বাংলাদেশে
ডিজিটাল কার্যক্রম মূলত তথ্য নির্ভর ছিল। সবাই সকল তথ্য জানবে ও সরকারী কাজে
স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা বাড়বে। অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডিজিটাল কার্যক্রম
চলছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করে। ২০১৬ সালে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া ঘোষণা করেছে ক্যাশ
লেস আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে। ভারতে অনেক ধরনের ভর্তুকি ও ঋণ এখন আর বিভিন্ন
চ্যানেল অনুযায়ী দেয়া হয় না। ভর্তুকি বা সাবসিডি এখন সরাসরি কৃষক বা সুবিধা
ভোগীদের নামে তাদের পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে খোলা একাউন্টে যায়। এতে প্রকৃত লোক
টাকা পায়। দালাল ও সরকারী অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীর দুনীতি করার সুযোগ কমে গেছে।
ভারতের
মধ্যবিত্তদের গ্যাস সাবসিডি দেয়া হত। ভারত কম মূল্যে সিলিন্ডার দেয়া বন্ধ করে
সরকার ঘোষণা দিল বাজার থেকে নগদমূল্যে ক্রয় কর। সাবসিডি টাকা যার যার পরিচয় পত্রের
নম্বর দিয়ে খোলা ব্যাংক ইন্ডিয়ার আধার একাউন্টে দেয়া হল। এতে দেখা গেল ৪০% সাবসিডি
গ্রহণকারীর সংখ্যা কমে গেল। গ্যাস সাবসিডি নেয়া ৪০% লোকই নাই। এটা কিভাবে সম্ভব।
সম্ভব, কারণ ভুয়া নাম
দিয়ে সাবসিডির গ্যাস নেয়া হচ্ছিল।
বাংলাদেশে অনেক
আগে থেকেই মেয়েদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছিল। এগুলো নিয়ে অনেকের অভিযোগের অন্ত ছিল না।
অনেক স্কুল ভুয়া ছাত্রী দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করত। অনেক স্কুল উপবৃত্তি টাকা থেকে
ঘুষ বাবদ খরচ হয়েছে সেই অজুহাতে ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা কেটে নিত। এটা একটা
সিস্টেম লস কার্যক্রম চলছিল। অনেক আগে থেকে চ্যানেল অনুযায়ী উপবৃত্তির টাকা ভাগ
বাটোয়ারা হত। তবে ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার পরও এটা মেয়েদের শিক্ষার আগ্রহ বাড়িয়েছে।
বাল্য বিবাহ রোধ করেছে। সার্বিক ভাবে মেয়েদের শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে। এখন
সরকারের আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল স্কুল থেকে ঝড়ে পরা শিশুদের সংখ্যাটা কমানো।
সরকার প্রাইমারী শিক্ষায় প্রায় দেড় কোটি শিশুকে বৃত্তি প্রদানের প্রকল্প হাতে
নিয়েছে। এই বৃত্তির টাকা সরকার নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইল একাউন্টে
সরাসরি প্রেরণ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকার প্রথমে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর
মাধ্যমে পাইলট প্রোগ্রাম করেছে।
বাস্তবায়নের
জন্য বাংলাদেশ সরকার রুপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমটি বেছে
নিয়েছে। রুপালী ব্যাংক সরকারী হলেও শিওর ক্যাশ বেসরকারি সহযোগী কোম্পানি। এদের
সফটওয়্যার দেশে তৈরি। এদের সাথে বিদেশী সংস্থা আছে। তাই স্বচ্ছতা ও জবাব দিহীতার
সাথে এরা কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে মনে হয়। সরকারী রুপালী ব্যাংক ২৪০০০ কোটি উপবৃত্তির
টাকা বিতরণ করবে। দুর্বল সরকারী ব্যাংকটিকে সবল করার এটা একটি সেরা ব্যবস্থা।
যেহেতু রুপালী ব্যাংক তাদের কার্যক্রম মোবাইল ব্যাংকিং প্লাট ফর্মে পরিচালনা করবে
তাই তাদের দক্ষতা নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
এখন আসা যাক
মোবাইল যোগাযোগের বিষয়ে। দেড় কোটি অভিভাবকের মোবাইল একাউন্টে টাকা যাবে। এককালীন
