সারা পৃথিবীব্যাপী ছাদে
সোলার প্যানেল লাগিয়ে গ্রিন এনার্জি উৎপাদন একটা আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও এ আন্দোলনের আচ লেগেছে। অনেকেই বাড়ীর ছাদে পাওয়ার স্টেশন বসাচ্ছেন। সোলার প্যানেলের জন্য জমি নষ্ট না করে ছাদে সোলার প্যানেল অত্যন্ত
লাভজনক হতে পারে। ছাদের উপর প্যানেল
বসালে ছাদ ঠাণ্ডা থাকবে আর এই দালানের কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখা যাবে।
তবে প্রশ্ন হল ছাদে
বাগান করা যায় আবার সোলার প্যানেলও লাগানো যায়। কোনটা বাংলাদেশের শহরগুলির জন্য প্রযোজ্য। জ্ঞান বিজ্ঞানের এই যুগে ছাদে বাগান। মরুভূমিতে বাগান। বরফে বাগান। পানিতে বাগান। কোনটাই কোন
জটিল নয়। প্রয়োজন কেবল
উদ্দোগ নেয়া। সারা পৃথিবীর
জলবায়ু উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা হয়ত পৃথিবী
বিচরণ করে গেলাম। আমাদের বংশধররা কি এই
উষ্ণ পৃথিবীতে জীবন ধারণ করতে পারবে? আমরা আমাদের জীবনের কথা ভাবি। বাকী দিনের কথা না ভাবলেও চলবে। ২০৫০ সালে আমার বয়স আশি হবে। যদি বেচে থাকি তবে পৃথিবীর উষ্ণতা কেমন হবে ভেবে রীতিমত ভয় লাগে। নদীনালা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। পুকুর খালে পানি কমে যাচ্ছে। পৃথিবীর পানির স্তর ক্রমে নীচে চলে যাচ্ছে। তবে আমাদের উপায় তাহলে কি?
ঘন বসতিপূর্ন শহরগুলোতে
ছাদগুলো আমরা অনেকভাবে ব্যবহার করতে পারি। কাপড় শুকানোর
জন্য। বিকালে পায়চারী করার জন্য। সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আমার কাছে মনে হয় ছাদ এখন বিদ্যুৎ
উৎপাদনে ব্যবহার না করে গাছ লতাপাতা উৎপাদনে ব্যবহার করা অতি উত্তম একটি বিষয় হবে।
কোন কোন দেশে ছাদে গ্রিনারী
লাগানো বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে এই
উপদেশ কেউ শুনবে না। অনেক দেশে যারা
ফ্লাটে বসবাস করে তারা চাইলে সরকারী অব্যবহৃত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বা নিজের জন্য চাষাবাদ
করতে পারে। বাগান করা স্বাস্থ্য
ভাল রাখার একটি হবি। ছাদে বাগান
তারাই করেন যাদের বাগান করার তীব্র আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু মাটিতে কোন স্থান নেই। তারাই ছাদে বাগানে এগিয়ে যায়। আমি আগে সব সময় ভাবতাম আমাদের দেশের সকল ছাদের উপর সোলার প্যানেল
লাগাতে হবে। কারণ দেশে বিদ্যুৎ
এর ঘাটতি রয়েছে। পরিবেশ নিয়ে
স্টাডি করে ও ছাদ বাগান নিয়ে স্টাডি করার পর আমার কাছে মনে হয় ছাদ বাগান শহরের জন্য
এসওএস আন্দোলন।
ছাদে বাগান সবাই পছন্দ
করবে তা কিন্তু নয়। ছাদে বাগানে
বেশ কষ্ট আছে। ছাদ লীজ নেয়াটা
লাভজনক করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ছাদে বাগানের
প্রথম সমস্যা হল বিনিয়োগ কৃত মূলধন সাধারণত উঠানো যাবে কিনা এটা প্রথম সমস্যা। মনে করি একটা বার মাসের আমড়া গাছ টবসহ ৫০০ টাকা। এখন যত্ন ও পৃচ্ছা করার পর তাতে ৫০০ টাকার আমড়া এক/দুই
