আমার দীর্ঘদিনের
অভ্যাস বিয়েতে নগদ টাকা/প্রাইজ বন্ড/ চেক দেয়া। এটার কারণ হল আমার অভিঞ্জতায়
দেখেছি মানুষ অনেক অপ্রয়োজনীয় গিফট প্রদান করে। পরিবারের মধ্যে হলে আমি সাধারণত কে
কি ধরনের গিফট দিবে ভাগ বাটোয়ারা করে দেই। কাছের মানুষ হলে আমার বাজেটটা বলি এবং
কি গিফট তার প্রয়োজন তা জেনে গিফট দেই। এটা আমার আচরণ। অনেকের ধারনা গিফট দিব আমার
পছন্দ অনুযায়ী। এতে গিফট গ্রহণকারীর মতামত নেয়াটা অস্বস্তিকর। আমি এই অস্বস্তির
কাজটি জানা শোনা মানুষের সাথে করে থাকি। আমি অনেক অনুষ্ঠানের সাক্ষী যেখানে লোকজন
গিফট মন:পুত হয়নি। আবার একই রকম একাধিক গিফটও হাজির হয়। অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পেতে
হয়। তখন অধিকাংশ অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যই আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবকে বিতরণ করতে হয়।
যা অত্যন্ত ঝামেলা যুক্ত কাজ।
বিয়ের বা
অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমার মত অনেকেই আছেন নগদ গিফট দেন।এটা একটা ভাল পদ্ধতি।
কিঞ্চিত ব্যয় সাপেক্ষ। আপনি বাজারে বিয়ে খাওয়া স্বর্ণের সুন্দর প্যাকেটে স্বর্ণের
প্লেটিং দেয়া আংটি দেখিয়ে কম দামে বিয়ে খেয়ে আসতে পারেন। এটা প্রতারণা ও দু:খজনক।
সবচেয়ে ভাল হয় কোন উপহার না দেয়ার ব্যবস্থা থাকা। এই দেয়ার ভয়ে নিকট আত্মীয়ের
বিয়েতে অনেকে কাজের বা অন্য কোন অজুহাত দেখিয়ে গ্যাপ মারে। তাই বিয়ে বা অনুষ্ঠানে
গিফটের প্রচলন না থাকলে সবচেয়ে ভাল। আর যদি দিতেই হয় নগদ টাকা দেয়া আরও ভাল।
আমার আশে পাশে
প্রতিবেশী বেশ কিছু ফল নিয়ে হাজির। কারণ জানা গেল প্রতিবেশীর বাবা অসুস্থ বেশ কিছু
দর্শনার্থী ফল নিয়ে এসেছে যা তারা রুগী সামলিয়ে ফলগুলো সামাল দিতে পারছে না। তাই
পুন:বণ্টন হচ্ছে। রুগী দেখার জন্য ফল নেয়া, খাবার নেয়া ও ফুল নেয়ার রেওয়াজটা বেশ ভাল। তবে খুব একটা বা
উপকারী নয়।
সেদিন ফেইসবুকে
চমৎকার একটি বিষয়
পড়ে আমার এই লেখাটির আইডিয়া আসল। একজন ফেইবুক ফ্রেন্ড লিখেছে। আমরা বিভিন্ন
অনুষ্ঠানে অনেকেই নগদ টাকা পয়সা গিফট দেই । অথচ আমরা কেউ রুগীকে নগদ টাকা দেই না।
অথচ মানুষের সবচেয়ে সংকটময় সময় হচ্ছে তার চিকিৎসা। আর বাংলাদেশের মত পুঁজিবাদী দেশে চিকিৎসা মানে বিশাল বাণিজ্য ও খরচের ব্যাপার। এখানে যে বিনে
পয়সার হাসপাতালে চিকিৎসা হয় তার মান
নিয়ে সাধারণ মানুষের মূলত কোন আস্তা নেই। তাই বেশীর ভাগ মানুষ একটি ভাল
ব্যবস্থাপনা পাওয়ার জন্য ক্লিনিকগুলোতে ভিড় জমায়। তার ফলে যা হয়, বিশাল বিশাল অর্থের শ্রাদ্ধ। অথচ টাকার ছাড়া উপায় নেই।
অন্যথায় চিকিৎসা বিহীন
মৃত্যুকে বরন করতে হবে। চিকিৎসা মানেই
সর্বস্বান্ত অবস্থা।
তাই রোগীর এই
শোচনীয় পরিস্থিতিতে আমরা আঙ্গুর, আপেল ও অন্যান্য ফল নিয়ে রোগীর রোগমুক্তির কামনায় ক্লিনিক ও
হাসপাতালে ভিড় জমায়। অথচ এই রূপ ফল হয়ত রোগীর কোন প্রয়োজনই নেই। যা প্রয়োজন, তা হল চিকিৎসার খরচ। এই সময়
আর্থিক সাহায্য অনেক অনেক বড় সাহায্য। এই সাহায্য যে করতে পারবে মূলত সেই প্রকৃত
শুভাকাঙ্ক্ষী। রোগীকে ফল দিয়ে দেখতে যাওয়ার রেওয়াজ আছে কিন্তু টাকা দিয়ে দেখতে
যাওয়ার রেওয়াজ নাই। এটা আমরা সচেতন মানুষরা চালু করতে পারি। একবার আমরা আমাদের
নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মাঝে চালু করলে আমি নিশ্চিত এই ধারাটা চালু
হবে। এই ধরনের কালচার চালু হলে অনেক অনেক নিন্ম আয়ের মানুষ নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও
বন্ধুবান্ধব দ্বারা অনেক বেশী উপকৃত হতে পারবে। তবে অনেক সময় অনেক আত্মীয় স্বজন
আর্থিক সাহায্য দিতে পারেন না। তারা বরং ফলফলারি না কিনে রোগীর এ্যাটেন্ডেন্টকে
রেস্ট ও রিফীড করার জন্য রিলিফ দিতে পারে। আবার কখনও কখনও রোগী বা এ্যাটেনডেন্টের
জন্য বিশেষ খাওয়া দাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তখন অনেক আত্মীয় স্বজন এগিয়ে আসে রান্না করা
খাবারের সাহায্য নিয়ে। তবে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয়তা না জেনে রুগীর জন্য খাবার সরবরাহ
অনুচিত। পরিশেষে আমরা সকলে রুগীর জন্য যা পারি তা দিয়েই আর্থিক সাহায্যের রীতি বা
কালচার চালু করতে পারি।এটা সকলের জন্য মঙ্গলকর হবে।
No comments:
Post a Comment