আমরা যারা শহরে বাস করি আমাদের ছাদ বাগান করার মুল কারণ
আমাদের জমি নেই কিন্তু আমাদের বাগান করার হবি আছে। আমরা অনেক কষ্ট স্বীকার করে
বাগান করি। “শখের তোলায় আশি টাকা” অর্থাৎ তৎকালীন সময়ে কারো একশত টাকা রোজগার হলে
তা শখে ৮০ টাকা বা ৮০% খরচ করা কোন বিষয় নয়। শখ মানুষের উপার্জিত অর্থকে খরচ করার
অনুপ্রেরণা দেয়। আপনার বাগান করার জন্য যদি তীব্র শখ থাকে তবে বাগানের শখের জন্য
আপনি কতটুকু গার্ডেন প্রোডাক্ট পেলেন সেটা মুল বিষয় নয়। মুল বিষয় হল আপনি গাছ
ভালবাসেন ফুল ভাল বাসেন সেটা উৎপাদনে কত খরচ গেল তা আপনার কাছে বিবেচ্য বিষয় হবে
না। কারণ সুন্দর ফুল আর তরতাজা গাছগুলির কোমলভাবে বেড়ে উঠাই আপনাকে আনন্দ দিবে।
খরচ কোন বিবেচনা নয়।
আমরা যারা প্রয়োজনে ছাদ বাগান করব তাদের জন্য খরচ একটি
বিবেচনার বিষয়। আমরা বাগানে যে বিনিয়োগ করব তার অন্তত সমান সমান অর্জন হলে মন্দ
না। লাভ হিসাবে ফ্রেস সবজি আমরা লাভ করলাম। যদি বিনিয়োগ বেশী হয়ে যায় তখন আর তা
লাভজনক থাকে না। তাই লাভজনক করা প্রধান শর্ত হল বিনিয়োগ কম করা প্রয়োজন। প্রথম কাজ
হল টব বা কন্টেইনার কেনার প্রয়োজন নেই। বাসার অকেজো কনটেইনার, বোতল,
প্লাস্টিক ব্যাগ অব্যবহৃত ও ছিঁড়া ফাটা বাজারের ব্যাগ দিয়ে যাত্রা
শুরু করা যায়। ছাদের উপর লেবার দিয়ে একবারে অনেক মাটি তোলা বেশ চাপের কাজ। তার
জন্য লেবার রাখলে একদিন মাটি তুলে দিলে ৩০০/৪০০ টাকা নিবে। এখন আপনি যা করতে পারেন
বিকালে আপনার পরিবার যখন নিচে হাটতে যাবেন তখন বাগান থেকে ছেলে মেয়ে আপনি চার জনে
দুই কেজি করে আট কেজি মাটি তুলে নিলেন। তাহলে ত্রিশ দিনে উঠাতে পারবেন ২৪০ কেজি
মাটি। আপনার পরিবারের সবার প্রতিদিন বিকালে প্রত্যেকে দুই কেজি করে মাটি উঠালে
ভালই অনুশীলন হবে। ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশারের উপকার পাবেন। এখন পর্যন্ত আপনি
কনটেইনার কেনার জন্য কোন খরচ করেননি। মাটিও বিনা পয়সায় ছাদে উঠে গেল। কম্পোষ্ট যদি
আপনি তৈরি করতে পারেন তবে তাও কেনার প্রয়োজন হবে না। বাসার রান্নাঘরের কুটা বাছায়
যে আর্বজনা বের হয় তা ছয় মাস সময় পচিয়ে সহজে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। আর একান্তই
প্রাথমিক ভাবে কম্পোস্ট যোগাড় করতে ব্যর্থ হলে আমরা কেঁচো দিয়ে তৈরি ভার্মি
কম্পোস্ট ক্রয় করতে পারি। শ্রেডারে কুচি কুচি করে কাটা কাগজ আমরা মাটির সাথে
ব্যবহার করতে পারি। বাচ্চাদের হিসু করা ড্রাইপার রোদে শুকিয়ে তার তুলোগুলি
কনটেইনারে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। এতে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে।
আর হিসুর ইউরিয়া নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটাবে। বাসায় ঝাড়ু দিয়ে অনেক
ধুলা পাওয়া যায়। এগুলো ডাস্টবিনে বা বালতিতে জমিয়ে রাখুন ও পরে কম্পোস্টের সাথে
মিশিয়ে দিতে পারবেন। প্রতিদিন ছটাক ছটাক ধুলাবালি মাস শেষে কয়েক কেজি হয়ে যেতে
