Pages

Friday, April 1, 2016

প্রবাসী ও শহুরেদের গ্রামের জমি নষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় বাড়ী তৈরী

করিম সাহেব লন্ডনে থাকেন। দুই/তিন বছর পর পর এক/দুই মাস থাকার জন্য বাংলাদেশে আসেন। তিনি জীবনে অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন। উপার্জনের কিছু টাকা খরচ করার জন্য তিনি তার গ্রামের বাড়ীটি বেছে নিয়েছেন। কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন। সুন্দর বাড়ী করেছেন। সবাই যেন তার বাড়ীটির প্রশংসা করে। দুর সম্পর্কের একজন আত্মীয়কে পাশেই একটা ঘর করে দিয়েছেন। যেন সে তার বাড়ীটি নিয়মিত দেখতে পারে। আমাদের গ্রামে প্রবাসী ও শহুরে অনেকেই সস্তায় জমি পেয়ে গ্রামে বিলাসবহুল আলিশান বাড়ী তৈরি করে নেন। আর শহরে ফ্লাট বাড়ীতে থাকেন। তবে গ্রামে কেন এধরনের খরচ করা। তা আর কিছুই নয়, আমি বলব লোক দেখানো। গ্রামে আপনি আপনার  জীবদ্দশায় মনে করি ৫০ বছরে প্রতি বছর তিনমাস করে থাকলেন। ৫০ বছরে ১৫০ মাস থাকলেন। ১৫০ মাস বা ৪৫০০ দিন থাকলেন। আপনি যদি আপনার গ্রামের বাসস্থানটির জন্য ১ কোটি টাকা ব্যয় করেন তবে ৪৫০০ টি দিনের এক কোটি টাকার ব্যাংকের সুদ বাদে খরচ হবে ১কোটি ভাগ ৪৫০০ দিন অর্থাৎ ২২০০ টাকা। ৯০ দিন বা তিন মাস থাকলে খরচ ১,৯৮,০০০ টাকা। আলাদা আলাদা ভাবে হিসাব করলে আসলে অনেক টাকা। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে। আপনি আলাদা বাড়ী না করে আপনার কোন আত্মীয়ের সাথে যৌথভাবে করতে পারেন। তাতে আপনার খরচ কম যাবে। আপনি যদি প্রতি বছর ছয় মাসের বেশী গ্রামে থাকেন তবে গ্রামে আপনার স্থায়ী বাসস্থান প্রয়োজন আছে। যদি ছয় মাসের কম থাকেন। তিন মাসের বেশী থাকেন। তবে কোন আত্মীয়ের সাথে যৌথভাবে বাড়ী বানালে আপনার খরচ কমবে। যেমন: দুইতলা দালান করলেন ভাগাভাগি করে। ২য় তলা আপনার জন্য রাখলেন। এতে আপনার অন্যের সাথে দালান শেয়ার করার কারণে আপনার খরচ কমে আসবে। কেয়ার টেকারের পিছনে টাকা খরচ করার হিসাব থেকে বাঁচলেন। ভবিষ্যতে যদি আপনার উত্তরোধীকারীদের গ্রামে না আসার সম্ভাবনা থাকে, তবে ধীরে ধীরে আপনার অর্ধেক দালানের মালিককে দাম নিয়ে বা দাম ছাড়া দীর্ঘদিনের সার্ভিস দেয়ার পরিবর্তে আপনি আপনার অংশীদারকে বিক্রয় বা দান করে দিতে পারবেন। তাই গ্রামে নিয়মিত না থেকে গ্রামে অর্থ বিনিয়োগ করে বাড়ী তৈরি করে ফেলে রাখলে আপনি নিজের আর্থিক ক্ষতি করছেন। আপনি অনেক ধনী হলে আমি বলব এটা করা আপনার জন্য ঠিক হচ্ছে না। কারণ আপনি অবকাশ যাপনের কেন্দ্র তৈরি করে তা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করছেন না। আপনি দেশের ক্ষতি করছেন। গ্রামের কৃষি জমি কমিয়ে আপনি তার উপর অহেতুক স্থাপনা তৈরি করে কৃষি জমির অপচয় করছেন। এ ধরনের জমির অপচয় আপনি করছেন কারণ আপনার টাকা আছে। তারচেয়ে এধরনের অপচয় না করে আপনি পারেন কারো সাথে শেয়ার করে বাড়ী তৈরি করতে। তাতে আপনি গ্রাম আপনার প্রিয় বা কাছের কারো উপকার করবেন এটা ভাল কাজ হবে। আপনি নিজে লাভবান হবেন ও অন্যকে লাভবান করবেন।

যদি গ্রামে আপনি তিনমাসেও একবার না যান তবে আপনি গ্রামে কোন স্থাপনা করাটা হবে আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় কাজ বা বোকামি। তার চয়ে বরং এখনকার প্রেক্ষাপটে টাকা খরচ করে হোটেলে বা বোর্ডিং এ থাকা বা কারো কাছে পেয়িং গেস্ট হিসাব থাকাটা ভাল। আরো ভাল হয় রিক্রিয়েশন ভেইক্যাল ভাড়া করে নেয়া। একবার পত্রিকায় দেখলাম শাররুখ খান তিন কোটি টাকা খরচ করে রিক্রিয়েশনাল গাড়ী কিনেছে। এটা একটা ভাল ব্যবস্থা। যাতায়তের জন্য টিকেট কেনার ঝামেলা নেই। হোটেল ভাড়া করার ঝামেলা নেই। কারাভান বা গাড়ীটি নিয়ে হাজির হয়ে যতদিন মন চায় থেকে গেলেন। কোন পিছু টান নেই।আবার কেয়ার টেকার রেখে বাড়ী ম্যানটেইন করার ঝামেলা নেই। ভারতীয় মেধা পাচারের উপর একটি ছবি দেখেছিলাম নাম স্বদেশ। সেই ছবিতে শাররুখ খান গ্রামে থাকতে আসনে একটা কারাভান করে। আর গ্রামে কারাভানেই থাকার আইডিয়াটা চমৎকার। হয়ত এখনো বাংলাদেশে কারাভান বা রিক্রিয়েশন ভেইক্যাল ভাড়া চালু হয়েছে। যা আমার জানা নেই। আশা করি বিলাসী প্রবাসীরা ও শহুরে ধনীরা শখের বসে আমাদের ছোট দেশের অল্প,সীমিত ও মূল্যবান জমি অহেতুক নষ্ট করবেন না।

No comments:

Post a Comment