যে কোন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্ষম শুরু করবে ১০ বছরের
জন্য প্রিফেব বাসস্থান দিয়ে। প্রিফেব বাসস্থানগুলো ব্যবহার করে করে বোঝা যাবে
কতগুলি ও কি পরিমাণ স্থাপনার প্রয়োজন। প্রিফেব দ্রুত তৈরি করা যাবে। দ্রুত খুলে
নেয়া যাবে। দেখতে সুন্দর ও হাইজেনিক। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ঢাকার
বাইরে দেখা যায় অনেক সরকারী দালান আছে। কেউ ব্যবহার করছে না কিছুদিন পর অকেজো হয়ে
যাচ্ছে। এভাবে হিসাব ছাড়া সরকারী স্থাপনা তৈরি উচিত নয়। অনেক কর্মকর্তা অনেক আগ্রহ
নিয়ে সরকারী অর্থ খরচ করে অনেক স্থাপনা তৈরি করে থাকেন। তিনি যখন বদলী হন বা অবসর
যান তখন সেই স্থাপনাগুলো অব্যবহৃত হয় বা অকেজো হয়। এজন্য যখনই কোন কর্মকর্তার
মাথায় স্থাপনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে তখনই প্রয়োজন প্রথম ধাপে প্রিফেব তৈরি করা।
দশ বছর ব্যবহারের পর মূলত একান্তই অনুভূত হবে স্থায়ী এবং কি আয়তনের দালান তৈরি করতে হবে। তখনই আমার আলোচনা
মোতাবেক এমন দালান বানাতে হবে যা কিনা বছর বছর রং করা বা মেরামত করতে হবে না।
একেবারে ৪০/৫০ বছর পর ভেঙ্গে আবার নতুন করে তৈরি করে নিলে হবে। আমাকে একবার আমার
আত্মীয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বলেছিলেন আমরা দালানের আয়ু ১০০ বছর বিবেচনা করলেও আমাদের
ক্রমাগত আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন,
বর্ধিত করন, রুচির
পরিবর্তন, টেকনোলজির
পরিবর্তন ইত্যাদি নানাবিধ কারণে ৩০/৪০ বছরের বেশী কোন স্থাপনা রাখা যায় না। তার
আগে ভাঙ্গা পড়ে। তাই আমাদের প্রয়োজন প্রথম ধাপে সরকারী অর্থ অপচয় না করে প্রিফেব
তৈরি। প্রিফেব আয়ু শেষ হলে স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রয় করা। তারপর ৪০/৫০ বছর মেয়াদি
রক্ষনাবেক্ষনমুক্ত দালান তৈরি। ৪০/৫০ বছর পর দালান অকেজো হলে নিলামে বিক্রয় করে
দিতে হবে। নিলাম গ্রহনকারীরা দালান ভেঙ্গে বিভিন্ন উপাদান কাজে লাগাবে। পুরাতন
দালান মেরামত করে সরকারের কাজে ব্যবহার করতে গেলে তাতে সিস্টেম লসের একটা জায়গা
তৈরি হবে। তাই বড় ধরনের খরচের প্রয়োজন হলেই সেই স্থাপনা ভেঙ্গে নতুন ভাবে তৈরি
করলে সরকারী অর্থের অপচয় হ্রাস পাবে। আর এভাবেই আমরা আমাদের সরকারী সম্পদের
কার্যকরী উন্নয়ন করতে পারব।
No comments:
Post a Comment