Pages

Thursday, August 3, 2017

ফেইসবুকে ভিক্ষুকদের ছবি


আমরা সবাই যাদের সামর্খ আছে তার স্মার্ট ফোন কিনি। ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ফেইসবুক ব্যবহার করি। ফেইসবুক অনেক উপকারী নেশা সন্দেহ নেই। এতে আমাদের অনেকের সাথেই ভার্চুয়ালই সংযোগ রাখতে পারি। আমি দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। আমার বলতে দ্বিধা নেই অনেকেই আছে যারা কোন তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। কিন্তু তারা ফেইসবুক ব্যবহার করেন।
আমি বেশ কিছুদিন যাবত ভাবছিলাম ভিক্ষুকদের ফেইসবুকে ছবি দিলে কেমন হয়। আমি অনেক দিন থেকে ফেইসবুক দেখছি কিন্তু ফেইসবুকে কেউ ভিক্ষুকের ছবি পোষ্ট করেনি। অথচ এটা করলে ধীরে ধীরে ভিক্ষুকদের একটা সংগ্রহশালা হয়ে যেতে পারে। ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা যদি সপ্তাহে অন্তত একটা করে ভিক্ষুকের ছবি এ্যাড করে তবে লক্ষ লক্ষ ভিক্ষুকের ছবি আমরা এ্যাড করতে পারব।অনেক ভিক্ষুক হয়ত ছবি তুলতে চাইবে না। তখন তাকে বলতে হবে বলা যায় না তোমার এই ছবির জন্য কোন ব্যক্তি তোমাকে কাজে ডাকতে পারে। তোমার ভাগ্য খুলে যেতে পারে। এভাবে বললে অবশ্য ভিক্ষুকরা ছবি তুলতে আপত্তি করবে না।
আমরা সব সময় ব্রেকফাস্টের মেনুসহ পরিবারের ছবি। নানা গেট টুগেদারের সেলফি ও বেড়ানোর ছবি দিয়ে অপেক্ষায় আছি কখন লাইক পাব। এই অভ্যাস থেকে আমরা কিছুটা বিরতি দিয়ে বরং এমন করতে পারি সপ্তাহে একটা ছবি ভিক্ষুকের সাথে তুলে তার বর্ণনা দিতে পারি। এতে ছবি তোলার পাশাপাশি তার সাথে দুই দণ্ড কথা বলে নিতে পারি। দুই একশত টাকা দিতে পারি। তার বিষয়ে কিছু তথ্য নিয়ে তার ভিক্ষা করার কারণ জেনে নিয়ে ফেইসবুকে দিতে পারি। এতে এক বছরে আপনার ৫২টি ভিক্ষুক সম্পর্কে জানা হবে। অন্য ফেইসবুকি বন্ধুদেরও আপনি জানাতে পারলেন। এর মধ্যে অনেক ভিক্ষুক থাকবে আপনার ছবির কল্যাণে ও অন্যের সহযোগিতায় তার জীবনের পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
আমি একবার আমার একজন মুরুব্বীর কাছ থেকে শুনেছিলাম। আমাদের প্রায়শই চেষ্টা করা উচিত রোগীর সাথে কথা বলা। তখন নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হবে। এতে আমাদের অপরের প্রতি সহমর্মিতা বাড়বে। আমার মনে হয় তেমনি অর্থ বঞ্চিত ভিক্ষুকদের সাথে ক্রমাগত ছবি তুলতে থাকলে আমরা নিজেদের বঞ্চিত ও দুর্দশাগ্রস্ত ভাবব না। আমাদের মানবীয় অনেক উন্নতি হবে। আমাদের চাহিদা কমে আসবে। হায় হুতাশ কমে আসবে। জীবনকে অত খারাপ মনে হবে না। শুধু একটা কাজ হবে ভিক্ষুকের সাথে দাড়িয়ে সেলফি তোলা ও ভিক্ষুকদের বিবরণটা ফেইসবুকে তুলে ধরা।
আমার কাছে মনে হচ্ছে এভাবে আমরা ভিক্ষুকদের খোজ খবর নিতে থাকলে কয়েক বছর পর আর কোন ভিক্ষুক খুঁজে পাব না যার সাথে আমরা সেলফি তুলতে পারব। আমার এই প্রস্তাবটি অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে কিন্তু গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখুন। আইডিয়াটা কিন্তু অনেক বেশী শক্তিশালী। আধুনিক যুগে প্রচার, ছবি ও তথ্য অনেক বেশী শক্তিশালী। এটা মানুষের অনেক অনেক সমস্যা দুর করবে। অনেক মানুষকে সচেতন করবে। মানুষের মানুষিকতায় পরিবর্তন আসবে। কয়েকদিন আগে( জুলাই ২০১৭) আমেরিকায় বিল গেটস বলেছেন, মোবাইল ব্যাংকিং গরীবদের ক্ষমতায়ন করবে ও দরিদ্র দূরীকরণ করবে। ক্যাশলেছ সমাজ চালু করতে পারলে সমাজে সম্পদের সুষ্ঠু বিতরণ সম্ভব হবে। কারণ দরিদ্র মানে কারো অপরাধ নয়। সেই ব্যক্তি সম্পদের সুসম বণ্টন হতে বঞ্চিত একজন।
আমাদের এই দেশে গত দশ বছর অপেক্ষা এখন যাকাতের জন্য লোক পাওয়া অনেক বেশী কষ্টকর। কারণ যে কেউ যে কোন কাজ করলে ৪০০/৫০০ টাকা প্রতিদিন অর্জন করতে পারে। পড়াশোনায় অধ্যয়নরত যে কেউ অন্য বাচ্চাদের টিউশন করিয়ে পড়ার খরচ চালাতে পারে। তাই প্রকৃত যাকাত অর্জনকারী বের করাটা একটা কষ্টকর কাজ।
ফেইসবুকে সবাই মিলে ছবি ও বিবরণ পোস্ট করতে থাকলে ভণ্ড ও বাটপার ভিক্ষুকগুলির তথ্য উন্মোচিত হতে থাকবে। এক সময় লোকে জিঞ্জাসা করবে, তুই করিম ভিক্ষুক না? তুই তো ভণ্ড ভিক্ষুক। আর প্রকৃত ভিক্ষুকরা তখন সহজে প্রকৃত কৃপা পাবে। আশা করি ফেইসবুকে ভিক্ষুকের ডাটা বেইজ তৈরিতে অনেকেই আগ্রহী হবেন।

No comments:

Post a Comment