Pages

Thursday, March 23, 2017

নগদ লেনদেন বিহীন ক্যাশলেস ক্যান্টনমেন্ট

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিপুটেশন থেকে আমি সেনানিবাসের জীবন অন্য সংস্থায় কাটাচ্ছি দেশের মফ:স্বল শহরগুলোতে দীর্ঘদিন আছি গত কয়েক বছরে ছোট শহরে থেকেও আমি ক্যাশলেস হয়ে গেছি ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আমার ক্যাশলেস বিষয়ে  পর্যবেক্ষণ গুলো আলোচনা করছি
প্রথমত: কুষ্টিয়া শহরের সমৃদ্ধশালী কাপড়ের দোকানগুলো প্রত্যেকটি দোকানেই ক্রেডিট /ডেভিড কার্ড দিয়ে কেনা কাটা করা যাচ্ছে পুনাক নামক পুলিশের একটি ডিপার্টমেন্টাল দোকান থেকে সবকিছু কার্ডে কেনাকাটা করা যাচ্ছে লোটো দোকান থেকে ছেলেদের কাপড়, জুতা আন্ডার গার্মেন্টস সবই কার্ডে মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে খেয়া নামক থ্রি স্টার ক্যাটাগরির রেস্টুরেন্ট কাম হোটেলেও কার্ড ব্যবহার করা যাচ্ছে গত দুই বছরে আমি কুষ্টিয়া শহরে নগদে কেনাকাটা করেছি কিনা তা আমার মনে পড়ছে না অন্যান্য আভ্যন্তরীণ রেস্ট হাউজ ক্যান্টিনে মাস শেষে ক্রস চেক দিয়ে বিল পরিশোধ করছি
আমি অনেক বছর পর বেসামরিক পরিবেশ থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশে গিয়ে একটা বড় ধাক্কা খেলাম সেটা হল বেসামরিক পরিমণ্ডলে ক্যাশলেস হতে পারলেও ক্যান্টনমেন্টে ক্যাশলেস হতে পারলাম না এখন ব্র্যাক ব্যাংক ডাচ বাংলা ব্যাংক লি(ডিবিবিএল) উঠে পড়ে লেগেছে সারা বাংলাদেশ ক্যাশলেস বানানোর জন্য কুষ্টিয়ার বড় বড় দোকানগুলোতে পিওএস মেশিন দিয়েছে ডিবিবিএল নামের ব্যাংকটি ফলে শহরের চাকুরীজীবী শিক্ষিত তাদের জন্য ক্যাশলেস অনুশীলন বেশ ভাল হয়েছে গত চার বছরে একটা রোগ আমার হয়েছে তা হল টাকা ধরতে অনাগ্রহটা এই রোগ আমার পুরো ফ্যামিলিকে পেয়েছে কারণ অপরিষ্কার টাকা ধরতে চাই না
কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চ ১২ হতে ১৫ তারিখ কুমিল্লা সেনানিবাসে বেড়ানোর সময়টায় আমাকে সিএসডি ব্যতীত সব জায়গায় কেনাকাটা করতে হয়েছে নগদ টাকায় আমাকে ময়লা টাকা ধরতে হয়েছে বিষয়টা দু:খজনক সুন্দর সাজানো গুছানো দোকান অথচ কার্ড পেমেন্টের ব্যবস্থা নেই আমি নিশ্চিত ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বলে ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যতীত অন্যান্য ব্যাংক পিওএস মেশিন নিয়ে ঢুকতে পারেনি অন্যথায় বেসামরিক এলাকার থেকে অধিক উপযোগী সেনানিবাসের মত সুন্দর সুশৃঙ্খল এলাকা পেলে অনেক ব্যাংকই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করার সিস্টেম চালু করে দিত কার্ড দিয়ে কেনা কাটায় ব্যাংকের সবচেয়ে লাভজনক বিষয় হল টাকাটা তাৎক্ষনিক সেই ব্যাংকের একাউন্টে জমা হচ্ছে
সেনানিবাসের একটি রেস্টুরেন্টে পিওএস মেশিন রেখেছে তাতে আবার % অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় % অতিরিক্ত চার্জ ধরা মানে হল ক্যাশলেস হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা ক্যান্টনমেন্টে যারা থাকেন তারা হয়ত ক্যান্টিন চিট বাকীতে চলেন বলে মাসের প্রথমে অপরিষ্কার টাকাগুলো একবার ধরলেই কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে না কিন্তু আমার মত ভিজিটরদের জন্য এটিএম থেকে টাকা তুলে ক্যাশলেসের বদলে ক্যাশফুল হতে হয়
