আজ থেকে একযুগ পর ঢাকার রাস্তায় যদি কোন যাত্রীবাহী বাস ও ট্যাক্সি পেট্রোল বা
ডিজেল ব্যবহার করে চলাচল করে সেই গাড়ীর ধূয়া ও শব্দে আপনাকে সেই গাড়ীগুলো মনে হবে
অপরিষ্কার ও নোংরা। আজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝি দাড়িয়ে আছি যখন বাংলাদেশের গ্রামে
গঞ্জে শতভাগ টয়লেট স্যানিটারি করা হয়েছে। এখন গ্রামের মানুষকে যদি খোলা জায়গায়
টয়লেট করতে বলা হয় ,তাদের কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে নোংরা
কাজটি করবে না। তেমনি যখন বৈদ্যুতিক চার্জ করা গাড়ী ব্যাপকভাবে প্রচলন হবে, তখন কেউই আর শব্দ সৃষ্টি করা আর ধোয়া সৃষ্টি করা গাড়ী পছন্দ করবে না। তখন
যাদের পুরাতন গাড়ী থাকবে তারাও দেখা যাবে তাদের গাড়ীটি ইলেকট্রিক গাড়ীতে কনভার্ট
করে নিচ্ছে।
ইলেকট্রিক গাড়ী ব্যবহারে আমরা শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ থেকে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন
রাখতে পারব। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আমরা গাড়ীগুলোকে গ্রিন এনার্জি ব্যবহার করার জন্য
প্রস্তুত করতে পারব। আজ বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে কয়লা, গ্যাস, পারমানবিক জ্বালানী, খনিজ তৈল ইত্যাদি মিশ্র জ্বালানী উৎস থেকে। আর বেশী দুরে নয় যখন অনেক দেশই
সমস্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সৌর, বায়ু ও বায়ুমস থেকে।
আর এভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারে পৃথিবীর পরিবেশ থাকবে আরো গ্রিন। কার্বন
ডাই অক্সাইড গ্যাসের নি:স্মরণ বহুলাংশে কমানো যাবে। এখন গাড়ী গুলো যদি বিদ্যুতে
চলা শুরু করে তবে আর বেশী দিন লাগবে না আমরা জ্বালানী তৈলকে গুড বাই বলতে পারব।
আমাদের ধূয়াময় পরিবেশে শ্বাস নিতে হবে না।
ইলেকট্রিক গাড়ীর সবচেয়ে ভাল গুণ হল এটা ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মটর বন্ধ হয়ে যায়।
তাই শক্তি কম খরচ হয়। আস্তে চললে কম বিদ্যুৎ আর জোরে চললে বেশী বিদ্যুৎ খরচ হয়।
অপরদিকে তৈলের গাড়ী স্টার্ট দিলেই তৈল খায়। বৈদ্যুতিক গাড়ী তৈলের গাড়ীর মত
নিষ্ক্রিয় (আইডেল) চালনা করার প্রয়োজন হয় না।
বর্তমান সময়ে ব্যাটারি স্টোরেজ একটি বড় সমস্যা। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি
পর্যন্ত উন্নত দেশে উৎপাদিত ইলেকট্রিক কার সমূহ ১০০ কি:মি: দূরত্বের বেড়িয়ার ক্রস
করেনি। তাই গভেষনা চলছে। জাপান ডুয়েল কার্বন ব্যাটারি তৈরি করেছে যা এখনো (২০১৬
সালের মধ্য আগস্ট) মার্কেটে আসেনি। এ ধরনের ব্যাটারি বাজারে আসলে ব্যাটারি
স্টোরেজের সম্পূর্ণ চিত্রটি পাল্টে যাবে বলে ধারনা করা যায়। এ ধরনের ব্যাটারি
বর্তমান লিথিয়াম আয়ন থেকে পাঁচ গুন বেশী চার্জ ধরে রাখতে পারে। পাঁচগুণ দ্রুত
চার্জ করা যাবে। কার্বন দিয়ে তৈরি ও পরিবেশ বান্ধব। রিসাইক্যাল না করলেও পরিবেশের
সাথে মিশে যাবে। এই ব্যাটারি ইলেকট্রিক কারের জন্য বিপ্লব নিয়ে আসবে। আরো বেশী
অধিক দুরে যাতায়াত করা যাবে। শহর এলাকায় বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাসা এভাবে
যারা যাতায়ত করেন তাদের জন্য ইলেকট্রিক কার অত্যন্ত ভাল অপশন। কারণ বাসায় রাতে
চার্জ করবে আর অফিস চলাকালীন সময়ে চার্জ করবে। যারা কার নিয়ে দুরে যাবে তারা হয়তবা
হাইব্রিড অপশনের গাড়ী ব্যবহার করবে যাতে তৈল ও বিদ্যুৎ দুইটি ব্যবস্থা থাকবে। তবে
ব্যাটারির দ্রুত গতির চার্জিং ব্যবস্থা চালু হলে স্থানে স্থানে গ্যাস রিফিলের মত
চার্জ করে অনেকদূর যাওয়া যাবে। সিএনজি গ্যাসে একটি সাধারণ সিলিন্ডার দিয়ে সাধারণত
একটি মাইক্রোবাস ৮০/১০০ কি:মি: যাতায়ত করে। কিন্তু দেখা যায় এ দূরত্ব বাড়ানোর জন্য
প্রায়শই মাইক্রো বাসগুলো একাধিক সিলিন্ডার ব্যবহার করে। একই ভাবে ইলেকট্রিক কারে
বড় বড় একাধিক ব্যাটারি ব্যবহার করে গাড়ীর একই চার্জের ভ্রমণ দূরত্ব বাড়ানো যেতে
পারে।
ইলেকট্রিক কার পরিবেশ বান্ধব। তবে এটা পরিবেশের জন্য আরো নিরাপদ হবে যদি এটার
চার্জিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে সৌর শক্তির করা যায়। এতে তা শতভাগ পরিবেশ বান্ধব
হবে। অনেক দেশে সোলার চার্জিং এর জন্য কার পোর্ট তৈরি করে তা সফলভাবে পরিচালনা করা
হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১৬ সালের মধ্যে কয়েকটি অটোরিকশার জন্য চার্জিং স্টেশন চালুর
পরিকল্পনা হয়েছে এবং কয়েকটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কয়েক বছর পর তাদের যাতায়ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে
বৈদ্যুতিক করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ভারতে বৈদ্যুতিক ট্রেন অনেক আগে থেকেই চলছে। এত
বড় ট্রেন যদি বিদ্যুৎ চলমান রাখা যায় তবে ছোট ছোট কার কোন বিষয়ই নয়। লক্ষ লক্ষ
গাড়ীতে ডিজেল পোড়ার চেয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে বড় পাওয়ার প্লান্ট ও বড় সোলার প্লান্টের
মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তার দ্বারা গাড়ী চালনা অনেক বেশী পরিবেশ বান্ধব।
আমাদের সামনে সেই দিনটি বেশী দূরে নয় যখন আমরা সকলেই সোলার চার্জড বৈদ্যুতিক
বাহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হব।
No comments:
Post a Comment