পারে। রান্না ঘরের অর্জন আর ছাদ বাগানের মড়া পাতা, গাছ ও
শিকড় পচিয়ে কম্পোস্ট বানিয়ে আর সেই কম্পোস্ট মাটির সাথে মিশিয়ে আমরা সহজেই ছাদ
বাগানের কন্টেইনারে মাটির সাথে ব্যবহার করতে পারি। নীচ থেকে ছাদের উপর মাটি তোলার
প্রয়োজন আর একটা পর্যায়ে আর লাগবে না কারণ মরা গাছগুলিকে কম্পোস্ট বানিয়ে
রিসাইক্যাল করলেই চলবে।
আপনার বন্ধু-বান্ধবের বাগানে যান কিছু সবজির চারা না
কিনেই আপনি তাদের কাছ থেকে আপনি নিতে পারেন। বাজার থেকে কলমি শাক কিনে তার
ডাটাগুলো লাগাতে পারেন। পুইশাকের ডাটা লাগাতে পারেন। পুইশাক ও কলমি শাক লাগিয়ে বেশ
ভালভাবে ফ্রেশ শাক খেতে পারেন। আমাদের বাসায় প্রায়শই শুকনা আস্ত লংকা কিনি সে লংকা
বড় সড় দেখে ভিতর থেকে তার বিচিগুলো ভিজিয়ে টবে ছিটিয়ে দিন আপনি বিনা পয়সায় মরিচের
চারা পেয়ে গেলেন। একইভাবে টমেটো, গোল আলু, ধনিয়া,
রসুন, পেঁপে, করল্লা,
কাকরুল, শসা,কচু ইত্যাদি
বীজ আমরা রান্না ঘর থেকে পেতে পারি। বাজার করার সময় একটি/দুইটি পাকা সবজি কিনলেই
সব পাওয়া যাবে। লাল শাক, ডাটা শাক ও পাটশাক স্থানীয় গ্রোসারী
দোকান থেকে ক্রয় করা যেতে পারে অল্প কিছু টাকা খরচ হবে তার পর ছাদ বাগানে দুই/একটা
ডাটা শাক, লাল শাক রেখে দিলে পরবর্তী সিজনে আর বীজের অভাব
হবে না। আপনার আসে পাশে বিভিন্ন স্থান হতে কলম করে দুই একি ফলের কলম গাছ চাষ শুরু
করতে পারেন। নার্সারিতে দেখা যায় পলি প্যাকের গাছ ১০ টাকা আর টবের গাছ ৫০ টাকা।
তখন একটি দুইটি টবের গাছ অল্প বিনিয়োগে শুরু করা যায়।
আমি এ পর্যন্ত যা হিসাব দিলাম তার মধ্যে আপনার খরচ হওয়ার
কোন কারণ ঘটেনি। আপনি আপনার বাগানে পুই শাক, কলমি শাক যদি উৎপাদন করে
থাকেন তবে ওজন করে দাম লিখুন। মনে করুন প্রথম মাসে আপনি দুই কেজি পুই শাক আর দুই
কেজি কলমি শাক উৎপাদন করলেন। খাতায় লিখলেন সর্বমোট ৫ কেজি মোট মূল্য ২০গুনন ৫ =
১০০ টাকা। আমি ১০০ টাকা আমি বিনিয়োগ করলাম। আমি এখন ১০০ টাকার চারা ও বীজ কিনে
বিনিয়োগ করতে পারি। এভাবে আমি যা উৎপাদন করলেন তার মূল্যমান হিসাব রাখলেন এবং
ক্রমান্বয়ে সেই পরিমাণ অর্থের কাছাকাছি বিনিয়োগ করতে থাকলেন আরো উন্নত চাষাবাদের
জন্য। একসময় আপনার উৎপাদন যখন বিনিয়োগের দ্বিগুণ হবে তখন লেখালেখি ও হিসাব করা
ছেড়ে দেবেন। তখন আপনি একটা ধারনা পেয়েছেন আপনার মাসে কত খরচ আর আপনার মাসে কত
অর্জন। আপনি বাগানে সবকিছু এমনভাবে বিভিন্ন জাত ও প্রকারের ফল ও সবজি উৎপাদন করুন
যাতে আপনার পরিবারের চাহিদা মিটানোর পর বেশী বাড়তি না হয়। একই রকম ফল সবজি বেশী
উৎপাদন করে প্রতিবেশীদের বিলানো বা বাজারে বিক্রির জন্য ছুটোছুটি করার চেয়ে অনেক
অনেক ধরনের ফল সবজি অল্প অল্প করে পরিবারের জন্যই বিষযুক্ত ও অর্গানিক ভাবে উৎপাদন
করাটা অনেক অনেক ভাল উপায়। আসুন আর দেরী নয় ঘরের অপ্রয়োজনীয় যা আছে তা দিয়েই
নি:খরচায় ছাদ বাগান শুরু করি। আর হয়তবা বেশী দিন দূরে নয় যখন আমাদের দেশের সকল
ছাদে থাকবে সবুজের সমারোহ।
No comments:
Post a Comment