সৃষ্টিকর্তা যাকে যে কোন
সময় রাজা বা ফকির বানাতে পারেন। তাই যে কোন সময় আমার বন্ধুদের অনেকে রাজা হবে এবং
আমরা অনেকে ফকির থাকব। এটাই হল জাগতিক নিয়ম। আবার আমাদের মাঝে কিছু ফকির আবার পুনরায় রাজা হবে এবং
কিছু রাজা পুনরায় ফকির হবে। রাজা থেকে ফকির ও নিন্দিত হওয়ার ঘটনা আমাদের বন্ধুদের
মাঝে এর মধ্যেই ঘটে গেছে। আমার এর আগের একটা লেখনী ছিল চাকুরীতে জুনিয়র র্যাংকে
সিনিয়র বস। “বন্ধু যখন বস”
আমার এই লেখাটির প্লট অনেক আগেই মনে মনে ছিল।
চিন্তায় ছিল। লেখাটি তখনই বাজারজাত করব যেদিন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভিআইপি হবে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দীর্ঘ দিনের রুমমেট বাংলাদেশের একজন ভিআইপি মর্যাদায়
উন্নীত হয়েছে। আমার জন্য অনেক অনেক গর্বের বিষয়।
আমি আমার চাকুরী জীবনে
একাধিকার আমার বন্ধুদের ঊর্ধ্বতন পদবীতে বস হিসাবে পেয়েছি। প্রথমত: “বন্ধু যখন বস” মোটেই সুখকর অনুভূতি বা উপভোগ্য বিষয় নয়। প্রথমত এটা থেকে মুক্ত থাকাটা সবচেয়ে
নিরাপদ। একান্তই পারা না গেলে “বেটার টু এনজয়” এই ফর্মুলায় যেতে
হবে। এটা র্যাংকে সিনিয়র ও চাকুরীতে জুনিয়র বসের সাথে চাকুরী করার থেকে অধিক
পরিমাণ কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জিং। প্রথম সমস্যা হল, কখন ভিআইপি মাইন্ড করে এই টেনশনে থাকতে হয়। কোন কিছু বিভ্রাট হলে বন্ধু বসের
আচরণ ও দৃষ্টিতে প্রথম যে অনুভূতি পাওয়া যায় তা হল বন্ধু বলেই আমার সাথে এ ধরনের
কাজ করতে পারল। সবাই যুগ যুগ থেকে এরই আর্বতে চলে আসছে। আগামী দিনগুলোতে এগুলো
চলবে। কোথাও কোন ছন্দপতন হয়নি।
ধারনা হতে পারে আমি কোন
হীনমন্যতায় ভুগছি। মোটেই না। হীনমন্যতা ভোগার কোন কারণ নেই। আমার মত র্যাংকে
অনেকেই বন্ধুকে বস হিসাবে পায় নাই। আমার সৌভাগ্য আমি একাধিকবার পেয়েছি। ভবিষতে আরো
পাব। এই লেখার পর আমার বন্ধুরা আমার বস হলে আমাকে হয়ত আরো সাইজ হতে হবে। ভয় নেই
পিওএল বা পার্ট অব লাইফ। আমরা আমাদের অবস্থার জন্য দায়ী আর কেউ নয়। মজার বিষয় হল
বন্ধুদের একজন হয়ত সবচেয়ে উপরে উঠবে। বাকীরা সিঁড়ির বিভিন্ন ধাপে থেকে যাবে। যারা
উপরে আছে তাদেরও মাঝে মাঝে নীচে তাকাতে হবে ও নীচে পতিতদের খোজ নিতে হবে। নীচে
ধাপে যারা আছে তাদের উপরে তাকিয়ে উপরের বন্ধুদের সন্মানটুকু জানাতে হবে।
আমি আমার অভিঞ্জতায় আমার
কয়েকজন বন্ধু বসের সাথে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে চাকুরীর পদ্ধতিগুলো তুলে ধরছি:
১। দেশের একজন উপ সচিব
