Pages

Thursday, March 2, 2017

ইউনিভারসাল মোবাইল চার্জার

গত কয়েক বছর(২০১৮-২০১৬) যাবত আপনারা সবাই কি লক্ষ করেছেন আপনাদের বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইলের পোর্টগুলি এক হতে শুরু করেছে। সকল চার্জার সকল মোবাইলে ব্যবহার করা যাচ্ছে। মোবাইল চার্জার গুলো যে কোন দেশে যে কোন ভোল্টে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এসি/ডিসি ১০০ হতে ২৬০ ভোল্টে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এটা ছিল একটা বড় সড় আন্দোলন। এটা শুরু করেছিল  ২০১১ সালে নকিয়া মোবাইল কোম্পানি। যদিও নকিয়া হারিয়ে গিয়েছিল ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুনরায় আবার নকিয়ার আগমন শুরু হয়েছে। নকিয়া সহ ১৪টি কোম্পানি টেক জায়েন্টরা জুন ২০১১ সালে কনফারেন্সে আলোচনায় আনে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের পোর্ট দিয়ে চার্জার তৈরি করছে। এতে ই বর্জ্য বেড়ে যাচ্ছে। সকল চার্জারের কানেকশনের পোর্ট স্ট্যান্ডারাইজ করার তখন ভাবনা আসেতারা মাইক্রো ইউএসবি কে স্ট্যান্ডার্ড কানেকশন পোর্ট হিসাবে নির্ধারণ করে। এতে তারা আশা করে পৃথিবী ব্যাপী ৫১০০০ টন ই-বর্জ্য কমে যাবে।
একই রকম করে স্ট্যান্ডারাইজ করার ঘোষণা আসে ২০১৪ সালে ইউ এর পক্ষ হতে। সেখানে ৫৫০ জন ইউ এর সদস্য মধ্যে ৮ জন বিরোধিতা করে। ইউ ২০১৭ সালের মধ্যে কেবলমাত্র মাইক্রো ইউএসবি চার্জারই অনুমতি দিবে। এভাবে সারা পৃথিবীতে মাইক্রো ইউএসবি একটা স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। আজ ঘরে ঘরে হরেক রকম মোবাইল চার্জারের আধিক্য নেই বললেই চলে। এমনকি অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স গেজেটও মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ও মোবাইল চার্জারকে ব্যবহার করছে। যেমন মোবাইল স্পীকার ও পিওএস মেশিন এ ধরনের চার্জিং সিস্টেম ব্যবহার করছে।
দুই বছর আগেও কখনো মোবাইল চার্জার সাথে না নিলে বিপদে পড়তে হত। এখন গ্রামের বাজারেও মাইক্রো ইউএসবি পোর্টের চার্জার পাওয়া যায়। অর্থাত গ্রামে গিয়ে স্যামসাং গ্যালাক্সির উপযোগী চার্জারও গ্রামের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তাই চার্জার মিল অমিল ইত্যাদি সমস্যা সত্যি দুর হয়েছে আমরা সকলেই এখন তা টের পাচ্ছি। আর একটি বিষয় আমরা টের পাচ্ছি তা হল যেসব মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে না বা নষ্ট হয়ে গেছে সে সব মোবাইলের চার্জার মাইক্রো ইউএসবি পোর্টের হলেই তা অন্য মোবাইলে ব্যবহার করা যাচ্ছে। মাইক্রো ইউএসবির যে কোন চার্জার যে কোন কমপিটেবল মোবাইলে ব্যবহার করা যাচ্ছে।
মোবাইলে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট প্রচলন হওয়ার পূর্বে কম্পিউটার ও ডিজিটাল ক্যামেরার মধ্যে ডাটা ক্যাবল হিসাবে চালু হয়। ইউএসবি ডাটা ক্যাবলের মধ্যে দুই তার আছে ৫ ভোল্ট পরিবহন করার জন্য। অন্য তিনটি তার আছে ডাটা পরিবহনের জন্য। চার্জারের জন্য মাইক্রো ইউএসবি ব্যবহার করার কারণে একই পোর্টের মধ্য দিয়ে চার্জিং বিদ্যুৎ ও ডাটা পরিবহন দুইটি করা যায় ফলে চার্জার ও ডাটার জন্য আলাদা আলাদা ক্যাবল প্রয়োজন হয়নি।
বিভিন্ন দেশে বিদ্যুতের স্ট্যান্ডার্ড বা ফ্রিকুয়েন্সি বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশে ২২০ ভোল্ট ৫০ হার্টস। আমেরিকায় ১১০ ভোল্ট ও ৫০ হার্টস। ২৪০ ভোল্টও আছে কোন দেশে আবার ৮৫ হার্টস ফ্রিকুয়েন্সি আছে কোথাও কোথাও। এখনকার মোবাইল চার্জারের সার্কিটের সাইজ অনেক ছোট হয়ে গেছে। ২ থেকে ৩ এ্যাম্পিয়ারের চার্জারের সাইজ অনেক বড় ও ভারী হত যদি তা কয়েল দিয়ে করা হত। কিন্তু এখন চার্জারগুলো এমন একটা ব্যবস্থায় এসেছে সাইজ অনেক ছোট। বিদ্যুতের রেঞ্জ বেড়েছে। ফ্রিকুয়েন্সির মধ্যেও রেঞ্জ বেড়েছে। কয়েল বাদ দিয়ে সুইচ মোড পাওয়ার সাপ্লাই করায় চার্জারের বিদ্যুৎ অপচয় কম। চার্জার মোবাইলে চার্জের জন্য কানেক্ট করলে বিদ্যুত খরচ হয় অন্যথায় আউটলেটে চার্জার লাগিয়ে রাখলেও বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র .১ ওয়াট। অপরদিকে কয়েল টাইপ চার্জারে মোবাইল কানেক্ট হোক আর না হোক বিদ্যুৎ খরচ হতে থাকবে। সুইচ মোড পাওয়ার সাপ্লাই প্রযুক্তির কারণেই এই যুগে একই রকম মোবাইল চার্জার বা ইউনির্ভাসেল চার্জার বানানোটা সহজ হয়েছে। এখন ওয়্যারলেস চার্জারের যুগে প্রবেশের পায়তারা চলছে।

মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট স্ট্যান্ডারাইজ করার কারণে সমস্ত পৃথিবীর ই বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে অকল্পনীয় ভূমিকা রেখেছে। এখন সময় এসেছে ই বর্জ্য প্রতিহত করার জন্য সমস্ত ল্যাপটপের চার্জার এক হওয়াটা জরুরী। সমস্ত কম্পিউটারের স্পীকারের চার্জারও এক হওয়া প্রয়োজন। সমস্ত রাউটার ও বৈদ্যুতিক সামগ্রীর চার্জারগুলো একই স্ট্যান্ডার্ডে হওয়া প্রয়োজন এতে ই-বর্জ্য অনেক কমবে। সেই সাথে সকলের অর্থেরও সাশ্রয় হবে।

No comments:

Post a Comment