Pages

Thursday, June 22, 2017

এক পরিবারে একাধিক টিভি অপ্রয়োজনীয়, লাইভ স্ট্রীমিং তার সমাধান

২০০০ সালের দিকে আমি ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য আমার কম্পিউটারে টিভি দেখার জন্য আমি একটা টিভি কার্ড লাগাই। এরূপ আমার মত অনেকেই বাসার সকল সদস্যদের মন রক্ষা করার জন্য একাধিক টিভির ব্যবস্থা করে থাকেন। আধুনিককালে অনেক টিভি চ্যানেল এবং অনেক অনেক রুচি ও চাহিদা বিদ্যমান। কোন বাসায় একাধিক টিভির প্রয়োজন হয় যখন পরিবারে কোন ক্রিকেট প্রেমী থাকে। ক্রিকেট প্রেমীরা সাধারণত লম্বা সময় সহ টিভি দখলে নেয়। এতে বাচ্চাদের কার্টুন  ও মেয়েদের সিরিয়াল দেখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরূপ অবস্থায় একাধিক টিভি কেনার প্রয়োজন হয়। আমার বাসায় অন্য সবার মত একাধিক টিভি রেখেছিলাম। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে আমি টিভি দেখা ছেড়ে দেই। এই টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হয়েছে মূলত আমার লেখালেখির জন্য সময় ব্যয় করার জন্য। যেহেতু টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছি আমি পড়া ও লেখার জন্য সময় বের করতে পারি। টিভি দেখা ছেড়ে দেয়ার পর বাসায় একাধিক টিভি রাখার প্রয়োজন হয়নি। সকাল বিকাল মেয়ের কার্টুন বিকালে ছেলের ডিসকভারি ও সন্ধ্যায় স্ত্রীর সিরিয়ালের সময় ভাগ করে এক টিভিতে হয়ে যায়। মাঝে মনের টানে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখি। ক্রিকেট খেলা দেখলেই লম্বা সময়ের এ্যাংগেইজমেন্টের সময় বিরোধটা হয়। তখন দুইটি টিভির প্রয়োজন পড়ে। আগে টিভি কার্ড দিয়ে সমস্যা নিরসন করেছি। কয়েক বছর চালানোর পর টিভি কার্ড নষ্ট হওয়ার পর সেটার প্রতিস্থাপক আর কিনিনি। কারণ প্রয়োজন হয়নি। আমি ক্রিকেট একটানা না দেখার কারণে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের দেখার বিরতির সময়গুলোতে সাধারণত ক্রিকেটের স্কোর দেখে নিতাম বা মোবাইলে দেখে নিতাম। এভাবে আমার কাজ একটি টিভিতে সারছিলাম। ২০১৭ সালের জুন মাসে বদলী জনিত কারণে ঢাকায় আসলাম। তখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলছিল। খেলাগুলো বিরতি দিয়ে না দেখে পুরো খেলা দেখার জন্য মন চাইল। স্ত্রীর সিরিয়াল হবে। সারাদিন ব্যস্ততার পর তার এই সুযোগটি না হলে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। তখন মনে হয় খরচ গেলেও আর একটি টিভি কেনাটা অতি জরুরী।
এমন ভাবতে ভাবতে মোবাইলে ইউটিউব অন করে “লাইভ ক্রিকেট ম্যাচ বাংলাদেশ-অন্য দেশ” দিলাম তারপর শুরু হল মজার ব্যাপার। ইউটিউবে খেলার লাইভ স্ট্রীমিং চলে আসল। আমার মনে হয় এখন যে কোন গুরুত্বপূর্ণ খেলা লাইভ স্ট্রীমিং দেখা যাবে। আর এভাবে যদি লাইভ স্ট্রীমিং দেখা যায় তবে একাধিক টিভি কেনার একদমই প্রয়োজন নেই। এর জন্য অবশ্য বাসায় আন-লিমিটেড ভাল মানের ইন্টারনেট প্রয়োজন। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ডিশ অপারেটররাই তাদের অপটিক্যাল লাইনে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে। ইন্টারনেট সংযোগ এখন আগের তুলনায় অনেক কম খরচে পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টারনেট রাউটারও অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। বাসা বাড়ীতে অনেকেই ল্যাপটপ ও মোবাইল পরিবারের সকল সদস্যের একাধিক ব্যবহারের জন্য রাউটার ব্যবহার করছে। এই রাউটারের ব্যবহারের ফলে মোবাইলের মাধ্যমে লাইভ স্ট্রীমিং সহজ হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে লাইভ স্ট্রীমিং টিভি দেখতে পারার কারণে অনেক সময় পারিবারিক বিশেষ চাহিদার সময় পরিবারে একাধিক টিভির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। এমনকি অনেক সময় স্মার্ট টিভির মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগে আমরা টিভি অনুষ্ঠানও দেখতে পারি যখন আমাদের ক্যাবল টিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে বা সমস্যা হয়। তারের মাধ্যমে বাসাবাড়ির ব্রডব্যান্ড সংযোগ না থাকলেও আমরা আবার স্বল্প সময়ে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে জিবি সাইজের প্যাকেজ কিনে আমরা ব্রডব্যান্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা সাময়িক বন্ধ সময়গুলোতে নিজেদের টিভি বা ভিডিও দেখার চাহিদা মেটাতে পারি।
আমাদের হাতের স্মার্ট ফোনটি একাধারে কম্পিউটার, টিভি ও গানের অডিও সিস্টেমকে প্রতিস্থাপন করেছে। ফলে একটা ঘরে যতগুলো স্মার্ট ফোন আছে আমরা নির্ধিধায় বলা যায় আমাদের ঘরে ততোগুলো টিভি আছে। তাই আজকে দিনে একটি বাসস্থানে একাধিক টিভির প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এমনকি ইন্টারটেইনমেন্ট এতটাই ব্যক্তিগত হয়ে যাচ্ছে টিভির ব্যবহার হয়ত আরও কমে যাবে। ক্যাবল টিভি লাইন প্রতিস্থাপিত হবে আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

No comments:

Post a Comment