Pages

Thursday, February 9, 2017

রোগীর ডাক্তারি ফি সহজেই ক্যাশলেস করা যায়

২০১৭ সালের শুরুতে যখন লেখাটা লিখছি তখন পৃথিবীর অনেক দেশ ক্যাশলেস হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ক্যাশলেস আন্দোলনে আছে। ক্যাশলেস সমাজে দুনীতি কম হয়। মূলত: ক্যাশ লেনদেন প্রমাণ করেছে দুনীতি নগদ টাকায় বেশী হয়। আমি বিভিন্ন জেলায় চাকুরীর সুবাদে থেকেছি সেসব জেলার অনেক ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়েছি। দুই একজন বাদে সমস্ত ডাক্তারই তাদের ডাক্তারি ফিটা নিজ হাতে রোগীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন। এই বিষয়টা আমার কাছে বেশ খটকা লাগে। কারণ টাকায় অনেক জীবাণু থাকে। ডাক্তাররা বার বার টাকা ধরে এত ঘন ঘন হাত ধুতে পারেন না। আমরা শিক্ষিত সচেতন অনেকেই আজকাল টাকা নাড়াচাড়া করলেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেই। ডাক্তাররা প্রত্যেকেই একজন করে সহকারী রাখছেন, আয়া ও রিসিপসনিষ্ট রাখছেন। তবে কেন ক্যাশ টাকা হতে নিচ্ছেন। আমি যদিও কোন ডাক্তারকে এর উত্তর জিজ্ঞাসা করিনি তবে আমার মনে হয় উত্তরটা সকলের জানা। মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্ট ও ডাক্তার নিজেদের মধ্যে হিসাবের জটিলতায় না গিয়ে নিজেই টাকাটা নিয়ে নিচ্ছেন। মাসের শেষে ডাক্তার সাহেব এ্যাসিসটেন্ট ও অন্যান্যদের বেতন দিয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টা অত্যন্ত ভাল একটি বিষয়।
তবে আমার কাছে ডাক্তারদের জন্য ক্যাশলেস ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি আমার চিন্তা ও ভাবনার এসেছে। আমার ডাক্তার বন্ধুদের জন্য আমার ক্যাশলেস ধারনাটা তুলে ধরছি।
প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হল দুইটি কারেন্ট একাউন্ট করতে হবে। একটি একাউন্ট হবে ডাক্তার সাহেবের জন্য অপরটি হবে মেডিক্যাল এসিসটেন্টের জন্য। মেডিক্যাল এসিসটেন্টের জন্য একটি ডেভিড কার্ড নিতে হবে। ডাক্তার সাহেব নিজের জন্য পয়েন্ট অব সেইল(পিওএস) মেশিন নিবেন। ডাক্তার সাহেব তার চেম্বারে সাইন পোস্টিং রাখবেন এখানে ডেবিট, ক্রেডিট, ভিসা ও মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে ডাক্তারি ফি গ্রহণ করা হয়। ডাক্তার সাহেব যাদের পেমেন্ট নিবেন তাদের কার্ড সোয়াইপ করে পেমেন্ট নিবেন। এখন যারা নগদ দিতে চান তাদের টাকা মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট নগদ নিবেন। মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট তার ডেভিড কার্ডটি সোয়াইপ করে ডাক্তার সাহেবের একাউন্টে পেমেন্ট করে দিবে। মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট নগদ নিবে আর কারেন্ট একাউন্ট থেকে ওডি করে টাকাটা ডাক্তার সাহেবের একাউন্টে ডেভিড কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিবে। ওডি করে তার একাউন্ট থেকে পেমেন্ট করায় মেডিক্যাল সহকারী তার একাউন্টে নগদ টাকার হিসাব মিলানো ও টাকা প্রতিদিন একাউন্টে জমা করার তাগিদ অনুভব করবে। এতে মেডিক্যাল এসিসট্যান্টের সমস্ত হিসাব নিকাশ ব্যাংকিং চ্যানেলে হওয়ায় হিসাবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। ডাক্তার সাহেব কোন হিসাব মেডিক্যাল এসিসট্যান্টকে জিঞ্জাসা না করেই পেয়ে যাবেন। বিপরীতে মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট পিওএস মেশিনের স্লিপ মিলিয়ে পেয়ে যাবেন কত টাকা নগদ হল। সে টাকা বাড়ী যাওয়ার সময় ব্যাংকে জমা করলেই হল। এখন অনেক ব্যাংকই নৈশ অফিস করে। যদি মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট চায় কয়েকদিনের টাকা মিলিয়ে একবারে জমা দিতে তাও পারবে। টাকা জমা দেয়াটা হল তার দায়বদ্ধতা। কারন তার একাউন্ট হতে ডাক্তারী ফি এর টাকা সাথে সাথে বিয়োগ হয়ে ডাক্তার সাহেবের একাউন্টে যোগ হয়ে গেছে।
আমাদের দেশের ডাক্তার সাহেবরা বিনা রেজিস্টার রক্ষনাবেক্ষনে ইলেক্ট্রনিক ট্রানজেকশনের মাধ্যমে তার সমস্ত হিসাব পেয়ে যাবেন। প্রতিদিন কয়টি রোগী দেখছেন। মাসে কয়টি দেখেছেন। বছরে কতজন দেখেছেন। সব হিসাব ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকেই পেয়ে যাবেন। অনলাইনে ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট দেখতে পাবেন। রিসিপসনিস্ট, আয়া, মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট ও চেম্বারের ভাড়া প্রতি মাসে চেকের মাধ্যমে দিতে পারবেন। এমনকি চেম্বারের খরচও চেকের মাধ্যমে মেডিক্যাল এসিসট্যান্টকে দিলে সব হিসাব অতি সহজে ইলেক্ট্রনিক্যালী রের্কড হয়ে যাবে।
এতে একজন ডাক্তার সাহেবের সমস্ত হিসাব নিকাশ অত্যন্ত নিজেই নির্ভুল ভাবে রাখতে পারবেন। নিজের আয় ব্যয়ের উপর স্বচ্ছ ধারনা থাকবে। এতে হয়তবা ব্যাংক ফি কিছুটা দিতে হবে। কিছুটা ফি দিয়ে হলেও ডাক্তার সাহেবরা তাদের কাজে নিয়োজিত লোকদের সাথে হিসাব নিকাশে জড়ানোর মোটেই প্রয়োজন হচ্ছে না। নিজেই নিজের আয় ব্যয়ের উপর স্বচ্ছ ধারনা পাচ্ছেন। সেই সাথে ট্রানজিশনের সময় দেখে কখন রোগী বেশী। কখন কম। কখন বেশী সময় চেম্বারে থাকতে হবে। তারও একটি ফোরকাস্ট পাওয়া যাবে। ইনকাম ট্যাক্স ও অন্যান্য আয় ও ব্যয়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকার কারণে ইনকাম ট্যাক্সের পরিদর্শকরা অযাচিত সমস্যা করতে পারবে না।

আমি ডাক্তার হলে এই ক্যাশলেস পদ্ধতিতে চলে যেতাম। আমার বন্ধু ডাক্তাররা এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে আশা করছি তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে আরো একটি আর্টিক্যাল লিখতে পারব। আমার ধারনা প্রগতিশীল ডাক্তারদের এটা পছন্দ হবে।

No comments:

Post a Comment