টাকা, মাসিক টাকা, পরীক্ষার ফি এর টাকা ইত্যাদি নানাবিধ
টাকা মিলিয়ে ২০০০ টাকার কাছাকাছি আসবে। দেড় কোটি শিওর ক্যাশ গ্রাহক তৈরি করতে হবে।
আবার অনেকের মোবাইল নেই। এখানে টেলিটকের ২০ লাখ সিম বিনামূল্যে বিতরণ এবং প্রতি
মাসে ২০ টাকার ফ্রি টক টাইম একটা বিশাল ব্রেক থ্রো বলা যায়। টেলিটক ৩৭ লাখ গ্রাহক
নিয়ে ঢিমে তালে বেচে আছে। এখন ২০ লাখ যোগ হলে তা ৫৭ লাখ হবে। বিনা খরচে ২০ মিনিট
ফ্রি টক টাইম ব্যবহারের জন্য অনেকেই এটা ব্যবহার করবে। আবার অনেক সময় আরও টাকা
রির্চাজ করেও ব্যবহার করবে। আশার করা যায় এতে তাদের রেভিনিউ ধীরে ধীরে বাড়বে।
সরকার নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ানোর জন্য গরীব মহিলাদের বিনামূল্যে মোবাইল দেয়ার
ব্যবস্থা রাখছে। আমি নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকার পরও টেলিটক নেটওয়ার্ক দীর্ঘ দিন যাবত
করছি। তা করছি একটা মাত্র কারণে। তা হল। দেশের টাকা দেশে রাখার ইচ্ছার করনে। আমার
কাছে মনে হয় সরকার তার সকল সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সিলিংসহ টেলিটকের
মোবাইল গ্রাহক করা উচিত। এতে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মোবাইল ব্যবহার বাবদ
অন্য কোম্পানিকে যে খরচ দেয় সরকারের তা বেচে যেত। এতে সরকারী সংস্থা টেলিটকের অনেক
উন্নতি হত। টেলিটক তাদের নেটওয়ার্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা একটা ভাল দিক।
টেলিটকের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনও হতে পারে পৃথিবীর চরম আর্থিক মন্দা
হল। গ্রামীণ ফোন, বাংলা
লিংক ও রবির মত বিদেশী কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলল। তখন আমাদের সরকারী
মোবাইল ফোনটি আমাদের রক্ষা করবে। যেমন নানা ছুতায় বেসামরিক পরিবহন ধর্মঘট করে
আমাদের দুর্দিন গুলোতে ঝিমিয়ে চলা রেলওয়ে দেশকে রক্ষা করে। তেমনি আমাদের ঝিমিয়ে
পড়া সরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা বিতরণ ও টেলিটকের মোবাইল সিম বিতরণ একটা
যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যাদের মাথা হতে আইডিয়াগুলো এসেছে তারা প্রশংসার দাবিদার।
বাংলাদেশের সকল
শিশুকে স্কুলে আনতে সকল অভিভাবককে টাকা দেয়া এটা একটা ভাল ব্যবস্থা। মোবাইল
ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা দেয়া হলে জালিয়াতি কমবে। অনেক সময় উপবৃত্তির ১০০ টাকা
নেয়ার জন্য ২০ টাকা যাতায়ত ভাড়া যায়। লাইন দিয়ে দিনের পুরো সময়টা নষ্ট হত। এখন
মোবাইলে টাকা পাবে। পাঁচ মিনিট হেটে গ্রামের দোকানের মোবাইল এজেন্ট হতে টাকা তুলে
নিলেই হবে। সময় ও টাকা দুটোই বেচে যাবে। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিদিন ৪০০ হতে ৬০০
কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এটা এখন একটা শক্তিশালী মাধ্যম।
রুপালী ব্যাংকের
শিওর ক্যাশ একটা ভাল ব্যবস্থা করেছে। তা হল তারা একের পর এক ব্যাংক সিস্টেম তাদের
সাথে জুড়ে দিচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে শিওর ক্যাশের ভাল গ্রোথ হবে। পরিশেষে তথ্যের
পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনে বাংলাদেশ ডিজিটাল হোক এটাই আমাদের আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার
স্বপ্ন।
২০১৭ সালের জুন
মাসে এই লেখাটি অনেক ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে লিখছি। আমাদের দেশের সরকারী সংস্থাগুলো
লস কার্যক্রম থেকে লাভজনক অবস্থান ফিরে আসলে দেশ আরও গতিশীল হবে আরও এগিয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment