Pages

Thursday, June 15, 2017

পেন ড্রাইভ/মেমোরী কার্ডে ছবি সরবরাহ ও ফটোগ্রাফিক ব্যবসা

দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র বীচে যাওয়া হয়নি। আমি ২০১০ সালের জুন/জুলাইয়ে কক্সবাজার বীচে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের সাথে ক্যামেরা ছিল। তবুও বীচের কিছু ফটোগ্রাফার ১০ টাকার বিনিময়ে আমাদের ছবি তুলে দিত। সকালে ছবি তুলে এডভান্স পেমেন্ট করতে হত। নির্দিষ্ট দোকানে বিকালে ছবি সরবরাহ করা হত। সে সময়কার তোলা অনেক ছবি এখনও আছে। ক্যামেরা থাকলেও এদের কাছ থেকে ছবি তুলে নেয়া অনেকটা ক্রেজ ছিল বলা যায়। এরা সৈকতের আলো আধার নির্ণয়, স্থান ও সময় নির্ণয়ে এত পারদর্শী যে তারা খুব সুন্দর ছবি তোলে। ফোরআর ছবির সাধারণ প্রিন্টিং এর খরচ ৫/৬ টাকা এতে প্রফেশনালদের ছবি তোলা বাবদ লাভ ৪/৫ টাকা। দশ টাকা করে প্রিন্টিং সহ আজও তারা ছবি তুলে যাচ্ছে।
আমি আমার অনেক ছবি স্ক্যান করে ডিজিটালী সংরক্ষণ করেছি। সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য যদি আপনি ফেইসবুকে দিতে চান তবে আপনাকে বীচের ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে সফটকপি নিতে হবে। এখানেই ডিজিটাল ব্যবসা জড়িত। কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু আমাকে সুন্দর সুন্দর বীচের ছবি ভাইভারে দিল। আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হলাম ছবিগুলো দেখে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম এত সুন্দর ছবি কোন মোবাইলে তুলেছ। সে জানাল মোবাইলে নয় প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার তুলে দিয়েছে। আমি বললাম ভাল ছবি তুলেছে। তবে এরা টাকা নিলেও ভাল ছবি তুলে।
আমি তখন বললাম আমিও অনেক ছবি তুলিয়েছি এদের দ্বারা। আমার এক এ্যালবাম ভর্তি আছে বীচের ছবি দিয়ে। বন্ধুটি বলল এখন ছবি তুলে আর এ্যালবাম ভর্তি করতে হবে না। এখন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির ধরন পাল্টিয়েছে। বেশীরভাগ ইয়াং ছেলেমেয়ে চায় তার ছবিগুলো সাথে সাথে ফেইসবুকে দিতে। এ্যালবামে ছবি রাখার আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ছবি সাথে সাথে ফেইবুকে দেয়ার জন্য প্রয়োজন ছবির সফট ভার্সন। এখন ফিল্মি ক্যামেরা উধাও হয়ে গেছে। ছোটখাটো ডিজিটাল ক্যামেরা মোবাইলের কাছ মার খেয়ে গেছে। হাই রেজুলেশন প্রফেশনাল ক্যামেরা এখনও টিকে আছে প্রফেশনালদের হাতে। তবে মোবাইলের ক্যামেরা যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে তাতে প্রফেশনাল ক্যামেরার গাট্টি গোল হতে পারে। মোবাইল অনেক অগ্রসর হলেও দক্ষ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাররা বেচে থাকবে তাদের ছবির উপর আগ্রহ ও পেশাদারিত্ব নিয়ে। সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর ছবির জন্য তাদের উপর নির্ভর করতেই হবে।
পেশাদার ফটোগ্রাফাররা তাদের ব্যবসার পরিবর্তন এনেছে। এরা মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে আপনার মোবাইলে ছবি সরবরাহ করবে। প্রতিটি ভাল ছবি তুলে দিতে তারা আপনাকে তিন টাকা চার্জ করবে। এ রেটটি হল ২০১৭ সালের প্রথম দিকে। তবে হার্ড কপি ছবি তুলে দিলে ১০ টাকা রেট চালু আছে। একশত ছবি প্রফেশনাল দ্বারা তুলতে খরচ ৩০০ টাকা। অথচ হার্ডকপি ছবি নিলে ৩০ টা ছবিতে খরচ ৩০০ টাকা। ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে ৩০০ টাকায় ১০০ ছবির অফারটিই ভাল। সেই সাথে প্রায় সাথে সাথে ফেইসবুকে প্রফেশনাল কোয়ালিটির ছবি আপলোড করা সম্ভব।
প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের লাভ এতে বেশী কারণ ছবি আলাদা করে প্রিন্ট করে সরবরাহ অপেক্ষা সাথে সাথে মেমোরী কার্ড বা মোবাইলে ছবি সরবরাহ করা অনেক বেশী সহজ ও লাভজনক।
হার্ডকপি ছবির প্রিন্ট করা কমে গেলেও নতুন ধরনের ডিজিটাল সরবরাহের চাহিদা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদেরকে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে বাঁচিয়ে রেখেছে। আর কয়েকদিন পর হয়তবা ক্লাউডে ছবি সরবরাহ করবে। ড্রপবক্স টাইপ ক্লাউন্ড একাউন্টে সরাসরি ছবি পাঠিয়ে দিবে। সেই ছবি ডাউনলোড করে তারপর পেমেন্ট। এমন হতে পারে ফেইসবুকে প্রফেশনালরাই ছবি আপলোড করে দিবে।
ডিজিটাল যুগের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে অনেক কিছু। আমদের মাঝে মোবাইলে ছবি তোলার ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের দুর্দিন শুরু হচ্ছিল। কিন্তু ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা মেমোরি স্টিক/পেন ড্রাইভের ব্যবহারে তাদের ব্যবসায় পুন:প্রতিষ্ঠা করেছে। সময় ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফটোগ্রাফিতে ব্যবসায়ী ধরনের পরিবর্তন একটা চমৎকার সাফল্য।

No comments:

Post a Comment