আমরা যারা ঢাকার
বাইরে থাকি তারা প্রায় কিছু সেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে পারি। তা হল, ইন্টারনেট
নাই? কারণ অপটিক্যাল ফাইবারের তার কাটা পড়েছে। ক্যাবল টিভি নাই, কারণ ঝড়ে গাছ
পরে অপটিক্যাল লাইন ছিঁড়েছে। ল্যান্ড টেলিফোন কানেকশান নাই। ফ্যাক্স চলছে না। কারণ অমুক জায়গায় অপটিক্যাল লাইন কাটা পড়েছে। ইত্যাদি
ইত্যাদি। রাজধানীর বাইরে বসবাসরতদের নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা।
তাহলে এর থেকে
উত্তরণের উপায় কি? রেডিও লিংক। রেডিও লিংক বিকল্প ব্যবস্থা হতে
পারে কিন্তু সাশ্রয়ী কোন উপায় নয়। কারণ সমপরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে অনেক বেশী
খরচ করতে হবে। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টানা লাইন সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী।
কিন্তু ঘন ঘন লাইন কেটে মাসে একাধিক দিন ইন্টারনেট না থাকাটা অত্যন্ত দূ:খজনক একটি
ব্যাপার। এখনকার দিনে ইন্টারনেট না থাকলে, ফ্যাক্স না থাকলে
আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতি হয়।
তাহলে কি উপায়? আমাদের
সাশ্রয়ী ও সহজ যোগাযোগের জন্য অপটিক্যালেই থাকতে হবে। আমাদের শুধুমাত্র একাধিক
অপটিক্যাল লাইন টানতে হবে। একটা কাটা
গেলে বা ফেল করলে আরেকটা বিকল্প লাইন যেন ব্যবহার করা যায়। ওভারহেড বা পিলার দিয়ে
লাইন টানলে তাতে খরচ কম। কিন্তু ঝড় বা অন্যান্য কারণে সহজে ছিঁড়ে যায় বা নষ্ট হয়।
অন্যদিকে মাটির নীচ দিয়ে নেয়া অপটিক্যাল লাইন সহজে নষ্ট হয় না। তবে রাস্তার পাশে
খোঁড়াখুঁড়িতে লাইন কাটা পড়ে। তবে লাইনগুলো যথাযথভাবে মার্কিং করা থাকলে লোকজন হয়ত
সহজে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল লাইনগুলো কেটে ফেলতে পাড়ত না।
অপটিক্যাল ফাইবারে
আমরা যে পরিমাণ তথ্য পরিবহনে ব্যবহার করছি সেই পরিমাণ তথ্য আমরা অনেক অনেক খরচ
করেও সমপর্যায়ে নিতে পারব না। আমরা কেবলমাত্র ইমার্জেন্সী হিসাবে অল্প স্বল্প তথ্য
স্যাটেলাইট বা অন্যান্য মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারব। বিটিএস দিয়ে ছোট এলাকার মধ্যে
উচ্চ গতির ইন্টারনেট দিতে পারলেও আমরা বিটিএস থেকে বিটিএসএর উচ্চগতির তথ্য
প্রবাহের জন্য পুনরায় অপটিক্যাল সংযোগের উপর নির্ভর করতে হবে।
এখনকার বিপুল
পরিমাণ তথ্য প্রবাহের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগই হল সবচেয়ে কার্যকরী ও দ্রুত
পদ্ধতি।
মাটির নীচের লাইন
কাটা পড়বে আর মাটির উপরের লাইন ছিঁড়ে যাবে। এতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দিনের পর দেন
ইন্টারনেট না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা ও আউটসোর্সিং কার্যক্রম। তাহলে উপায় কি? আমাদের
দেশকে কানেকটিবিটি দেয়া আন্তর্জাতিক অপটিক্যাল ফাইবার লাইন সাগরের তলদেশ দিয়ে নেয়া
হয়েছে আর সেই লাইন দ্রুত মেরামতও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে টহল দল। একাধিক দল
মহাসাগরের অপটিক্যাল লাইন মেরামতের জন্য টহল দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে বড় বড়
জেলার অপটিক্যাল লাইনগুলো কাটা পড়লে দ্রুতই মেরামত হচ্ছে কিন্তু তাতেও ৬/১২ ঘণ্টা সময়
লেগে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার জন্য আমরা অপটিক্যাল কাটার স্থানটি দ্রুত বের
করতে পারি এতে শুধু নির্ধারিত স্থানে লোক পাঠিয়ে কাটা স্থান জোড়া দিলেই চলবে।
তাহলে ৬/১২ ঘণ্টা
মেরামতের সময়টা ব্যাকআপ দিলেই চলবে। কিভাবে এটা করা যাবে? যে কোন প্রযুক্তি সচেতন ব্যক্তির কাছে তার উত্তর