বছরে পাওয়া যাওয়াটা ভাবনার বিষয়। এককভাবে বাগান
করাটাকে তাই লাভজনক করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর মধ্যে আমাদের দেশে অনেকেই ছাদ বাগান লাভজনক করেছেন। ছাদ বাগান লাভজনক মনে হয় বাগানের পোডাক্ট থেকে হয়নি। যা হয়েছে তা মূলত বাগানের কলমের চারা ইত্যাদি বিক্রয় করে। বাড়ীর আঙ্গিনায় গর্ত করে দুটো বীজ লাগিয়ে দিলে যেভাবে উৎপাদন পাওয়া
যায় সেভাবে টবে চাষ হয় না। টবে চাষ নিয়ম
মেনে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান নিয়ে করতে হয়। প্রতিটি কার্যক্রম
সর্তকতার সাথে করতে হয় তবেই তা লাভজনক হয়। ছাদ বাগান থেকে
যে লাভটা আমরা পাব তা টাকার অংকে বিচার করে কোন ফলাফল পাব না। কিন্তু আমরা যদি পরিবেশ বাচাও আন্দোলনের যুদ্ধের অনুভূতি নিয়ে
বিচার করি তবে আমরা ছাদে বাগান করার সার্থকতা খুঁজে পাব। আমরা সাধারণ বিষযুক্ত ও রাসায়নিক সারে উৎপাদিত শাক সবজি খাই। এখানে
আমাদের কাছে বেশ বড় একটি ব্যবস্থা রয়েছে। আর তা হল। অর্গানিক ও বিষমুক্ত খাবার খাওয়া। এতে আমাদের নিজেদের বিষমুক্ত খাবারের ঝুঁকি থেকে আমরা মুক্ত থাকব। ছাদে বাগান করার কারণে বাগানের টবের মাটি তৈরি। পানি দেয়া। ফসল তোলা। বাগানের পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ করলে শরীর হালকা পরিশ্রমের মধ্যে
থাকে। এতে শরীর ও মন ভাল থাকে। অতি সম্প্রতি
বাতের বা অরথ্রাইটিস এর ডাক্তার গন বাতের চিকিৎসায় বাগান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর রোগ থেকে বাচতে আমাদের জায়গা না থাকলে ছাদটুকুই ভরসা। আমাদের দেশের মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। আমাদের দেশের কিছু ভলান্টিয়াররা ছাদে বাগান করে দিচ্ছে। আমাদের অনেক সৌখিন বাগানিরা ছাদ বাগান তৈরি করতে তাদের সহযোগিতা
গ্রহণ করছেন। আমার মনে হয়
সেই দিনটি আর বেশী দুরে নয় যখন আমাদের কোন ছাদ পড়ে থাকবে না। আমার ছোট বেলায় আমার বাবা বছরে কয়েকবার শহর থেকে গ্রামে যেতেন। তখন বাবাকে দেখতার শুধু গাছ লাগাতেন। আজ অনেক বছর পর এসে দেখছি গ্রামের মানুষকে আর গাছ লাগাতে বলতে
হয় না। তারা বাড়ীর আসে পাশে কোন জায়গা খালী রাখছে
না। শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার একসময় কোন ছাদ
খালী পাওয়া যাবে না। সরকার বাড়ীর
মালিকদের বিনামূল্যে চারা, টব ও কম্পোষ্ট দিয়ে ছাদ বাগানের আগ্রহ বাড়ানোর
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। পরিশেষে সোলার
প্যানেল নয় বরং ছাদ বাগান হোক নগর জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম। ঢেউ টিনের ছাদ থেকে শুরু করে যেসমস্ত ছাদে ছাদ বাগান করা যায় না
সেগুলো ব্যবহার হোক সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ছাদ বাগান সফল
হবে এবং বাঁচবে আমাদের পরিবেশ এটাই সকলের কাম্য।
No comments:
Post a Comment