সমকক্ষ র্মযাদার কর্মকর্তা হিসাবে দেশ ও প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত কাজটুকু সম্পূর্ণ
করা। এটা করলেই বন্ধু বা জুনিয়র বসের সাথে বিরোধের ৬০ ভাগ কমে যাবে।
২। অফিসিয়াল প্রটোকলে
বসকে বন্ধু বা জুনিয়র ভাবলেই বিপদ। চোখ কান বন্ধ রেখে মনে করতে হবে তিনি আমার
বন্ধু নয় বা জুনিয়র নয়। তিনি বস। তার যেটুকু সন্মানটুকু প্রাপ্ত প্রয়োজনে তার চেয়ে
বেশী সন্মানটা দেয়া জরুরী।
৩। বস প্রায়শই বিভিন্ন
রকম অসম্পূর্ণ বা অসংলগ্ন কাজের জন্য বকা বকির সেশন করতে পারেন। তখন জুনিয়রের
সামনে একই কাতারে পাতলুন উন্মুক্ত হতে পারে। বেতন নেয়ার বদলে এই পাতলুন টুকু
উন্মুক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক ধরে নিতে হবে। সিভিলেও অল্পবয়সী বস বেশী বয়সীদের কথার
ম্যার প্যাচে পাতলুন খুলে। এটা চলছে। এটা চলবে। বিচলিত হলে চলবে না। তবে মাত্রা অতিক্রম করলে
চিন্তার বিষয়।
৪। অন্যদের সামনে বা
ফরমাল সিচুয়েশনে বাংলার পরির্বতে ইংরেজি You অনেক বেশী
নিরাপদ। নাম না ধরে ডেকে “অনারেবল কমান্ডার” বা “কমান্ডার” এবং “রেসপেক্টেড
জেনারেল” বা “জেনারেল” বলাটা নিরাপদ।
৫। যারা একটু মোডি বা
ভাবে থাকে সেসব বন্ধু বসদের সাথে আরো ফরমাল বা সর্তক হওয়ার প্রয়োজন আছে। অন্যথায়
সম্পর্ক দূর্বলতার দিকে যেতে পারে।
৬। পরিবার নিয়ে গাড়ীর
সামনে বসা, সাথে বসা ও পিছে
বসা নিয়ে জটিলতা হয়। সবচেয়ে ভাল হয় আলাদা গাড়ীতে যাওয়া।
৭। পত্নীদের ফরমাল
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বন্ধুদের স্ত্রীদের বন্ধু হিসাবে এই সময়টুকুতে ভুলে যাওয়াটা
উত্তম অন্যথায় বন্ধু বস পত্নীদের মনে তকলিফ হতে পারে। কারণ স্ত্রীরা অত ফরমাল বা
উদার হতে পারে না। তাই সেসব অনুষ্ঠানে সর্তকতা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন।
পরিশেষে বলব। আজ আমাদের
মত উপসচিবদের জন্য সামাজিক স্ট্যাটাস শুধু কয়েকটা দিনের ব্যাপার। শীগ্রই আমরা
অবসরে যাব। পুনরায় যার যার মত অন্য কাজে বা জবে ব্যস্ত হয়ে যাব। আমাদের অবসর কালীন
জীবনে বন্ধুদের প্রয়োজন আরো বেশী হবে। তখন পুনরায় বসরা বন্ধুতে রূপান্তর হবে। তাই সকলের সহযোগীতায়
সাময়িক চ্যালেঞ্জগুলি কখনোই অপ্রীতিকর হবে না। আর অপ্রীতিকর হলে এখন কিছু বলব না।
আজকের বস অবসর নিয়ে যেদিন আমার কাতারে আসবেন সেইদিন সাইজ করার ইচ্ছে রেখে আজকের সব
কিছু ভুলে যাব ও আনন্দে থাকব। এখন নিজের স্বাস্থ্য ও সন্তানদের উন্নতির জন্য
যুদ্ধটাই সবচেয়ে বড়। কোন “বন্ধু বস” কতটুকু ইজ্জত খসাল এটার দেখার ও বোঝার সময়
আসলেই আমাদের কারো নেই।
No comments:
Post a Comment