Pages

Thursday, December 1, 2016

গবেষনার নতুন ধারা: উন্মুক্ত গবেষনা


মনে করুন আপনি চাচ্ছেন একটা গাড়ী বানাবেন। তা পানিতেও চলবে রাস্তায়ও চলবে। আপনি চাচ্ছেন গাড়ীটি পরিবেশ বান্ধব ১০০% রিসাইক্যাল সামগ্রী দিয়ে তৈরি হবে। গতিতে সেরা হবে। জ্বালানী হিসাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার হবে। এ গাড়ীটি যথেষ্ট পরিমাণ টেকসই ও উন্নত ফিচারের হলে আপনি এটি বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করে আপনার কোম্পানি বাজারজাত করবে।
আমরা গতানুগতিক ধারায় আমরা যা করি তা হল: কিছু মেধা হায়ার করে তাদের একটা টিম করে আরএন্ডডিতে কাজে লাগানো হয়। সাধারণত এ ধরনের আরএন্ডডি লুকিয়ে গোপনে করা হয়। এর পিছনে কারণ হল প্রযুক্তিটিতে সারপ্রাইজ দেয়া। প্রযুক্তি চুরি করে এটি যেন অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে। গোপনে গবেষণা করাটা মূলত: গবেষকদের দুর্বলতার পরিচায়ক। কারণ তারা গবেষণায় আত্মবিশ্বাসী না বলে তারা গবেষণা মধ্যবর্তী তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক। গবেষণা কাজটি উন্মুক্ত করে দিলে আরো নতুন নতুন আইডিয়া ও ইনপুট আসতে থাকবে এবং অতি দ্রুত অতি উন্নত টেকনোলজির আগমন ঘটবে।
পৃথিবীর ৮৩ তম সেলফ মেইড বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক হাইপার লুপ নামক একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। যারা কিনা প্রচলিত ট্রেনের চেয়েও কম খরচে বৈদ্যুতিক বাহন তৈরি করবেন। যা কিনা বর্তমান বাণিজ্যিক বিমান থেকে দ্রুত মানুষ ও মালামাল বহন করতে সক্ষম হবে। লস এঞ্জেলস থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ৬০০ কি: মি: ৩৫ মিনিটে ২০১৮ সালের প্রথমভাগে পরীক্ষামূলক যাতায়াত শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই গবেষণা স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী প্রজেক্টের মাধ্যমে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর হাজার হাজার মেধা সম্পন্ন গবেষক এর সাথে যুক্ত। স্থায়ী গবেষকরা তাদের গবেষণার অগ্রগতি প্রতিনিয়ত উন্মুক্ত করে দিচ্ছে আর অস্থায়ী ভলান্টিয়ার তাদের মতামত দিয়ে গবেষণার অগ্রগতি আরো দ্রুত ও সমৃদ্ধ করে দিচ্ছে। হাইপার লুপ চালু হলে পরিবহন জগতে একটা বিপ্লব সৃষ্টি হবে।
আমাদের দেশের কোম্পানিগুলি জন্য উন্মুক্ত আরএন্ডডি এর মাধ্যমে তাদের কোম্পানির প্রডাক্টের মান উন্নয়নের জন্য আরএন্ডডি করতে পারে। তাদের প্রডাক্টের মান আরো কিভাবে উন্নত করা যায় তার জন্য মুক্ত আইডিয়া চাইতে পারে। আইডিয়া প্রদান কারীদের বেশ দামী সন্মাননা প্রদান করা যেতে পারে। এভাবে ইন্টারনেট, ফেইসবুক ও আরো অন্যান্য মাধ্যমের দ্বারা কোম্পানিগুলো তাদের প্রডাক্টের আর এন্ড ডি করার জন্য ইন্টারনেটরে মাধ্যমে উন্মুক্ত গবেষণা চালাতে পারে। কোম্পানিরা অনেক অনেক টাকা দিয়ে গবেষক না পুষলেও চলবে। কারণ অনেক গবেষকই দিনের পর দিন বেতন ভাতা ভাল পেয়ে পেয়ে আর উৎপাদনশীল থাকে না। তাই এক দুইজন স্থায়ী গবেষক রেখে বাকী প্রডাক্টের আরএন্ডডি উন্মুক্ত করে পুরষ্কার ঘোষণা করলেই আইডিয়ার অভাব হবে না। ব্যবসায়ী প্রডাক্ট নিয়ে গবেষণা করে বাজারের প্রচলিত সকল প্রডাক্টের সেরা প্রডাক্ট তৈরি করতে পারলে সেই ব্যবসায়ীর আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। বিঞ্জাপন ছাড়াই তার প্রডাক্টের কাটতি ভাল হবে।
যে কোন ব্যবসায়ীর কাছে এ ধরনের আইডিয়া অত্যন্ত আত্মঘাতী মনে হতে পারে কিন্তু আধুনিক কালের বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের কাছে ব্যবসাটা গোপনীয়তা নয়। উন্মুক্ত গবেষণার মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি প্রডাক্ট তৈরি করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাই তার ব্যবসার ব্যতিক্রমধর্মী দিক।
আধুনিক কালে আমাদের বিভিন্ন প্রডাক্টের মান উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত গবেষণা করে প্রতিনিয়ত আমরা প্রডাক্টের মান উন্নয়ন বাড়াতে পারি। কিছু সংখ্যক বেতনভুক গবেষকের পাশাপাশি ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা আইডিয়া ও গবেষক হায়ার করা যেতে পারে।
এতে ব্যবসায়ের সফলতা নিয়ে টেনশন করার প্রয়োজন হবে না। যে কোন প্রডাক্টের মূল্য কম রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাই গবেষণায় বেড়িয়ে আসবে কিভাবে প্রডাক্টের মূল্য কম রাখা যাবে।
ইলন মাস্কের হাইপার লুপ পরিবহন ব্যবস্থার কনসেপ্ট হল বায়ুশূন্য নলের মধ্য দিয়ে বিমান সদৃশ ক্যাপসুল চালনা করা। এই ক্যাপসুল গুলো জেট ইঞ্জিনের মত ইলেকট্রিক প্রপেলারের মাধ্যমে বাতাস পিছনে ধাক্কা দেয় আর প্রচণ্ড দ্রুতবেগে ক্যাপসুল আগাতে থাকে। ক্যাপসুলের আকার বেশী বড় হবে না কারণ গতি বেশী করতে হলে আকার ছোট রাখতে হবে। এ ধরনের জটিল গবেষণাটি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হওয়ায় এটি অতি দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। হয়ত এমন দিন আসবে আমরা দেশের একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্তে অত্যন্ত সুলভে এক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা যাতায়ত করতে পারব।
ইলন মাস্কের হাইপার লুপ নিয়ে উন্মুক্ত গবেষণার প্রচলনটি মানব কল্যাণে ও পৃথিবীর উন্নয়নে ব্যাপক কাজে লাগবে। তবে মজার বিষয় হল উন্মুক্ত গবেষণা শুধুমাত্র মানব কল্যাণে করলেই সায় পাওয়া যাবে মারণাস্ত্র তৈরিতে ভলান্টিয়ার পাওয়া যাবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।


No comments:

Post a Comment