বাংলাদেশের বেশীরভাগ সৈনিকের বেতন এখন ট্রাস্ট ব্যাংকের সৈনিকদের নিজেদের একাউন্টে জমা হচ্ছে ক্যান্টেনমেন্টের মোড়ে মোড়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম সেখান থেকে সৈনিকরা টাকা তুলে নিচ্ছে তাদের কাছে ডেভিড কার্ড আছে সকল সৈনিকদের সহজেই ক্যাশলেস বা লেস ক্যাশ করা যায় সৈনিকরা এটিএম কার্ড ব্যবহার করে সিএসডি থেকে কেনা কাটা করছে সৈনিকরা ক্যাশলেস হওয়ার সমস্ত উপকরণে এগিয়ে আছে এখন প্রয়োজন তাদেরকে আর একটু সহযোগিতা করা তবে আমার মনে হয় ট্রাস্ট ব্যাংক বিনে খরচে পিওএস মেশিন সেনানিবাসে চালু করতে পারে কারণ সৈনিক সবাইকে কার্ড দেয়া আছে তাদের সন্তানদের ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পড়ুয়া একাউন্ট খুলে দিয়ে কার্ড দেয়া হচ্ছে তাদের স্ত্রীদের স্বামীর একাউন্টের সাথে এ্যাড অন কার্ড দেয়া যাচ্ছে এতে সৈনিক পরিবারের কাউকে আর ক্যাশ নিয়ে যেতে হল না
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এটিএম স্থাপন করার বদলে হাজার টাকা খরচ করে কিছু পিওএস মেশিন ক্রয় করে তা সেনানিবাসের দোকানে ক্যান্টিনে দিলে সৈনিকের টাকা ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে এটিএম এর মাধ্যমে নগদে বের না হয়ে পিওএস মাধ্যমে এর ট্রাস্ট ব্যাংকেরই অপর একাউন্টে টাকা জমা হত ব্যাংকের টাকা ব্যাংকেই থাকত ধীরে ধীরে নতুন এটিএম সেনানিবাসে স্থাপন না করে সেনানিবাসের বাইরে ট্রাস্ট ব্যাংক তাদের এটিএম বাড়াতে পারত ডিবিবিএল প্রতি উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে তাদের এটিএম ফাস্ট ট্রাক বাড়িয়ে চলেছে জেলা কোটা ভিত্তিক সৈনিক ভর্তির কারণে দেশের সকল প্রান্তে সেনাবাহিনীর সৈনিক রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক যদি ডিবিবিএল এর মত দেশের সমস্ত উপজেলা ইউনিয়নে ফাস্ট ট্রাক বা এজেন্ট ব্যাংকিং স্থাপন করতে পারলে দেশব্যাপী সাধারণ বা পেনশন ধারী সৈনিকেরা অনেক বেশী উপকৃত হত এই সকল ফাস্ট ট্র্যাক বা এজেন্ট ব্যাংকিঙে ডিবিবিএল এর মত ট্রাস্ট ব্যাংক স্থানীয় অবসর প্রাপ্ত সৈনিকদের চাকুরী দিতে পারত
সেনানিবাসের সমস্ত দোকান পাট সামরিক বেসামরিক ভাবে পরিচালিত হোক না কেন সমস্ত দোকানে পিওএস মেশিন দেয়া যেতে পারে সৈনিকরা যারা ক্যান্টিন পরিচালনা করে তারা কার্ডের মাধ্যমে বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মালামাল বিক্রির পেমেন্ট নিবে পুনরায় যখন তারা ক্যান্টিনের মালামাল বাহির হতে ক্রয় করবে তা তারা চেকের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করবে কার্ড দিয়ে কেনা বেচার লাভ হল সকল কেনাবেচা টাকার পরিশোধ ট্রেসেবল হবে যেকোনো লেনদেনে অটোমেটিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেকর্ড থাকছে তাতে দুনীতি কমে যায় সেনানিবাসের সকল দোকান ক্যান্টিন ক্যাশলেস করা গেলে টাকা আত্মসাৎ অনিয়মের দুই একটি ঘটনা মাঝে মাঝে  ঘটে তাও নির্মূল হবে একটি ডিভিশনে যদি ১০,০০০ সৈনিক থাকে আর তারা যদি গড়ে মাসে ২০,০০০ টাকা লেনদেন করে তবে মাসে ২০ কোটি টাকার লেনদেন হবে বাংলাদেশে ডিবিবিএল এর মত কিছু ব্যাংকে যদি বলা হয় মাসিক ২০ কোটি টাকা আপনাদের ব্যাংক একাউন্টে প্রতি মাসে আসবে আপনারা শুধু বিনে পয়সায় ২০০ টি পিওএস মেশিন সরবরাহ করবেন আমি নিশ্চিত অনেক ব্যাংক এগিয়ে আসবে এই সুযোগটি নিতে এতে কার্ড পাঞ্চ করলে % বেশী দিতে হবে আর নগদ দিলে কম এরূপ অবস্থায় যেতে হবে না সেনানিবাসের দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ টিকিট বিক্রি করে সৈনিক টাকা নিবে ক্যান্টিনের মালামাল নগদে টাকা নিয়ে বিক্রি করবে এটা দৃষ্টিকটু তার চেয়ে কার্ড সোয়াইপ করে বিক্রয় অনেক বেশী শোভনীয়

পৃথিবী ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা সকল সদস্যদের সততার পথে আনতে পারি সেনানিবাস একটা সুশৃঙ্খল এলাকা বলে একে সবার আগে ক্যাশলেস করা যায় ক্যাশলেস সমাজ ব্যবস্থা একটি স্বচ্ছ সামাজিক ব্যবস্থা আমরা যেকোনো একটি সেনানিবাসকে ক্যাশলেস বা লেস ক্যাশ করতে পারলে বাংলাদেশও একসময় পৃথিবীর অন্যান্য ক্যাশলেস দুনীতি মুক্ত দেশগুলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারবে

No comments:

Post a Comment