আছে। একাধিক লাইন একাধিক পথে বসাতে হবে। কিছুদূর পর পর তাদের মাঝে আন্ত:সংযোগ করার
ব্যবস্থা থাকতে হবে। কুষ্টিয়া জেলার ইন্টারনেটের কুষ্টিয়া-পাবনা সংযোগ কাটা পড়লে
কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ যশোরের সাথে সংযোগ হবে। যশোর সংযুক্ত থাকবে নতুন পদ্মা সেতু দিয়ে
ঢাকার সাথে। আবার যশোরের সংযোগ কাটা পড়লে যশোর সংযোগ পাবে যমুনা ব্রিজ দিয়ে ঢাকার
সাথে পাবনা-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ -যশোর এইপথে। আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পাশাপাশি ক্যাবল
টিভি অপারেটরদের পিলার ধরে টানা ওভারহেড
লাইনের মাধ্যমেও সংযোগ করা যায়। মনে করি পাবনা কুষ্টিয়া লাইন কাটা পড়ল। এতে
আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন ঠিক হতে হতে বিকল্প লাইন ঝিনাইদহ যশোরের মাধ্যমে সংযোগ পাবে।
ঝিনাইদহ-যশোরের লাইন বিকল হলে ক্যাবল অপারেটরের
অব্যবহৃত ফাইবারের মাধ্যমে সীমিত আকারে কুষ্টিয়া-পাবনা ইন্টারনেটের অপটিক্যাল
লাইন চালু হবে। সীমিত আকারে এ জন্য বললাম ক্যাবল অপারেটরদের অপটিক্যালের কিছু
সংখ্যক অব্যবহৃত তন্তু রিজার্ভ রেখে কাজটি করা যেতে পারে। অপরদিকে ক্যাবল
অপারেটরদের লাইন বিচ্ছিন্ন থাকার মত দুর্দিনে তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইবার দিয়ে
সহায়তা দেয়া যেতে পারে। ক্যাবল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সকল সংস্থার কুইক রিয়েকশন টিম
অবশ্যই রাখা প্রয়োজন। অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ নিয়মিত চালু রাখায় এখন আর কোন
সংস্থার খামখেয়ালীর কোন বিষয় নয়। এগুলো তথ্যের চালিকা শক্তি ও তথ্য প্রবাহের লাইফ
লাইন। এখন আমাদের দেশ যতই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে ততই আমাদের জন্য একাধিক পথে ও
একাধিক পদ্ধতিতে বিকল্প অপটিক্যাল ফাইবার
চালু করতে হবে। আমি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোট্ট একটি ক্যাম্পাসে
আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড দুইভাবে ক্যাম্পাসে অপটিক্যাল টানিয়েছি। এতে ক্যাবল টিভি,
ইন্টারনেট ও সিসি ক্যামেরার সংযোগ যে কোন উপায়ে বিচ্ছিন্ন হলে তা
দ্রুত চালু করা যাচ্ছে শুধুমাত্র কানেকশন বদল করলেই হল। মুল প্রবাহটা বা প্রাইমারী
মাধ্যম হল আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন। আন্ডারগ্রাউন্ড সহজে সমস্যা করে না। আর সমস্যা করলে
সারতেও অনেক সময় লাগবে। আন্ডারগ্রাউন্ড মেরামতের সময়টা ব্যাকআপ দেবে ওভারহেড লাইন।
ওভারহেড লাইন সব সময় ব্যবহার নাহলেও তা কম ইম্পরট্যান্ট দুই একটি সিসি ক্যামেরা
জাতীয় কাজে ব্যবহার করতে হবে যেন লাইনটি
নষ্ট হলে সাথে সাথে মেরামত করে সব সময় চালু রাখা যায়। নচেৎ এক সময় এমন হতে পারে
আন্ডারগ্রাউন্ড অপটিক্যাল লাইন নষ্ট হয়েছে আর ওভারহেড বিকল্প লাইনও নষ্ট হয়ে আছে।
ওভারহেড লাইন যেহেতু দ্রুত মেরামত করা যায় তাই নষ্ট হলে তা দ্রুত মেরামত করে রাখতে
হবে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের বিকল্প হিসাবে। এখন সময় এসেছে আমাদের যে সমস্ত লাইন
অপটিক্যালে ব্যবহৃত হচ্ছে তার একাধিক পথে একাধিক অপটিক্যাল লাইন টানতে হবে ।
এছাড়াও আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনও টানতে হবে। আসুন আমরা
অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের বিষয়ে সময় উপযোগী ব্যবস্থাপনা করি। এতেই রয়েছে আমাদের
দেশের তথ্য প্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়ন ও মঙ্গল।
No comments:
Post a Comment