Pages

Thursday, September 22, 2016

জনবসতিশূন্য তপ্ত মরুভূমি আজ সৌরশক্তির মহামূল্যবান খনি

২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে দেখতে পাচ্ছি সারা পৃথিবীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের আন্দোলন। খালী জায়গা বের কর আর সোলার পাওয়ার প্লান্ট তৈরি কর। উন্নত দেশগুলো টাকা ও সোলার প্লান্টের সামগ্রী হতে নিয়ে বসে আছে। শুধু জায়গা পেলেই সৌর প্লান্ট বসানোর জন্য প্রস্তুত। টাকা আছে। সমস্ত সামগ্রী মজুদ আছে। শুধুমাত্র  খোলা ভূমি চাই। কারণ হল, বন কাটা যাবে না। পাহাড় ধ্বংস করা যাবে না। বরফ গলানো যাবে না। এমন স্থান খুঁজতে হবে যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো ও তাপ পাওয়া যাবে। কিন্তু ফসল নষ্ট করা যাবে না। সেই স্থানগুলি কি হতে পারে। আর কিছুই নয় সে স্থানগুলো হল দীর্ঘদিনের অবহেলায় পড়ে থাকা মরুভূমিগুলো। আজ সেই মরুভূমি কৃষিজমি থেকেও মহা মূল্যবান। কৃষি জমির একর প্রতি ফলন থেকে আরো মূল্যবান বিদ্যুৎ তৈরির কাজে ব্যয় করার সময় এসেছে। আর তা হল সৌরশক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার। আজ পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার অপরিহার্য। খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি না হলে জমিতে ফসল অপেক্ষা সৌরশক্তি উৎপাদন অধিক লাভজনক।
সাহারা পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি। আজ সেই মরুভূমির দিকে তাকিয়ে আছে গোটা আফ্রিকা ও ইউরোপ। এই মরুভূমি এখন আফ্রিকার জন্য টাকার উৎস, সুপেয় জলের উৎস ও সর্বোপরি কর্মসংস্থানের উৎস। অপরদিকে ইউরোপের মত বিদ্যুৎ এর জন্য ক্ষুধার্ত মহাদেশের জন্য প্রতিবেশী আফ্রিকার সৌর বিদ্যুৎ স্বস্থিদায়ক বিষয়। মরুভূমিতে সোলার কনসেন্ট্রেটর অনেক বেশী উপকারী। সোলার কনসেন্ট্রেটর সাশ্রয়ী উপায়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে। এটি অতি সহজ প্রযুক্তি। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি রাতের জন্য থার্মাল কনটেইনারে তপ্ত গলিত লবণ জমা করে। যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন এই গলিত লবণ বিদ্যুৎ তৈরি করে। বিষয়টি সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলছি। মনে করি ১০০ একর একটা জমিতে আপনি কয়েক হাজার বড় বড় আয়না স্থাপন করলেন। আয়না গুলোর মাঝে শত মিটার উঁচু একটি টাওয়ার স্থাপন করুন। সেই শত মিটার উঁচু টাওয়ারের উপর আয়নাগুলো হতে সূর্যের আলোর প্রতিফলন ফেলুন। টাওয়ারটির যেখানে সূর্যের আলো পড়ছে সেখানে পাইপের কয়েল বানিয়ে নিলে সেই পাইপের ভিতর দিয়ে তরল প্রবাহিত করলে তা অনেক অনেক উত্তপ্ত হয়। প্রথমে তরল লবণ ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা নিয়ে পাইপের মাধ্যমে টাওয়ারের মধ্য দিয়ে ৫২৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে উত্তপ্ত হয়ে একটা ইনসুলেটেড কনটেইনারে জমা হয়। সেই ইনসুলেটেড কনটেইনারে গলিত লবণের ২৪ ঘণ্টায় মাত্র .৫ ডিগ্রি তাপ কমে। এই উত্তপ্ত গলিত লবণ পানির সংস্পর্শে পানিকে বাষ্পে পরিবর্তন করে। সেই বাষ্প বা স্টিমে জেনারেটরের চাকা ঘুরে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে থাকে। বাষ্প তৈরি করার পর পুনরায় গলিত লবণ অন্য একটি রিজার্ভ কনটেইনারে ২৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপ নিয়ে চলে আসে। সেখান থেকে পুনরায় টাওয়ারে উঠে ৫২৯ ডিগ্রি পাওয়ার জন্য। এভাবেই চক্রাকারে চলমান থাকে পুরো প্রক্রিয়াটি। সূর্যতাপে ব্যাটারিতে জমা ব্যতীত রাতের বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। এখন আর সেই সমস্যা নেই। সৌরতাপ উত্তপ্ত লবনে মজুদ রেখে রাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সৌরশক্তির আধার মরুভূমিগুলোকে করেছে আরো বেশী উৎপাদনশীল। যেসব দেশে মরুভূমি আছে তাদের এসেছে সুদিন। তারা পাবে অফুরন্ত বিদ্যুৎ আর তার উপজাত হিসাবে সমুদ্রের পানিকে বাষ্প করে সুপেয় খাবার জল ও লবণ। সোলার কনসেট্র্রেটর পৃথিবীর অনেক দেশই তৈরি করেছে এবং এটা ক্রমান্বয়ে ব্যাপক হরে বাড়বে। বাংলাদেশ মরুভূমি না থাকলেও চর অঞ্চলে বা সমুদ্র উপকুলে ছোট আকারে করা যেতে পারে।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানি ২৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদন করে চলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সৌর, বায়ু ও বায়ুমস থেকে উৎপাদন করবে ঘোষণা দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা তারও আগে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশ ৪০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৬ সালে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ভূমির অপ্রতুলতা। পৃথিবীর ঘনবসতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে আজ পাহাড় সবুজ ফসলে মোড়া। অফসলী জমি বাংলাদেশে বিরল। বাংলাদেশে সোলার কনসেন্ট্রেটর ব্যবহার করার মত জায়গা কম। বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ব্যবস্থা হল সোলার পিভি সিস্টেম। আর এগুলো লাগাতে হবে ছাদের উপর। ঘরের চালে। খালের উপর। রেললাইনের উপর। তৈরি করতে হবে পানির উপর ভাসমান সোলার সিস্টেম। জাপানের মত জমির ফসলের সাথে সোলার প্যানেলের শেয়ারিং ব্যবস্থাটি আমরা অনুসরণ করতে পারি। ইংরেজিতে সোলার শেয়ারিং জাপানদিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে আমরা এ ধরনের অগণিত তথ্য, ছবি ও ভিডিও পাব।
আজ থেকে হয়ত ২০০৭/২০০৮ সালে যখন জ্বালানী তৈলের দাম অনেক অনেক বেশী ছিল আমরা সকলে শঙ্কিত ছিলাম পৃথিবীর জ্বালানীর ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার পরই পৃথিবীব্যাপী নবায়ন যোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার পৃথিবীর সামগ্রিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিল। ২০১৬ সালে পৃথিবী ব্যাপী জ্বালানী তৈলের মূল্য অনেক অনেক কমে গেল। মনে হয় ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে ফসিল ফুয়েলের মূল্য আরো অনেক অনেক কমে যাবে। খনিজ তৈল আহরণকারী দেশগুলো খনিজ তৈল উত্তোলন লাভজনক না হলে তার উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিবে। আমরা সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকব যখন পৃথিবীর সমস্ত দেশ তৈল পুড়িয়ে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না। পৃথিবীর বায়ু হবে আরো পরিষ্কার ও নির্মল।


No comments:

Post a Comment