অনেক আগে থেকেই বাজারে অল ইন ওয়ান পিসি বিদ্যমান ছিল। আমি সেপ্টেম্বর ২০১৬
থেকে ব্যবহারের পর এটি সম্পর্কে লিখতে আগ্রহী হলাম। বাংলাদেশের বাজারে অনেক
কোম্পানির অল ইন ওয়ান কম্পিউটার বিদ্যমান। অল ইন ওয়ান মূলত ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের
মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। দাম ল্যাপটপের সমগোত্রীয় ও ডেস্কটপ হতে বেশী। যারা
ডেস্কটপের বড় বড় সিপিইউ,তার ও অন্যান্য
এক্সেসরিজের এ্যারেজমেন্ট বিরক্ত। আবার ল্যাপটপ ছোট ছোট লাগছে। তাদের জন্য অল ইন
ওয়ান একটি চমৎকার বিকল্প। স্মার্ট ফোনের স্মার্ট ব্যবহারে দিনকে দিন আমাদের মাঝে
ল্যাপটপের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। আমরা ল্যাপটপ আর কোলে ব্যবহার করি না। তার কারণ
স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট এর কারণে ল্যাপ বা কোলে রেখে পিসি ব্যবহারের দিন শেষ।
ল্যাপটপের সর্বদা একটা ডিসপ্লের সাইজ লিমিটেশন আছে। আবার ডেস্কটপের সিপিইউ ও
আনুষাংগিক একটা বড় সড় লাগেজ। যারা আমার মত ঘন ঘন স্থান ত্যাগ করেন তার শুধুমাত্র
স্মার্ট ফোনের পাশাপাশি অল ইন ওয়ান পিসি রাখলেই সব কাজ করতে পারবেন। আমি সাধারণত
কোন স্থানে তিনদিনের বেশী থাকলে ল্যাপটপ নেয়ার তাগিদ অনুভব করতাম। তার একমাত্র
কারণ আমরা ব্রাউজিং এর কাজ আজকাল মোবাইলেই করে ফেলি। ভাইবার,
টুইটার, আনুষঙ্গিক অ্যাপ ও ফেইস বুক ইত্যাদিও আমরা মোবাইলে করে ফেলি। তবে ডেস্কটপ বা
ল্যাপটপের কি কাজ বাকী থাকল। সেটা হল সেই কাজগুলি যা কিনা বড় স্ক্রিনে করতে হয়।
লেখালেখি বা টাইপিং।প্রেজেন্টেশন তৈরি। ভিডিও দেখা। টিভি কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনে
টিভি দেখা। আমরা মোবাইল বা ট্যাবে যে কাজগুলি করতে না পারি তা আমরা অল ইন ওয়ান
পিসিতে করতে পারছি।
আমি আমার এক স্থান থেকে অপর স্থানে সাময়িক ডিউটিতে যাওয়ার সময় অল ইন ওয়ান
পিসিটি কাগজের বাক্সে ভরে ল্যাপটপের মত করে নিয়ে চললাম। আমার নতুন স্থানের রেস্ট
হাউজের রুমে রিডিং টেবিলের উপর এটি স্থাপন করলাম। বেশ ভাল লাগল। অল ইন ওয়ানের
উপযোগী ব্যাগ কিনে নিলে বা বানিয়ে নিলে এটা ল্যাপটপ বহন করার মতই সহজ। শুধুমাত্র
এ্যাডাপটারটা খুলে নিলেই হল।তারপর ব্যাগে নিয়ে সহজেই ক্যারি করা যায়। কীবোর্ড ও
মাউস আলাদা। ইনপুট ডিভাইস দুইটি আবার ওয়্যারলেস। এতে টেবিলে তারের ছড়াছড়ি নেই।
ল্যাপটপের কীবোর্ড ছোট ও টাচ বাটন যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়। অল ইন ওয়ান পিসিতে
বড় সাইজ কীবোর্ড ও মাউস দিয়ে অনেক সাবলীল ভাবে কাজ করা যায়। ল্যাপটপ ও ডেক্সটপের
মাঝে অল ইন ওয়ান পিসি একটা চমৎকার কম্বিনেশন।
এ ধরনের পিসিতে ল্যাপটপের মত চার্জার আছে। ল্যাপটপের মতোই ডিসি সকেট দিয়ে
লাগাতে হয়। ইউনিভার্সাল চার্জার। ১০০-২৪০ ভোল্ট এসি ইনপুট। আউটপুট ২.৩৭
এ্যাম্পিয়ার ১৯ ভোল্ট ডিসি। এটা ল্যাপটপের মত ৪/৫ ঘণ্টা ব্যাকআপ না দিলেও
ডেস্কটপের ইউপিএস মত ৩০ মিনিট ব্যাকআপ দেয়। এটা ফাইল সেভ করার জন্য যথেষ্ট। এভাবে
পাওয়ার ব্যাকআপ থাকায় সবচেয়ে বড় লাভ হল ডেস্কটপের মত কোথাও নিবে কোন ইউপিএস সাথে
নিতে হচ্ছে না।
অনেক ল্যাপটপে টাচ স্ক্রিন নাই। অল ইন ওয়ান একটু বেশী বাজেটে গেলে টাচ স্ক্রীন
পাওয়া যায়। টাচ স্ক্রিন বাচ্চাদের জন্য বেশ মজাদার হবে। তবে হাই কনফিগারের গেমিং
পিসি হিসাবে এটা ভাল হবে না। যারা অফিশিয়াল কাজ টাচ স্ক্রিন মোবাইলের বাইরে করতে
হয় তাদের জন্য অল ইন ওয়ান বেশ কাজের। যারা বেশী বেশী ঘোরাঘুরি করেন তাদের জন্যও
এটা বেশ ভাল একটি ব্যবস্থা।
বর্তমানে এগুলোর দাম ল্যাপটপ থেকে কিছুটা কম। ছোট নোটবুক বা নেট পিসি হতে বেশী
দামী। অনেকগুলোতে ডিভিডিরম আছে। অনেকগুলোতে নাই। আজকাল ইন্টারনেটের ক্লাউড স্টোরেজ,
পেন ড্রাইভ ও মোবাইল ড্রাইভ ব্যবহারের কারণে
ডিভিডি ড্রাইভ কেনার প্রয়োজন নেই। এছাড়া নানা রকম ক্লাউড স্টোরেজ থাকার কারণে এখন
আর অত বেশী পরিমাণে স্টোরেজের প্রয়োজন হয় না। অল ইন ওয়ান তাই মধ্যম দামের টাচ
স্ক্রিন, ডিভিডি ড্রাইভ
ছাড়া ও মাঝারী মানের স্টোরেজের হলেই ভাল।
পরিশেষে বলব অল ইন ওয়ান পিসি আমাদের ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের দারুন বিকল্প হতে
পারে যা আমাদের পিসি ব্যবহারে স্বস্তি দিবে।
No comments:
Post a Comment