আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
ছাত্র ছিলাম তখন সারা পৃথিবী ব্যাপী আলোচনা চাদে মানুষ যাওয়া, বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, আনুবিক শক্তির ব্যবহার।
তারপর যখন চাকুরীতে আসি তখন শুরু হল কম্পিউটারের উন্নয়ন। তখন মানুষের মাঝে একটা
সচেতনতা কম ছিল তা হল পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ। মানুষ এখন বিঞ্জানের উন্নতি
অপেক্ষা পরিবেশ বান্ধব বিষয় নিয়ে চিন্তিত। সার ও কীটনাশক বাদ দিয়ে পরিবেশ বান্ধব
কৃষিকাজ নিয়ে চিন্তিত। পশু, পাখি কিভাবে পরিবেশ সম্মত ভাবে উন্নয়ন করা যায় তা গুরুত্ব পাচ্ছে। কিভাবে
অর্গানিক উপায়ে পশু ও পাখির খাদ্য তৈরি করা যায় তা এখনকার মানুষের চিন্তা ও চেতনায়
প্রকাশ পাচ্ছে। আমাদের অনেকেই বিজ্ঞানের নানা স্বপ্ন ছেড়ে বিপন্ন পৃথিবী রক্ষায়
গাছ গাছালি যুক্ত পরিবেশ তৈরি করা নিয়ে চিন্তিত। আর গাছ বেড়ে উঠবে প্রাকৃতিক ভাবে।
আমার এখন জানতে চাইনা গাছে কি কি রাসায়নিক সার দিব। আর কি কি বিষ দিব। আমরা জানতে
চাই কিভাবে অর্গানিক বা জৈব সারে গাছ উৎপাদন করব। আমরা জানতে চাই কিভাবে বালাইনাশক
বা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে গাছ, ফুল ও ফল রক্ষা করব।
আমরা এখন একটা কাজই করব। কোন
স্থান গাছ মুক্ত রাখব না। যে কোন জায়গায় মাটি না থাকলে টবে, বস্তায়, যে কোন পাত্রে যা সহজে
জন্মে তাই লাগাব। এতে আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ বৈশ্বয়িক উষ্ণতা অন্তত
কয়েক ডিগ্রি কমাতে পারব । স্থানীয় পরিবেশের কার্বন ডাই অক্সাইড কমিয়ে আমরা
অক্সিজেন বাড়াতে পারব।
ছাদে টবে যে কোন কিছুই লাগানো
যায়। ছাদে গাছ উৎপাদনে অনেক বেশী যত্নশীল হতে হয়। নিয়মিত পানি দিতে হয়। নিয়মিত
পরিচর্যা করতে হয়। ছাদে গাছ লাগানোর পর নিয়মিত পরিচর্যা না করলে গাছ লাগানোর
কষ্টটাই বিফলে যাবে।
আমি কয়েক মাস ধরে ছাদের বাগানের
নানা ভিডিও ও লিটারেচার পড়ে এবং আমার ছাদ বাগানের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ছাদে
বাগানের সহজ কিছু ফলের নাম তুলে ধরলাম। যা ছাদে প্রাথমিক অবস্থায় লাভজনক। ছাদে চাষ
করতে হলে যে কোন কন্টেইনার ব্যবহার করলে তার নীচে ছিদ্র করতে হবে। যাতে অতিরিক্ত
পানি বেড়িয়ে যেতে পারে। তার পর কয়েকটি ইট বা সুরকির টুকরো নীচে দিতে হবে। এগুলো
সাধারণত পানি ধরে রাখে। অত:পর অর্ধেক জৈব বা গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে টব, ড্রাম ও কন্টেইনারে
লাগালেই হয়ে গেল। এখন প্রয়োজন মাঝে মাঝে প্রয়োজন মত পানি দেয়া।
আমার কাছে মনে হয় ছাদে সহজে
বাগান শুরু করার জন্য ফলের গাছ লাগাতে পারি তা হল আম্রপালি আম, বারোমাসি আমড়া, পেয়ারা, সফেদা ও বড়ুই গাছ। এগুলো
দিয়ে বাগান তৈরির সহজ যাত্রা শুরু করতে পারি। প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিটি গাছের
পাঁচটি করে কলমের গাছ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করতে পারি।এতে ২৫টি গাছ হবে।
প্রাথমিক কাজের জন্য যথেষ্ট। ফলের গাছগুলি যত্ন আত্তি করে কমপক্ষে তিনমাস পার করে
আমরা কন্টেইনার চাষের খুঁটিনাটি আয়ত্তে আনতে পারব।
কন্টেইনারে ফল চাষাবাদের পর
আমরা কতগুলো সবজি সহজে চাষাবাদের জন্য কন্টেইনারে
লাগাতে পারি। সেগুলো হল: পুইশাক, ডাটা শাক, কলমি শাক, টমেটো, বেগুন, মরিচ ও ভুট্টা। তদুপরি লতা জাতীয় গাছের মধ্যে আমরা লাগাতে পারি জিংগা, শশিন্দা, শিম, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শসা ও লাউ।
বাগান তৈরির খরচ কমানোর জন্য
আমরা পুরাতন কৌটা, পুরাতন ব্যাগ, বাজারের ব্যাগ, পুরাতন ট্রলি ব্যাগ, পুরাতন ট্যাংক ইত্যাদিতে আমরা চাষাবাদ শুরু করতে পারি।
প্রথম অবস্থায় যে কোন আইটেম
একটি বা দুটি কন্টেইনারে লাগিয়ে চাষাবাদ শুরু করা ভাল। অল্প অল্প করে একাধিক আইটেম
বা একাধিক ধরনের চাষ করলে কোনটি ভাল হবে আর কোনটি ভাল হবে না। এতে করে কোন ধরনের
আইটেম চাষে কেমন ধরনের ব্যবস্থা নিতে হয় তা সহজে আয়ত্তে আসবে। আর একই আইটেম বেশী
পরিমাণে করলে সেই আইটেম ভাল না হলে লসের বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলার
জন্যও একাধিক আইটেম অল্প অল্প করে আমাদের চাষ করাটাই লাভ জনক। সৌখিন চাষে চাষের
ভ্যারাইটি যত বাড়বে তত বেশী তা আনন্দদায়ক ও কার্যকরী হবে। কেউ একটি/দুইটি ফসল
উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে তাতে পরিবারের সদস্যরা একঘেয়েমিতে ভুগবে। সে যাই হোক
পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য আমাদের আশে পাশে জমি বাগান কিছুই আমাদের খালী রাখা উচিত
নয়। যদি গরু ছাগল সমস্যা করে তবে গরু ছাগল নষ্ট করে না সেই গাছ লাগাব। যদি উৎপাদনে
জটিলতা তবে যা জন্মায় তাই লাগাব। তাই আসুন আর দেরি নয়। আমাদের চারিদিকের পরিবেশ
সবুজ করি ও গাছ লাগাই। পরিবেশ বাচাই। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি
করি।
No comments:
Post a Comment