বাংলাদেশের গ্রামে লক্ষ
লক্ষ মহিলা ও কিশোরীরা জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে দিনের একটা বড় অংশ ব্যয় করে।
জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ ও ধোয়ায় রান্না করার প্রকৃত মূল্য মাত্র দুইটি সিলিন্ডারের
মূল্য অর্থাৎ ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের মূল্যে ১৭০০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৫৭ টাকার
গ্যাস খরচ হয়। এর বিনিময়ে গ্রামের মহিলাদের যে যে উপকার হবে তা হল তারা প্রতিদিন
৪০০ সিগারেটের সমপরিমাণ ধোয়া থেকে মুক্তি পাবে। ধোয়ার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে
বাঁচবে। লাকড়ির চুলায় রান্না করার কারণে জ্বালানী কুড়ানো বা সংগ্রহ করা ও ধোয়ার
চুলায় রান্না করে প্রতিদিন কমপক্ষে অতিরিক্ত দুই ঘন্টা গ্রামের মহিলারা ব্যয় করে
থাকেন। এই দুই ঘণ্টা সময় গ্যাসের চুলায় রান্না করলে প্রতিটি মহিলার দৈনিক দুই
ঘণ্টা পরিমান সময় বেচে যায়। এই দুই ঘণ্টা সময় সন্তানদের পড়াশোনা ও পারিবারিক
অন্যান্য কাজ করতে পারেন।
লাকড়ি সংগ্রহের কাজটা
মোটেই সুখকর নয়। সাপ বিচ্ছু ইত্যাদির মধ্যে পড়তে হয়। লাকড়ি কাটতে গিয়ে হাত পা
কাটতে পারে। গ্রামের জংগলে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে গ্রামের কম বয়সী মেয়েরা অনেক সময়
অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে। যৌন হয়রানীর ঘটনাও হরহামেশা হয়। অনেক মহিলারা কাচা গোবরের
লাকড়ি তৈরির জন্য সকালে অপরিষ্কারে দিন শুরু করে।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি
মানুষের মধ্যে ৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬৪ লক্ষ মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে। এছাড়া লাকড়ি
ব্যবহারকারী গ্রামের এই পরিবারের সংখ্যা এক কোটি কমবেশি হতে পারে। ভারতে ১২৫ কোটি
জনসংখ্যার মধ্যে লাকড়ি দিয়ে রান্না করার সংখ্যাটা হল ৪.৫ কোটি পরিবার। ভারত সরকার
এই ৪.৫ কোটি জনসাধারণকে দুই বছর বিনা মূল্যে গ্যাস দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে
ভারতের সামর্থবানরা তাদের গ্যাসের সাবসিডি ছেড়ে দিয়েছে। ভারতে যারা গ্যাসের
সাবসিডি পেত তাদের সাবসিডি সিলিন্ডারের উপর না দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী প্রত্যেকের একাউন্টে দেয়া শুরু করলেন। এতে দেখা গেল ৬২% গ্যাস সাবসিডি দিলেই
হচ্ছে। বাকী ৩৮ শতাংশই ভুয়া। এই ৩৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় ভারত সরকারের ২১০০০ কোটি রুপি
বছরে সাশ্রয় হচ্ছে। এতে সূত্রপাত হল প্রান্তিক গরীব মহিলাদের বিনামূল্যে গ্যাস
সিলিন্ডার দেয়া। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই মহতী ডাকে প্রায় ৩০ লক্ষ ভারতী তাদের
গ্যাস সাবসিডি ছেড়ে দেয়। এতে সরকার আরও বেশী দরিদ্র মহিলাদের গ্যাস সিলিন্ডার দেয়ার
পথ সুগম হয়।
বাংলাদেশের গরীব
মহিলাদের ভারতের মত বিনা পয়সায় বা সাবসিডি দেয়া যেতে পারে। এতে গ্রামীণ মহিলাদের
স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হবে। তাদের পরিবারকে সময় দেয়ার পরিমান বেড়ে যাবে। তারা যদি ৮০০
টাকায় সিলিন্ডার ক্রয় করে তার অর্ধেকটাই অর্জন করতে পারবে তাদের আশে পাশের লাকড়ি
বিক্রয় করে। সরকার তখন ইটের ভাটায় মূল্যবান আমদানি করা কয়লা ব্যবহার না করে
গ্রামের মহিলাদের সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণে বেচে যাওয়া লাকড়ি সেখানে ব্যবহার করা
যাবে। গ্রামের মহিলাদের বেচে যাওয়া লাকড়ির অন্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হতে পারবে।
এলপিজি সাধারণত পরিবেশ বান্ধব। কম ধোয়া সৃষ্টি করে। এটার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের
ঝুঁকি তুলনামূলক কম। বর্তমানে প্লাটিকের সিলিন্ডার তৈরি শুরু হয়েছে। তখন সিলিন্ডার
বিস্ফোরণের ঝুঁকি আরও কমে যাবে।
বাংলাদেশের গ্রামের সকল
মহিলাদের ভারতের মত বিনামূল্যে প্রথমে ও পরে সাবসিডি মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দিতে
পারলে গ্রামের দরিদ্র মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। তাদের সন্তানরা
স্বাস্থ্যবান হবে। তাদের সন্তানরা আরও পড়াশোনা সুযোগ পাবে। রান্নার মত উর্পাজনহীন
কাজে সময় ব্যয় কমে গেলে গ্রামীণ মহিলারা অধিক পরিমাণ উর্পাজন কাজে বেশী মনোনিবেশ
করতে পারবে। এতে সামাজিকভাবে আর্থিক সূচক উর্ধ্বমুখী হবে। আমাদের দেশের কর্ণধাররা
ও সাধারণ মানুষ দরিদ্র মহিলাদের বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেয়ার বিষয়ে এখনই
উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
No comments:
Post a Comment